সেই ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মসের কথা। মাত্র কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ‘কুখ্যাত’ টেস্ট সিরিজ। কুখ্যাত এই জন্য যে সে টেস্টে আম্পায়ারিং ছিল সন্দেহজনক। সাথে ছিল খেলোয়াড় নিষিদ্ধ হওয়ার মত ঘটনা। তবে দু’দলের লড়াইটা ছিল সেয়ানে সেয়ানে। শেষে যদিও অজিরাই শেষ হাসি হাসে। এই ইতিহাস মাথায় নিয়ে ২০০৮ সালেই অজিদের এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কমনওয়েলথ ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে নামে ভারত। তবে সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল এক ক্ষিপ্র ক্ষুদার্থ ব্রেট লি।
ভারত যেন কিছুটা মুখিয়েই ছিল সিরিজটিতে জেতার জন্য। বিশেষত অজিদের পরাজয়ের স্বাদ চেনাতে। আত্মবিশ্বাসও ছিল তুঙ্গে। ২০০৭ এর টি-২০ চ্যাম্পিয়ন বলে কথা। অন্যদিকে, জয়ের মানসিকতায় টইটম্বুর অজি শিবির। তারাও যে বিশ্ব ওডিয়াই চ্যাম্পিয়ন। ক্রিকেট বিশ্বও অপেক্ষায়েই ছিল এই দুই মহারথীর লড়াই দেখবে বলে।
টসে জিতে অজিদের বিরুদ্ধে ব্যাটে নামে ভারত। তাদের ব্যাটিং লাইন আপও ছিল তারকায় পরিপূর্ণ। শুরুতেই শচীন টেন্ডুলকার আর বীরেন্দ্র শেবাগ। তাদের পাশাপাশি ছিলেন ভারতের বর্তমান ও সাবেক প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও গৌতম গম্ভীর। আর ছিলেন সদ্য ২০০৭ সালে অভিষেক হওয়া উদীয়মান তারকা রোহিত শর্মা। অন্যদিকে, অজি একাদশে ছিলেন ব্রেট লি, মিশেল জনসন, নাথান ব্রাকেনের মত বিধ্বংসী সব গতি দানব।
এমনই এক তারকা ঠাসা খেলায় শুরুতেই দুই ওপেনার হারায় ভারত। এর কারিগর ছিলেন ব্রাকেন এবং ব্রেট লি। শচীন কে হিট উইকেটে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে লি তু্রন্ত প্রভাব ফেলে ভারতীয় সাজঘরে। এরপরে তরুন রোহিত-গম্ভিরের কাঁধে ভর করে ৯২ এ পৌঁছে ভারত। গম্ভিরের উইকেটে তাঁর সমাপ্তি ঘটে। ক্রিজে আসেন মনোজ তিওয়ারি। অজি মাটিতে সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ওডিআই।
হয়তো টেরও পাননি কি দু:স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাবেন তিনি। গম্ভীরের পর বেশি সময় নেননি রোহিতও। লড়াকু ইনিংস শেষে লি-এর বদৌলতে সাজঘরে ফেরেন তিনিও। ব্যাট করতে নামেন উইকেট রক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অন্যদিকে, স্কোর যখন ৯২ এ ৩ মনোজ তখন প্রথম লি-এর সম্মুখিন হন।
লি প্রথমেই ছোড়েন শর্ট বল। গতি ছিল ঘন্টায় ১৪৫ কিলোমিটার। পরের বলও একই লেন্থে করেন তিনি। এবারও গতি ঘন্টায় ১৪৪ কিলোমিটার। তবে এইবার তিওয়ারি সুবিধা করতে পারেননি। ধারাভাষ্যকর বলেই ফেললেন যে তিনি বলটি বুঝেই উঠতে পারেননি। আরও উল্লেখ করেন যে, শরীর থেকে কয়েক মাইল দূরের বল তাও মাথা ফিরিয়ে নিলেন।
যেন বলের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পরের বল যেন আরও ভয়াবহ। তবে এবার তৃতীয় বলটি তিনি ঠেকাতে সক্ষম হন। বলে রাখা ভাল সে বলটি তার দিকে এসেছিল ঘন্টায় ১৪৯.২ কিলোমিটার বেগে। চার নম্বর বল আবারও শর্ট করেন লি। ঝুঁকে পড়েন মনোজ। পরের বলটি আসে ঘন্টায় ১৪৫ কিলোমিটারে। তবে পয়েন্টের দিকে ক্লার্কের হাতে ঠেলে দিয়ে সে বল থেকে তিনি তাঁর প্রথম রান তুলে নেন।
ধোনি ব্যাট হাতে নামার পর আরও এক ব্রেট লি ঝড় দেখেন মনোজ। তবে এবার আর সামলে উঠতে পারেননি। ঝুঁকে পড়ে আরও এক বাউন্সার খেলেন তিনি। পরের বলে আর শেষ রক্ষা হলো না। পরের বলেই ইয়র্কার ছোড়ে লি। পা নাড়ানোর সময় ও পাননি মনোজ। ১৬ বলে ২ রানের ইনিংস সেখানেই সাঙ্গ হয় তাঁর।
লি ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাধ সাধলো এবার বৃষ্টি। ৯ ওভারে ৫-২৭ ফিগার থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টির সুবাদেই সেবারকার মতো বেঁচে ফেরে ভারত। নইলে নির্ঘাত বছরের অন্যতম ঝড়ো স্পেলের ইতিহাস গড়তেন ব্রেট লি।