কী অদ্ভুত, কি রোমাঞ্চকর এক চরিত্র। কী সোনায় মোড়ানো একটা ক্যারিয়ার! রোদ, ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে তিনি গড়ে তুলেছেন। হয়ে উঠেছেন আর্জেন্টিনার ‘অ্যাঞ্জেল’।
কার্যত নামটা আর্জেন্টাইন উচ্চারণে যদিও আনহেল দি মারিয়া। তবে, এই উপমহাদেশের সমর্থকরা তাঁকে ‘অ্যাঞ্জেল’ নামে ডেকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যখন যে দলে খেলেছেন, যখন যে বড় মঞ্চ পেয়েছেন – দলের জন্য হয়ে উঠেছেন অ্যাঞ্জেল। সেই অ্যাঞ্জেল যিনি দলকে সেরা সাফল্য এনে দিতে কোনো কার্পণ্য রাখেন না।
রিয়াল মাদ্রিদের ‘লা ডেসিমা’ বিজয়ের নায়ক তিনি। ফাইনালে ছিলেন ম্যাচ সেরা। এর আগে এক দশক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেনি মাদ্রিদ। আবার, সেই ফাইনাল জিতেই আদরের মারিয়াকে তাঁরা বিক্রি করে দিয়েছে।
এই যেন মারিয়ার নিয়তি। তিনি প্রাপ্য সম্মানটা পান খুব সামান্যই। তিনি যেন ক্লাসের ওই সেকেন্ডের বয়টা যার নাম শ্রেণি শিক্ষকরা ভুলে যান প্রায়শই। আর যে ক্লাসে ফার্স্ট বয়ের নাম খোদ লিওনেল মেসি, সেখানে মারিয়ারা যতই ‘অ্যাঞ্জেল’ হন – তাঁদের মনে না রাখাটা খুব অন্যায় নয়।
তবে, আর্জেন্টিনাকেও হাত ভরে দিয়েছেন মারিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনার যে ফুটবল সাফল্য – তাতে বড় অবদান মারিয়ার। গুরুত্বপূর্ণ সব বড় ম্যাচে জরুরী সময় গোল করেছেন তিনি।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ইনজুরির জন্য মাঠে নামতে পারেননি মারিয়া। জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্ন পুড়ে মেসিদের। এর পর থেকে যত ফাইনাল খেলেছেন, সবগুলোতেই গোল করেছেন মারিয়া। ২০২১-এর কোপা, ২০২২-এর ফিনালসিমা কিংবা বিশ্বকাপ শিরোপার সেই পরম আরাধ্য গোল – সবই আছে মারিয়ার অর্জনের তালিকায়।
চাইলে সৌদি প্রো লিগে বা আমেরিকা গিয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ কামাতে পারতেন। করেননি। তিনি বেছে নিয়েছেন বেনফিকাকে। বলে দিয়েছেন, আর একটা মৌসুমই খেলবেন পেশাদার লিগে। এর আগে জাতীয় দলকেও বিদায় বলে দিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা হাতে নিয়ে।
কিন্তু, তারপরও তাঁর কোনো ‘হাইপ’ নেই। তাঁকে নিয়ে কেউ লিখে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ করে না। তিনি আক্ষরিক অর্থেই আড়ালে থাকা এক আর্জেন্টাইন যোদ্ধা। পেশাদার জীবনের পুরোটা সময়ের মত শেষ বেলাতে এসেও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই যাচ্ছেন। বিদায় নিচ্ছেন বীরের মত।
আজও তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো টু শব্দটা নেই। তাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। মারিয়ার বিদায়ের নিয়তিটাই তো এমন ছিল!