নয় নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে রিশাদ হোসেনকে দলে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল। যদিও, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটে রিশাদের অপেক্ষার প্রহর ছিল বিরাট লম্বা। দেশীয় খেলোয়াড়দের তিন নম্বর সেটের, পঞ্চম রাউন্ডে তিনি দল পেয়েছেন।
অথচ এই একই খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে সরাসরি দলভুক্ত হয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। হোবার্ট হারিকেন্স তাকে দলে নিয়েছেন ড্রাফটের বাইরে থেকে। ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টের মধ্যে অন্যতম বিগ ব্যাশ। সেখানে যথাযথ প্রাধান্য রিশাদ পান কিন্তু স্বদেশে থেকে যান ব্রাত্য।
এর কারণ মূলত মানসিকতা। বাংলাদেশ বরাবরই ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। মিডিওকার মেন্টালিটির এক অনন্য উদাহরণ হতে পারে গোটা ক্রিকেট অঙ্গন। এই তো সেদিন ভারতের বিপক্ষে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হজম করেছেন রিশাদ। ধরুণ সেই পারফরমেন্সের উপর ভর করে বিপিএলে দলই পেলেন না রিশাদ। তাহলে ঠিক কোথায় পৌঁছাত তার আত্মবিশ্বাস?
অন্যদিকে, রিঙ্কু সিংয়ের কাছে ইয়াশ দয়াল পাঁচ ছক্কা হজম করে ম্যাচ হারান। এরপরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি দারুণ প্রত্যাবর্তন ঘটান। ইয়াশদের দিকে ভরসার হাত বাড়াতে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা দ্বিধা করেন না। কিন্তু রিশাদের জন্যে ভরসার হাতগুলো সর্বদাই সংকুচিত থাকে।
তাই তো রিশাদ হোসেনকে দলে নিতে প্রচুর ভাবতে হয় দল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু এরপর যে তিনি নিয়ম করে একাদশে সুযোগ পাবেন, সে নিশ্চয়তাও নেই। এখানেই রিশাদের মত খেলোয়াড়রা পিছিয়ে পড়েন, মনোবল হারিয়ে ফেলেন। গোটা ক্রিকেট কাঠামোর সংকীর্ণ মানসিকতার বিপরীতে লেগ স্পিনার হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
অধিকাংশ সময়ই ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের ডাগআউটে বসে থাকতে হয়। দলগুলো রক্ষণাত্মক পরিকল্পনায় ফিঙ্গার স্পিনাররা প্রাধান্য পান। বিপিএলের মঞ্চেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনা। গেল আসরে রিশাদ মোটে ৪টি ম্যাচ খেলেছেন, তিনটি ইনিংসে বল করে ছয়টি উইকেট বাগিয়েছেন।
অথচ গেল আসরের ফাইনাল অবধি খেলেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাদের দলের কোচ ছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। কিন্তু ফলাফল পাওয়ার নেশায়, তিনিও রিশাদকে অধিকাংশ ম্যাচের সুযোগ দিতে দ্বিধা করেছেন। বাংলাদেশের পুরো ক্রিকেট পাড়ার মানসিকতা একই রকম।
ঠিক এ কারণেই রিশাদ হোসেনরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেদম প্রহারের শিকার হন। ঠিক এ কারণেই দেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের এত আকাল। নিজেদের প্রস্তুত করবার, নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবার- যথাযথ সুযোগ রিশাদদের কপালে জোটে না। অধিকাংশ দলই একটা নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাংলাদেশ দলও তাই মিডিওকার দল হয়েই প্রচণ্ড লজ্জার সাক্ষী হয়।