আপন ঢঙে, নিজস্ব রঙে ঋষাভের প্রত্যাবর্তন

পান্ত যতক্ষণ বাইশ গজে আছেন, ততক্ষণ পান্ত কি চাচ্ছেন সেটাই মুখ্য, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। 

৬৩৭ দিন পর আবারও সাদা পোশাকে ফিরেছেন ঋষাভ পান্ত। ভয়াবহ দুর্ঘটনার আগে নিজেকে যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই যেন আবার শুরু করলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পান্তের শেষ প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। এবার যখন দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ফিরলেন তিনি, তখনও তার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।

গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রায় বিপর্যস্ত পান্ত, চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসটি রাঙিয়েছেন নিজস্ব ঢঙে, ব্যক্তিগত রঙে। সচারচর আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক ঋষাভের দেখা মেলে। ক্রিকেটটা ঠিক কোন বলে খেলা হচ্ছে, সে বিষয়টা মুখ্য নয়। কন্ডিশন কতটা বৈরি, সেটা বিবেচনার বিষয় নয়। পান্ত যতক্ষণ বাইশ গজে আছেন, ততক্ষণ পান্ত কি চাচ্ছেন সেটাই মুখ্য, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।

নিজের ব্যক্তিগত ইনিংসকে একেবারে নিজের মত করেই সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে জানেন ঋষাভ। তাতে করে অবশ্য ভারত দলই হয় সবচেয়ে বেশি উপকৃত। ভয়ডরহীন এক আনঅর্থোডক্স এই ব্যাটার বাংলাদেশকে যেন হতাশার নোনাজলে ডুবিয়ে মারল। শেষ যখন দেখা হয়েছিল, তখন প্রায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন। মিরপুর টেস্টে ৯৩ রানে থেমেছিলেন পান্ত।

কিন্তু চেন্নাই টেস্ট ছিল তার প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। বয়সটা খুব বেশি হয়নি। এখনও ক্রিকেটের প্রতিটি ফরম্যাটের জন্যই তিনি ফিট। তার সক্ষমতা নিয়ে কোন সংশয় কখনোই ছিল না। কিন্তু গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিল পান্ত। এরপর তিনি আবার ক্রিকেট ময়দানে ফিরবেন কি-না তা নিয়ে ছিল সংশয়।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে ঋষাভ জানিয়ে দিলেন, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’। বাংলাদেশের বোলারদের ক্লান্ত বদনের উপর চাবুকের আঘাত হয়ে নেমে এল ঋষাভের ব্যাট। উইকেটের চারিদিকে শট চালিয়ে তিনি তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি***।

তিনি যেন জানিয়ে রাখলেন, ‘আমি ফুরিয়ে যাইনি’। গ্রীক পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতই তিনি ঐ ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠেছেন নব উদ্দ্যম সাথে নিয়ে। বদলায়নি কিছুই। তার আগ্রাসনে ভাটা পড়েনি এক চিমটিও। তিনি স্বরূপের সেই পান্ত হয়েই বনেদী ফরম্যাটে পা রেখেছেন। দ্বিতীয় জীবন তিনি চেন্নাই টেস্টে পেয়েছেন।

জীবন নামক যাত্রায় তিনি পেয়েছেন দ্বিতীয় সুযোগ। কোনভাবেই আর হেলাফেলা করতে যেন তিনি চান না। ক্রিকেট নামক নীলাম্বরের মাঝে নিজের উজ্জ্বল এক অস্তিত্ব রেখে যেতে চান। অদম্য মানসিকতার ঋষাভ নিশ্চয়ই একদিন ছুঁয়ে ফেলবেন সকল সাফল্য। হার না মানা মানসিকতার মানুষেরা মৃত্যুকেও যে হার মানায় কখনও কখনও।

Share via
Copy link