সেবার ছিলেন, এবার নেই!

২০২১ সালে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় হলো এই বছর অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। মোটামুটি সবদেশ এই বছরের অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। এই বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসর বসেছিলো ২০১৬ সালে ভারতে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বসার কথা ছিলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই আসর আর বসে নাই। তাই এই বিশ্বকাপ নিয়ে বেশ জোরে সোরে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সব দেশ।

২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত খেলেছিলো সেমিফাইনালে। সেবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো ভারত। সেই দলের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেটার খেলবেন না বেশ সেটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

এর মধ্যে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন অনেককেই দেখা যাবে না এবারের আসরে। এদের কয়েকজন থাকবেন না টিম কম্বিনেশনের কারণে। কয়েকজন তো অবসরই নিয়ে ফেলেছেন।

  • রবিচন্দন অশ্বিন

রবিচন্দন অশ্বিন এ মুহুর্তে টেস্ট সংস্করণে ভারতের অন্যতম সেরা বোলার। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর জন্য টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার পরিবর্তে দলে এসেছে ওয়াশিংটন সুন্দর।

এছাড়াও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অশ্বিনের অবস্থান পূরনের জন্য দলে আসতে পারেন লেগ স্পিনার যুগভেন্দ্র চাহাল এবং কুলদ্বীপ যাদব। তাঁরা সীমতি ওভারের ক্রিকেটে বেশ দূর্দান্ত বোলিং করছেন। এর ফলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর ফিরে আসাটা বেশ কষ্টকর হবে। এছাড়াও ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন অশ্বিন।

সাম্প্রতিক সময়ে অশ্বিনকে নিয়ে দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির মন্তব্যের কারণে বলা যেতে পারে তিনি হয়তো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আর নাও ফিরতে পারেন অশ্বিন।

  • অজিঙ্কা রাহানে

অশ্বিনের মত ভারতের টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ অজিঙ্কা রাহানে। তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৮ সালে। তাঁর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা বেশ কষ্টকর আছে। কারণ তাঁর স্থানে লড়াই করছেন দুই ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগারওয়াল। লোকেশ রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগারওয়ালের দূর্দান্ত পারফর্মেন্স রাহানেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক রাহানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেই ম্যাচে ৩৫ বলে করেছিলেন ৪০ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৩ এর কাছাকাছি।

তাঁকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলে ফিরতে হলে দূর্দান্ত পারফর্ম করতে হবে। সাথে নিজের স্ট্রাইক রেট এবং বড় শট খেলার সাহস বাড়াতে হবে। না হলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলে দেখা যাবে না অজিঙ্কা রাহানে কে।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি

মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর আর কখনোই জাতীয় দলে সুযোগ পাননি তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপে শিরোপা জেতার লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিলো ভারত। কিন্তু সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় ভারত। সেই ম্যাচ হারার জন্য অনেকেই দায়ী করেন ধোনির ধীর গতির ব্যাটিং। অনেকেই ধরে নেন বয়সের জন্য ধোনি সেই আগের মত খেলতে পারেন না।

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন ধোনি। যদিও, এখন অবধি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

  • যুবরাজ সিং

ভারতের সাম্প্রতিক সময়ে জেতা দুই বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক যুবরাজ সিং। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যুবরাজ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যুবরাজের মত কার্যকর ক্রিকেটার এখনো ভারতীয় জাতীয় দলে আসেনি।

তিনি বেশ কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সবধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় জানান তিনি।

  • আশিষ নেহরা

আশিষ নেহরা ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড একজন ক্রিকেটার। তিনি কখনো তাঁর নিজের পারফর্মের সঠিক মূল্যায়ন পাননি।

আশিষ নেহরা ঠিকমত জাতীয় দলে খেলতে পারেননি। সমস্যা ছিলো ইনজুরি। তিনি ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন ইনজুরিজনিত সমস্যার কারণে।

২০১৬ সালে ৪১ বছর বয়সে টি-টোয়েন্টি দলে নিজের অবস্থান করে নেন তিনি। দুর্দান্ত পারফর্মের বলেই সুযোগ পান জাতীয় দলে। ২০১৭ সালে ক্রিকেট বিদায় জানান আশিষ নেহরা। তিনি বর্তমানে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন।

  • সুরেশ রায়না 

২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেন। তবে, ২০২০ সালেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১৬০০’র ওপর রান করেছেন তিনি পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরির সৌজন্যে।

  • হরভজন সিং

না, অবসরের ঘোষণা তিনি এখনো দেননি। তবে, খুব শিঘ্রই ঘোষণা আসবে হয়তো। তিনিও সুরেশ রায়নার মতই ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। খেলেছেন দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অফস্পিনার অবশ্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। ২৮ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন মাত্র ২৫ টি উইকেট।

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link