২০১২ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা কে ছিলেন, মনে আছে? তিনি উইলিয়াম বোসিস্টো। খেই হারিয়ে যার এখন ঠাই হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। অথচ, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের রূপকথার রাজপূত্র ছিলেন তিনি।
সেই বিশ্বকাপে যা করেছিলেন তা ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। ছয় ম্যাচে ২৭৬ রান, গড়টা কত হতে পারে অনুমান করতে পারবেন? ২৭৬, জ্বি ভুল পড়ছেন না। আসলেই ২৭৬ গড়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন তিনি, কেননা ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই ছিলেন অপরাজিত। ফাইনালেও খেলেছেন অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংস।
২০১২ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ থেকে বাবর আজম, কইন্টন ডি কক, লিটন দাস, উন্মুক্ত চাঁদ, এনামুল হক বিজয় সহ বহু নামি-দামি ব্যাটারের উত্থান হয়েছিল। তবুও তাদের সবাইকে টপকে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া যুবদলের অধিনায়ক। তিনিই এখন খুলনা টাইগার্সের হয়ে পারফরম করে যাওয়া অখ্যাত ব্যাটার।
গড়টা এখানেও সেই ব্র্যাডম্যান-সুলভ। আশির ওপর। খুলনার ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। অথচ তাকে এই বিপিএলের আগে চিনতেনই বা কতজন! যারা চিনতেন তারাও তো ভুলে যেতেই বসেছিলেন।
বয়সটা এখন ৩১ পেরিয়ে গেছে। কি এমন হল যে এই অজি রাজকুমারকে কাদায় গড়াগড়ি খেলতে হয়? তার তো খেলার কথা ছিল পদ্ম জলে! শুধু নিন্মমানের ফ্রাঞ্চাইজি লিগই না জীবনের অদ্ভুত বাঁকে পেশায় তিনি একজন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজারও। যদিও বিপিএল দিয়ে একটু হলেও হারিয়ে যাওয়া বোসিস্টো আলোচনায় ফিরলেন।
বোসিস্টোর বিপিএল যাত্রার শুরুটা হয় ইমরুল কায়েসের সুপারিশে। সম্প্রতি অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন ইমরুল। সেখানেই বোসিস্টোর ক্রিকেটীয় দক্ষতার কথা শুনেছিলেন মিচেল মার্শের কাছ থেকে। পরে মেলবোর্নে একটি টুর্নামেন্টে ইমরুল ও বোসিস্টো একসঙ্গে খেলেন। সেই পারফরম্যান্স দেখেই ইমরুল খুলনা টাইগার্স কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে সুপারিশ করেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোসিস্টো বলেন, ‘নেপাল থেকে সরাসরি এখানে এসেছিলাম। সেখানে একটি ভালো টুর্নামেন্ট খেলেছিলাম। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার ক্রিকেটেও বেশ কিছু শক্তিশালী পারফরম্যান্স করেছিলাম। ফলে নিজের খেলায় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বিপিএলের স্পিন সহায়ক উইকেটগুলো আমার ব্যাটিং স্টাইলের সঙ্গে মানানসই। পরিশ্রম আর দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফল এটি। বিপিএলে দর্শকদের সমর্থন অসাধারণ ছিল। খুলনার হয়ে কয়েকটি ম্যাচ শেষ করে আসতে পেরেছি, যা আমার জন্য বেশ গর্বের।’
যদিও জাতীয় দলে কখনই খেলা হয়নি তার। ক্রিকেট ক্যারিয়ার অবশ্য একসময় থমকে গিয়েছিল। ২০২১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চুক্তি হারানোর পর তিনি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার লিগ ক্রিকেটে মনোযোগ দেন। পাশাপাশি শুরু করেন মর্টগেজ ব্রোকার হিসেবে পেশা।
তিনি বলেন, ‘ব্রোকার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে ক্রিকেট থেকে একটি মানসিক বিরতি নিতে সাহায্য করে। এটি আমার সময় ব্যবস্থাপনা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ক্রিকেটের বাইরে শেয়ার বাজারে আমার আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা জানে, ম্যাচ থাকলে আমাকে কিছু সময় দিতে হবে, কিন্তু তাদের সঙ্গেও আমি সবসময় সৎ থাকতে চেষ্টা করি।’
মিচেল মার্শ ও ট্রাভিস হেডের মতো তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা বোসিস্টোর জীবনের বড় অংশ। তিনি বলেন, ‘মার্শ ও হেডের মতো চরিত্ররা আমার জীবনে বিশেষ। তাদের যাত্রা আমাকে শেখায়, বিশ্বাস আর ইতিবাচক মানসিকতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেও তরুণ ক্রিকেটারদের মেন্টর হিসেবে সাহায্য করতে ভালোবাসি। তাদের বলি, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার জন্য নিজের পদ্ধতি ও শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখা খুব জরুরি।’
বিপিএলের এই আসর বোসিস্টোর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এটি তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়ায় নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে সেভাবে মেলে ধরতে না পারা বোসিস্টো ক্রিকেটটা এখন খেলেন শুধুই উপভোগের জন্য।
– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে