১২১ বছর আগের কথা। ১৯০০ সালে অলেম্পিকে ছিলো ক্রিকেট।
এরপর লম্বা সময় ধরেই অলিম্পিক গেমসে আর ক্রিকেট দেখা যায়নি। তবে বরাবরই ক্রিকেটের প্রসারের স্বার্থে অলিম্পিকে ক্রিকেট যুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা চলছিলো। সবকিছু ছাপিয়ে সম্ভাব্য আগামি ২০২৮ সালে অলিম্পিকে আবারো যুক্ত হতে পারে ক্রিকেট। এ ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এছাড়া ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
অলিম্পিকে ক্রিকেটের সংযোজনের বড় বাঁধা ছিলো বিসিসিআই। আইসিসি সেই জগমোহন ডালমিয়ার আমল থেকেই অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের আপত্তিতে সেটা কখনো বাস্তব হয়নি। ভারতীয় বোর্ড মনে করতো যে, অলিম্পিক ইভেন্ট হলে তাদের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
ভারতে সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে অসীম স্বাধীনতা ভোগ করে। যদিও গত কয়েক বছরে সে দেশের হাই কোর্ডের হস্তক্ষেপে কিছু নিয়ন্ত্রন এসেছে বোর্ডে। কিন্তু তারা মনে করে যে, অলিম্পিকে অংশ নিলে বোর্ডের একটা দায়বদ্ধতা তৈরী হবে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রতি। এর ফলে সবসময় তারা অলিম্পিকের বিরোধিতা করে এসেছে। অবশেষে সৌরভ গাঙ্গুলির বোর্ড এ ব্যাপারে ইতিবাচক হয়েছে।
আবার আইসিসির জন্য ক্রিকেটের বিশ্বায়সের স্বার্থে অলিম্পিকের অংশ হওয়াটা জরুরী। এখনও ক্রিকেট ইউরোপ, আমেরিকা ও চীনের বাজার ধরতে পারেনি। এর পেছনে একটা বড় কারণ, এসব অংশে রাষ্ট্রগুলোর এই খেলাটি নিয়ে কোনো আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতা নেই। কিন্তু এটা অলিম্পিক ইভেন্ট হলে একটা পদকের জন্য আগ্রহ তৈরী হওয়ার কথা অনেক দেশেরই। তাই আইসিসি চায় ক্রিকেট অলিম্পিকে যুক্ত হোক।
২০২৮ সালে লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসে ক্রিকেট আয়োজনের কথা ভাবছে আইসিসি। তবে সেটা সম্ভব না হলে ২০৩২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিতব্য অলেম্পিকে আয়োজন করা হবে ক্রিকেট। তবে কোন ফরম্যাটে ক্রিকেট ইভেন্ট আয়োজন হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলেও জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে টি-টেন ফরম্যাটে অলিম্পিকে ক্রিকেট আয়োজনের। এ ব্যাপারেও আইসিসি ও বিসিসিআই এর ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
গত ১৬ এপ্রিল (শুক্রবার) অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সভায় বিসিসিআই সিদ্ধান্ত নেয় যে অলিম্পিকে ভারতীয় দল পাঠানোর। এছাড়া আসন্ন ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসে মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য দল পাঠানোর কথাও বলে বিসিসিআই। বিসিসিআইয়ের এমন সিদ্ধান্তে এ ব্যাপারে আরো জোর দিয়েছে আইসিসি।
মূলত টি-টেনে একটি ম্যাচ খেলতে ৯০ মিনিটের মতো সময় লাগে সেই সাথে ৮-১০ দিনের মধ্যে টুর্নামেন্ট শেষ করা যায়। সময় কম লাগে বিধায় টি-টেন ফরম্যাট টাই আপাতত চিন্তা করছে আইসিসি। অপরদিকে, ইংলিশ ক্রিকেট থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ১০০ বলের ক্রিকেট বা ‘দ্যা হান্ড্রেড’ ইভেন্টি অলিম্পিকে ক্রিকেটে আয়োজন করা। আসন্ন এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইসিবির অধীনে দ্যা হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট শুরুর কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আইসিসির ভাবনায় শুধু মাত্র টি-টেন ফরম্যাট টাই রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ ১৯০০ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত একমাত্র ম্যাচে ফ্রান্সকে ১৫৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে স্বর্ণ জেতে গ্রেট ব্রিটেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৮ সালেই আবারো অলিম্পিকে দেখা যাবে ক্রিকেট। গেলো বছর ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান অলিম্পিকে টি-টেন ফরম্যাটে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন, সেই সাথে ক্রিস গেইলও বলেছিলেন অলিম্পিকে টি-টেন অন্তর্ভুক্ত করার কথা। আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের আগ্রহের পর সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ও জানিয়েছেন অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরকার।