বিতর্কের অবিসংবাদিত সম্রাটও তিনি

ক্রিকেটার সাকিব আর ব্যক্তি সাকিবের ফারাকটা ছিল সব সময়ই। যতটা গৌরব তিনি লাল সবুজের জার্সি গায়ে বয়ে এনেছেন, তার সমস্তটুকুই তিনি ধুলোয় মিশিয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনে।

রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। এখানে রোমকে ঢাকা ও নিরোকে সাকিব ভেবে নিয়েছে এই বাংলার মানুষ। আগস্টে হয়ে গেছে এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লব। দেশের মানুষের রক্ত ঝড়েছে কুচকুচে পিচঢালা রাস্তায়। সাকিব তখন ছিলেন ভীষণ নির্লিপ্ত। অবসরে পরিবার নিয়ে হাস্যজ্জ্বল ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সে থেকেই সকলে ফুঁসে উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

ক্রিকেটার সাকিব আর ব্যক্তি সাকিবের ফারাকটা ছিল সব সময়ই। যতটা গৌরব তিনি লাল সবুজের জার্সি গায়ে বয়ে এনেছেন, তার সমস্তটুকুই তিনি ধুলোয় মিশিয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনে। বিতর্কিত সব ঘটনার সাথে সাকিবের নামটি লেপ্টে থেকেছে প্রতিটা মুহূর্তে।

জুয়াড়ির প্রস্তাব না জানানোর পর শাস্তি পেলেন সাকিব। এরপরই যেন বদলে গেছে সমস্ত হিসেব-নিকেশ। সাকিব তখন থেকেই আর ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেননি। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ছুটে বেড়িয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যের দিকে। সফলতা স্রেফ ক্রিকেটেই মিলেছে তার।

ব্যবসা করতে চেয়েছেন। সেখানে খুব একটা ফলাফল তার হাতে ধরা দেয়নি। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ই-কমার্স কোথাও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। বরং উলটো তার বিরুদ্ধে উঠেছে নানা রকম অভিযোগ। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিপুল অংকের অর্থ জরিমানাও দিতে হয়েছে সাকিবের প্রতিষ্ঠানকে।

সাকিবের বিতর্কের সামনে এসব নস্যি। কি করেননি জীবনে? বাজে অঙ্গভঙ্গি থেকে শুরু করে সমর্থকদের সাথে বাজে আচরণ। তবুও পারফরমেন্সের জোরে সাকিবের দিকে আঙুল তুলতেও মানুষকে ভাবতে হয়েছে দু’বার। যদিও সাকিব সম্ভবত কখনোই দ্বিতীয় দফা ভাবেননি। যখন যা মনে হয়েছে করেছেন। বিজ্ঞাপনে তাইতো হর- হামেশাই নজরে এসেছেন তিনি।

কত বিচিত্র সব বিজ্ঞাপন! একটা পর্যায়ে তো বেটিং সাইটের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান থেকে খোদ বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপনের মুখও হয়েছিলেন তিনি। সেসব নিয়ে বিতর্ক হয়েছে দেশজুড়ে। তবুও ভাবলেশহীন ছিলেন সাকিব। তার মনোযোগ তখন ছিল নিত্যনতুন শো-রুম উদ্বোধনে। তাতে করে শো-রুম আল হাসান তকমা জুটলেও তিনি নিজের জায়গায় ছিলেন অনড়।

অদ্ভুত এক মানসিকতার মানুষ তিনি। ঝড়ের মাঝেও আরাম কেদারায় বসে কফিতে চুমুক দেওয়ার ক্ষমতাও নিশ্চয়ই রয়েছে তার। বিতর্কিত এই জীবনের শেষ পেরেক ছিল সম্ভবত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তাতে করেও সাকিব চরিত্রটার গুরুত্ব হ্রাস পায় একটি মহলে। তবুও স্রেফ পারফরমেন্স তাকে টিকিয়ে রেখেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের রঙমঞ্চে।

কিন্তু ‘কারমা’ পিছু ছাড়েনি। যে জোরে সাকিব পেয়েছিলেন যা খুশি তা করার অদৃশ্য লাইসেন্স, সেটাই যেন নিন্দার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে। চোখের একটা সমস্যা দু’টো বিশ্বকাপে সাকিবকে রেখেছিল ছায়া করে। এরপর আর কোন কিছুই ঠিক মত হয়নি। ব্যাটের রান ছিল হ্যালির ধূমকেতু। বল হাতে নির্জীব ৭০০ এর বেশি উইকেটের মালিক।

অগত্যা বিতর্ক মাথায় নিয়েই টি-টোয়েন্টির সমাপ্তি রেখা টেনে কলম তুলেছেন। সেই কলম টেস্টের ইতি লেখার কাজ প্রায় সেরে ফেলেছে। রইলো বাকি ওয়ানডে, সে গল্পের শেষটাও লেখা হয়ে যাবে আজ নয়ত কাল।

Share via
Copy link