শর্ট অব গুড লেন্থের কোমড় উচ্চতার বল। এমন বলে বহুবার ছক্কা হাঁকিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এবার আর হল না সেই দৃষ্টিনন্দন পুল শটের পুনরাবৃত্তি। শেষবেলায় রঙহীন এক প্রস্থান ঘটল তার। নিরবে-নিভৃতে ১৭ বছর ধরে জ্বলা প্রদীপের জ্বালানি যে ফুরিয়ে গেল।
আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানো ম্যাচ শতক হাঁকিয়েছিলেন রিয়াদ। মাথা উঁচু করে সগৌরবে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। তুলে রেখেছিলেন সফেদ জার্সিখানা। তেমনই হয়ত প্রত্যাশা ছিল তার। রঙিন পোশাকে ক্ষুদ্রতম সংস্করণে ধুন্ধুমার ব্যাটিং উপহার দেবেন নিজের শেষ ইনিংসে।
পারলেন না রিয়াদ। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হৃদয়টা যেন হয়ে উঠেছিল পিরামিডের মত ভারী। মিশরের মধ্যখানে কতশত রহস্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেসব পিরামিড। দীর্ঘ ১৭ বছরের যাত্রায় মাহমুদউল্লাহর হৃদয় জুড়েও রয়েছে অজস্র রহস্য, স্মৃতি আর অব্যক্ত বেদনা। সেসব নিয়েই তিনি বাড়ি ফিরছেন।
তারুণ্যের জয়গানে মুখর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, তাকে আর দেখা যাবে না। চুলগুলো যেদিন সাদা হতে শুরু করেছিল, সেদিন থেকেই তাকে ধীরে ধীরে বিদায়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল প্রকৃতি। কিন্তু অদৃশ্য এক শক্তির জোরে তিনি খেলা চালিয়ে গেছেন। সে শক্তিকে মনোবল বলে। সেই মনোবলও ফুরিয়ে গেছে।
তাইতো জমকালো রোশনাই ছেড়ে নিজেকে আবডালে নিয়ে গেলেন। আরাম কেদারায় বসে হয়ত আরও বিভৎস সব দৃশ্যের সাক্ষী হতে হবে তাকে। যেমনটা তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাকে হতে হয়েছে। ভারতের একচ্ছত্র তাণ্ডবের নিচে পিষ্ঠ হয়েছে বাংলাদেশ। অভাগা রিয়াদ কিছুই করতে পারেননি দলের জন্যে।
বিপদের মুখে বহুবার দলকে বাঁচানোর অভিজ্ঞতার রয়েছে রিয়াদের। কিন্তু যে দল উটপাখির মত মাথা গুজে দেয় মাটিতে, সে দলকে টেনে তোলা যে বড় দায়। রিয়াদের ক্লান্ত বদন তাকে আর সহয়তা করল না। ৯ বলে ৮ রানের বিলো এভারেজ একটা ইনিংসে পরিসমাপ্তি ঘটল মাহমুদউল্লাহর।
এর আগে অবশ্য ঝড়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একটি উইকেটের দেখাও পেয়েছেন তিনি। ৭৫ রান করা সুরিয়াকুমার যাদবকে থামিয়েছিলেন তিনি। নতুবা রানের পাহাড় আসমান ছুঁয়ে ফেলত। শেষবেলায় বিষাদের ধূসরতায় ছেয়ে ছিল রিয়াদের মুখশ্রী। বাংলাদেশ তাকে একফালি হাসি উপহার দিতে যারপরনাই ব্যর্থ।