একটি জয়ের প্রয়োজন ছিল অনেক। গতি, সুইং, বাউন্স এবং শর্ট বলের তোপ ছিল প্রচুর। স্কিলের পরীক্ষার সাথে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল। কিন্তু দুর্দান্ত ব্যাটিং স্কিল ও সাহসিকতায় জবাব দিতে না পেরে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ট্রেন্ট বোল্টের জোড়া আঘাতে শুরু হয়েছিলো; কিউই এই পেসারের জোড়া আঘাতেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। মাঝে জেমি নিশাম এবং ম্যাট হেনরির সাথে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছেন মিচেল স্যান্টনারও। কিউই বোলারদের বোলিং তোপে প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ১৩২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ।
১৩২ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো শুরু করেন দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৩৩ বলে ৫৪ রান তুলে ফেলেন দুজন। ১৯ বলে ৩৮ রান করে তাসকিন আহমেদের বলে গাপটিল উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিলে ভাঙ্গে এই জুটি। গাপটিল ফিরে গেলে অভিষিক্ত ডিভন কনওয়েকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৫ রান যোগ করেন নিকোলস।
আস্থার সাথে ব্যাট করতে থাকা কনওয়ে হাসান মাহমুদের প্রথম শিকার হয়ে ২৭ রান করে ফিরে গেলেও উইল ইয়ংকে সাথে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন হেনরি নিকোলস। নিকোলস ৪৯ ও উইল ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের গতি, সুইং এবং বাউন্সে শুরু থেকেই চাপে পড়ে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এই পেসারের তান্ডব প্রথম চার ওভার কোন ভাবে সামাল দিলেও পঞ্চম ওভার আর সামলাতে পারেননি তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে ১৩ রান করা তামিমকে ফেরানোর পর একই ওভারের চতুর্থ বলে রানের খাতা খোলার আগেই সৌম্য সরকারকে ফিরিয়ে দেন বোল্ট।
আগের বার নিউজিল্যান্ড সফরে ৩ ওয়ানডে মিলিয়ে ৩ রান করা লিটন দাস এবার ৩ রানে জীবন পেয়ে একটু লড়াই করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। উইকেটে থিতু হয়েও জিমি নিশামের শর্ট অব লেংথ বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে লিটন ফিরে যান ৩৬ বলে ১৯ রান করে।
লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসা মুশফিকুর রহিমকে শুরু থেকেই শর্ট বল করে চাপে রাখে কিউই বোলাররা। এরপরেও ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে ৪৯ বলে ২৩ রান করার পর নিশামের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্কয়ার কাট করতে গিয়ে গাপটিলের হাত ক্যাচ দেন মুশফিক। ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আরো বিপদে পড়ে মোহাম্মদ মিঠুন দূর্ভাগ্যজনক ভাবে রান আউট হয়ে গেলে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সোজা খেলা শট বোলারের আঙ্গুল ছুঁয়ে স্টাম্পে আঘাত হানলে ২৭ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন। মিঠুনের বিদায়ের পরই স্যান্টনারের প্রথম শিকার হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ(১) আউট হয়ে গেলে ৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
এরপর আরেক অভিষিক্ত মেহেদী হাসান ছয় মেরে দারুণ সাহসিকতায় ইনিংস শুরু করলেও স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে তাকে ফিরতে হয় ১৪ বলে ১০ রান করে। অপরপ্রান্তে একাই লড়াই করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ম্যাট হেনরি ফিরিয়ে দিলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব প্রতিরোধ। রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ বলে ২৭ রান।
এরপর শেষ দুই ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদ(১০) ও হাসান মাসুদকে(১) একই ওভারে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। কিউই কন্ডিশনে সফল হতে নতুন বল ভালো ভাবে সামলাতে হবে জানলেও প্রথম ওয়ানডেতে সেটি করতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩১ রানে।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৮.৫ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া জেমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার ২ টি করে এবং ম্যাট হেনরি ১ টি উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৩১/১০ (ওভার:৪১.৫; তামিম- ১৩, লিটন- ১৯, সৌম্য- ০, মুশফিক- ২৩, মিঠুন- ৯, মাহমুদউল্লাহ- ২৭, মিরাজ- ১, মেহেদী- ১৪, তাসকিন- ১০, হাসান- ১, মুস্তাফিজ- ১*) (বোল্ট- ৮.৫-০-৭-৪, নিশাম- ৮–২৭-২, স্যান্টনার- ৮-০-২৩-২, হেনরি- ৯-১-২৬-১)
নিউজিল্যান্ড: ১৩২/২ (ওভার:২১.২; গাপটিল- ৩৮, নিকোলস- ৪৯* কনওয়ে- ২৭, উইল- ১১*) (তাসকিন- ৪-০-২৩-১, হাসান- ৪.২-০-৪৯-১)
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।