দূরবীন নয়, পেদ্রিকে খালি চোখেই দেখা যায়

এখানেই কি শেষ পেদ্রির কীর্তি? মোটেও না। বরং যা কিছু দেখা যায় না, বোঝা যায় না- সেসবই করে দেখিয়েছেন তিনি মধ্যমাঠে। 

রোমাঞ্চের পারদে ঠাসা। অবিশ্বাস্যের এক মায়াচ্ছন্ন ঘোর। রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে বার্সেলোনার শিরোপা উৎসব। ‘রেমনতাদা’, প্রত্যাবর্তনের প্রতিশব্দ বণে যাওয়া মাদ্রিদের বিপক্ষে লেখা হল ফিরে আসার অদম্য কাব্য। তবে তারও বহু আগে, পেদ্রি নামক এক ছোকড়া ছড়িয়ে ঘুরিয়েছেন মধ্যমাঠে। রিয়ালের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে তিনিই তো উন্মুক্ত করেছিলেন গোলের দুয়ার।

তর্ক হয়, আলোচনা-সমালোচনা হয়, কেউ কেউ তো জোর গলায় বলেই বসেন- পেদ্রিই এই সময়ের সেরা মিডফিল্ডার। সেই সাহসটুকু পেদ্রিই অবশ্য দিয়েছেন। এল ক্ল্যাসিকোর মত বড় মঞ্চে, নিমিষের মধ্যে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়ে তিনি প্রমাণ রেখেছেন- লোকে যা বলে তা ডাহা মিথ্যে অন্তত নয়।

পেদ্রি, ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং, দানি ওলমোদের মধ্যমাঠে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। রিয়াল মাদ্রিদ তাই মধ্যমাঠে লোকবল বাড়িয়ে খালি জায়গা কমানোর চেষ্টা করে প্রথম অর্ধের একেবারে শুরু থেকেই। আক্রমণ হয় বার্সার পক্ষ থেকে। কিন্তু গোলটা আর হয় না। আটকে যাচ্ছে বারবার। রাফিনহার ভুল আছে, তবুও তিন জনের মিডফিল্ডে চারজন কোন কোন ক্ষেত্রে পাঁচজন মিডফিল্ডার ভীষণ পীড়াদায়ক।

পালটা আক্রমণের সুযোগ পেয়ে রিয়াল অবশ্য তখন চলে যায় বার্সেলোনার গোলবারের দিকে। কিন্তু আক্রমণ নস্যাৎ হয়, বল চলে যায় পেদ্রির পায়ে। মুহূর্তের মধ্যে তিনি স্ক্যান করে নিলেন চারিপাশ। লম্বা বল বাড়িয়ে দিলেন লামিন ইয়ামালের দিকে। সেই বলকে টেনে লামিন নিয়ে যান রিয়াল মাদ্রিদের ডি-বক্সের ডানপাশে।

রিয়ালের সেই ওভারলোড করা মিড তখন শূন্য প্রায়। রক্ষণের সবার নজন লামিনের দিকে। একটা লং বলে পুরো পরিকল্পনার ছক ঠুনকো তাসের ঘর। নিজেদের রক্ষণ থেকে আক্রমণভাগে বল সাপ্লাই দেওয়া পেদ্রি ততক্ষণে দৌড়ে এসে পড়েছেন ঠিক ডি-বক্সের সামনের জায়গাটায়। ইয়ামালের মাইনাস, পেদ্রির গোল। ১-০ গোলে কোপা দেল রে এর ফাইনালে এগিয়ে যায় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা।

এখানেই কি শেষ পেদ্রির কীর্তি? মোটেও না। তিনি ছিলেন সর্বত্র। থাকার চেষ্টা করেছেন। মাদ্রিদের আক্রমণকে প্রতিহত করেছেন। মধ্যমাঠে বলে নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে মাদ্রিদ খেলোয়াড়দের মনস্তাত্বিক চাপ বাড়িয়েছেন। অ্যাটাকিং থার্ডে বল সাপ্লাই দিয়েছেন। মাদ্রিদের বাড়ানো পাসের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তিনি তাই করেছেন। শেষ অবধি শিরোপা উঁচিয়ে উৎসবও করেছেন পেদ্রি।

তার করা ওই প্রথম গোলটাই বার্সেলোনাকে মানসিক ও কৌশলগত বুস্টার দিয়েছে। দিনশেষে হয়ত গোলের আলোচনা হবে পরিসংখ্যান স্থায়ী হবে। যা কিছু সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, তা সবই একদিন সময়ের অতলে হারিয়ে যাবে। তবুও পেদ্রিরা সংখ্যার খেলায় মেতে ওঠেন না। তারা বরং যা কিছু দেখা যায় না, বোঝা যায় না- সেসবই করে দেখান মধ্যমাঠে।

Share via
Copy link