তর্ক-বিতর্কের ছড়াছড়ি, এল ক্ল্যাসিকো ফিরে পেল পুরনো রুপ

এল ক্ল্যাসিকোর সেই পুরনো রগরগে, টগবগে আমেজটাই যেন আবার পুনর্জন্ম নিল। একটা ম্যাচকে ঘিরে যতরকম রোমাঞ্চ প্রস্ফুরিত হতে পারে, তার সবটাই হল কোপা দেল রে এর ফাইনালকে ঘিরে। 

রুদিগারের বোতল ছুড়ে মারা। ‘ভিএআর’ দেখে পেনাল্টি বাতিল হওয়া। আবার হ্যান্ডবলে পেনাল্টি না দেওয়া। প্রতিপক্ষকে টেনে ধরে রাখার শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া। আর দুই দলের খেলোয়াড়দের শরীরি লড়াইয়ের তো অন্ত নেই। মোদ্দাকথা এল ক্ল্যাসিকোর সেই পুরনো রগরগে, টগবগে আমেজটাই যেন পুনর্জন্ম নিল। একটা ম্যাচকে ঘিরে যতরকম রোমাঞ্চ প্রস্ফুটিত হতে পারে, তার সবটাই হল কোপা দেল রে এর ফাইনালকে ঘিরে।

ম্যাচের আগে রেফারি আর রিয়াল মাদ্রিদ মুখোমুখি। এই নিয়ে কতশত জলঘোলা। রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচ না খেলার হুমকি। প্রেস ব্রিফিং, অফিশিয়াল ডিনার ও অনুশীলন সবকিছু বাতিল করা। ম্যাচের আগেই পরিবেশ হয়ে উঠেছিল ভীষণ গম্ভীর।

ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তে, সমর্থকদের বর্বরতা। দুই দলের সমর্থকরাই অ্যারেস্ট হয়েছে। এক মাদ্রিদ সমর্থকের তো নাকই ফাটিয়ে দিয়েছিলেন আরেক বার্সা সমর্থক। উত্তেজনার পারদ তখন ঠিক কোথায় আন্দাজ করা যায়! সম্ভবত কল্পনার বাইরের চাপ তখন ধমনীর দেয়ালে প্রতিনিয়ত করছে আঘাত।

এরপর তো ম্যাচ মাঠে গড়াল। রেফারি রিকার্ডো দে বার্গোসের জায়গায় হয়ত কেউই থাকতে চাইত না এমন দিনে। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলেই দৌড়ে পালাত। কিন্তু পেশাদারিত্বের খাতিরে হৃদপিণ্ডের প্রচণ্ড কম্পনের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি ম্যাচ পরিচালনা করলেন। চাপ বেশি, ম্যাচের উত্তেজনা বেশি, তাই ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

আর সেই ভুলের মাশুল প্রায় দিয়েই দিচ্ছিল বার্সেলোনা। ডি বক্সের ভেতরে ফেদে ভালভার্দের হাতে বল লাগে। যদিও স্লাইডিং ট্যাকেল দিতে গিয়ে সাপোর্ট হিসেবে মাটিতে হাত যেতে যেতেই ভালভার্দের হাতে বল লেগেছিল। সে ক্ষেত্রে রেফারির উপর সিদ্ধান্ত বর্তায়। এক্ষেত্রে বিবেচিত হয় খেলোয়াড়ের উদ্দেশ্য। তবুও বার্সার প্রতিবাদ ছিল পেনাল্টি না দেওয়ার বিপক্ষে।

এরপর তো একেবারে খালি চোখে ধরা খেল দানি সেবায়োসের ফাউল। কর্ণার কিকের সময় পাউ কুবার্সিকে রীতিমত টেনে-হিচড়ে গোলবারের থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন সেবায়োস। কর্ণার থেকে বলটা সাইডবারে আঘাত করে, স্রেফ একহাতের মত দূরত্বেই ছিলেন পাউ কুবার্সি, গোলটা পেয়ে যেতে পারতেন। তবে পাননি, রেফারি ফাউল দিয়ে পেনাল্টিও দেননি।

অন্যদিকে ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের প্রায় শেষের দিকে আরও এক বিতর্কিত পেনাল্টি দিয়ে বসেন রেফারি। তবে ভারের সহয়তায় তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। উলটো রাফিনহাকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন। পুরো রেফারি প্যানেল চেষ্টা করেছেন পাহাড়সম স্নায়ুচাপে প্রায় নির্ভুল থাকার। তবুও শেষবেলায় রুদিগার রেফারির দিকে বোতল ছুড়ে মারলেন।

মস্তিষ্কের দিকে ছুটে চলা উত্তপ্ত লাভা নিশ্চয়ই এই কাজটি করতে বাধ্য করেছিল রুদিগারকে। লালকার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন, তবে বড়সড় নিষেধাজ্ঞার মুখে তিনি পড়তে পারেন। দিনশেষে জম্পেশ এক ম্যাচ দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। কেউ হয়ত উৎসবের আনন্দে মেতেছে, কেউ আবার বিষাদের চাদর গায়ে চড়িয়ে হেটে গেছেন দিগন্তের দিকে।

গোল হয়েছে, হারতে হারতে জিতেছে কেউ, জিততে জিততে হেরেছে কেউ। গোলের উত্তরে গোল হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের দেখাও মিলেছে। তাইতো তর্ক-বিতর্ক ছাপিয়ে সবাই নিশ্চয়ই কুর্নিশ করেছে ফুটবলকে। ভিন্নতার সুযোগ কি আর আছে!

Share via
Copy link