বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনে বইছে সুবাতাস। ঐতিহাসিক সিরিজ জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে। চারিদিকে যখন নব বসন্তের হিমেল হাওয়া বইছে, ঠিক তখন নতুন এক বিতর্কের উৎপত্তি ঘটে। বাংলাদেশ ক্রিকেট অপারেশন্স ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফিস তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও আপলোড করেন। সেই ভিডিও মূলত নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আর জাগিয়েছে প্রশ্ন।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জার্সি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। তারা দুইজনই টি-টোয়েন্ট ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। মূলত বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পুরো দেশকে একত্র করতেই সেই ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল। সকল দ্বিধা ভুলে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করে যাওয়ার বার্তা ছিল ভিডিওটিতে।
সেই বিশ্বকাপের আগে সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। বিভক্তি ছড়িয়েছিল গোটা দেশে। তাছাড়া তামিমকে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরানোর দাবি জানানো হয়েছিল। পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিরিজ হারের পর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপর মহলের নির্দেশে ভিডিও তখন আর পাবলিশ করা হয়নি। অথচ ভিডিওটি তখন পাবলিশ হলে বরং পরিস্থিতি বদলে যেতে পারত।
যেকোন মহল থেকেই হোক ভিডিওটি বাতিল হয়েছে। এতদিন পরে এসে সেই ভিডিও প্রোজেক্টকে পুঁজি করে আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা আদতে কতটুকু যুক্তিসংগত? যদিও শাহরিয়ার নাফিস ছিলেন সেই প্রোজেক্টের তদারকির দায়িত্বে। দুর্দান্ত ধারণার একটা ভিডিও পাবলিশ করতে না পারার আক্ষেপ তার মধ্যে কাজ করেছে। এই অপারগতা প্রমাণ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অনেকাংশেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ভয় পায়।
সেখানে হাওয়া কোনদিকে বইছে, তার উপর নির্ভর করে ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত। একটা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত কেনই বা জনগণের মতামত নির্ভর হতে হবে? এই বিষয়ে সদুত্তর কখনোই বিসিবির নানা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে সমালোচনার ভয়ে বিসিবি উক্ত ভিডিও আপলোড না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাছাড়া বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপের জার্সি নিয়েও নানামুখী সমালোচনা হয় প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই। সে সমালোচনাও এড়িয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দলের অভ্যন্তরীণ নানা সিদ্ধান্ত বদলানোর উদাহরণও সৃষ্টি করেছে বিসিবি। দলের কোচিং প্যানেল হোক কিংবা খেলোয়াড় বাছাই-ছাটাই সবক্ষেত্রেই বিসিবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহমান হাওয়াতে গা ভাসিয়েছে। আবার তারাই সমালোচনা ঠেকাতে একটা ভিডিও প্রজেক্ট স্থগিত করে দেয়।
এই যে দ্বিচারিতা, এই দ্বিচারিতার কারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেট কোন কোন ক্ষেত্রে থমকে যায়, পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া কখনোই কাম্য নয়। বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সমালোচনা হবে, আবার প্রশংসাও হবে। তবে সে সবের জন্য কোন কিছু আটকে রাখা সমাধান হতে পারে না। কিন্তু বিসিবি সাংগঠনিকভাবে সমালোচনা প্রচণ্ড ভয় পায় বলেই ধারণা। আর তাইতো দ্বিধাগ্রস্ত বিসিবির অধিকাংশ সিদ্ধান্তই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ব্যাকফায়ার করে।