ডাক কীর্তির সেরা একাদশ!

এমনও বেশ কিছু ক্রিকেটার আছেন যাদের ডাক মারার ঘটনাটা কোনো না কোনো কারণে খুব বিশেষ। ডাক মেরেও যে ভিন্ন ভাবে রেকর্ড বইয়ে নাম তোলা যায় - সেটা তাঁদের না দেখলে জানাই হত না। চাইলে এদের নিয়ে একটা একাদশও বানিয়ে ফেলা যায়।

ডাক – কেই বা এমন অভিজ্ঞতা চায়। অথচ এটা পার্ট অব গেম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহু ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার ডাক মেরেছেন। কেউ কেউ তো ডাকের রেকর্ডও গড়েছেন।

তবে এমনও বেশ কিছু ক্রিকেটার আছেন যাদের ডাক মারার ঘটনাটা কোনো না কোনো কারণে খুব বিশেষ। ডাক মেরেও যে ভিন্ন ভাবে রেকর্ড বইয়ে নাম তোলা যায় – সেটা তাঁদের না দেখলে জানাই হত না। চাইলে এদের নিয়ে একটা একাদশও বানিয়ে ফেলা যায়। তেমনই একটা একাদশ বানিয়েছে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফো।

  • কিথ স্ট্যাকপোল (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৭৪ সালের মার্চে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামেন অজি ওপেনার কিথ স্ট্যাকপোল। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই রিচার্ড হ্যাডলির ফুলটসে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাকে ফিরেন কিথ! ইতিহাসে প্রথমবার ইনিংসের প্রথম বল মাটি স্পর্শ করার আগেই আউট হয়। পরের ইনিংসেও ৭ বলে শূন্য রানে আউট হয় বিভীষিকাময় ফেয়ারওয়েল দিয়ে বিদায় নেন কিথ।

  • স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৪৮ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে এরিক হলিসের বলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে আউট হন অস্ট্রেলিয়ান তারকা ডন ব্র‍্যাডম্যান। মাত্র ৪ রান করলেই টেস্টে ১০০ গড় নিয়ে অবসরে যেতে পারতেন এই অজি গ্রেট। অবশ্য ব্র‍্যাডম্যান নিজেই জানতেন না ৪ রান করলেই ১০০ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারবেন! সেসময় পরিসংখ্যান নিয়ে এতো আলোচনাও হতো না।

  • গ্রেগ চ্যাপেল (অস্ট্রেলিয়া): অধিনায়ক

সাবেক অজি তারকা গ্রেগ চ্যাপেল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করেছেন ১৯৮১-৮২ সালে। ঘরের মাটিতে ওই মৌসুমে সাতবার ডাক মারেন তিনি! এর মধ্যে টানা চার ইনিংসে ডাকে আউট হন চ্যাপেল! এই কারণে পরবর্তীতে তাকে মজার অর্থে ‘চ্যাপেলি’ নামেও ডাকা হতো!

  • ডন ব্র‍্যাডম্যান (আবারও)

১৯৩২-৩৩ বডিলাইন সিরিজে প্রথম টেস্ট অসুস্থতার কারণে মিস করার পর দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাক করেন ডন ব্র‍্যাডম্যান। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামার পর ইংলিশ পেসার বিল বোসের বল হুক করতে গিয়ে এজ হয়ে বোল্ড হন ব্র‍্যাডম্যান। গোল্ডেন ডাকেই ফেরত যান তিনি। ওই পুরো সিরিজে ব্র‍্যাডম্যানের উইকেটটি ছিলো বিল বোসের একমাত্র শিকার! এছাড়া আর কোনো উইকেটই নিতে পারেননি তিনি। মানে এই একাদশে তিনি একাই জায়গা পেয়েছেন দু’বার। সাধে কি আর তিনি ডন ব্র্যাডম্যান।

  • রমেশ কালুভিতারানা (উইকেটরক্ষক)

বিধ্বংসী ব্যাটার হিসেবেই বেশ নামডাক ছিলো লঙ্কান ক্রিকেটার রমেশ কালুভিতারানার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই খেলেছিলেন ১৩২ রানের হার না মানা এক ইনিংস। ১৯৯৬ সালে সিঙ্গার কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে রমেশ ১১ বলে শূন্য রানে আউট হন! তবে তিনি যখন আউট হন দলের রান তখন ৭০! সেদিন একপ্রান্তে সনাত জয়সুরিয়ার বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখেছিলো ক্রিকেট দুনিয়া।

  • গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৯৬৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ৫ ম্যাচে টেস্ট সিরিজে ৩-০ তে পিছিয়ে তখন ইংলিশরা। শেষ টেস্টে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে ইংল্যান্ড। ওই সিরিজের প্রথম চার টেস্টে ব্যাট হাতে ৬৪১ রান আর বল হাতে ১৭ উইকেট শিকার করেন ক্যারিবিয়ান তারকা গ্যারি সোবার্স! শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন তখন ব্রায়ান ক্লোজ। ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সোবার্স ৮১ রানের এক ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক ফাইটব্যাক দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে জন স্নো’য়ের বল হুক করতে গিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক ক্লোজের হাতে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাকে আউট হন সোবার্স!

উইজডেনের মতে, ‘সোবার্স সহজ শর্ট বলটা ইচ্ছে করেই হুক করেছিলো যাতে ক্লোজের হাতে ক্যাচ যায়।’ সোবার্স ভেবেছিলেন ক্লোজ ড্রাইভ দিতে গিয়ে মিস করবেন। তবে জায়গায় দাঁড়িয়েই ক্যাচটি লুফে নেয় ইংলিশ অধিনায়ক। ওই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় ইংলিশরা।

  • ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)

অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের দুই ইনিংসেই ডাক মেরেছিলেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ান বোথাম। তবে তর্কসাপেক্ষে ১৯৯২ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে তার ইনিংসটি ছিলো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে। পিঞ্চ হিটার হিসেবে সেই ম্যাচে ওপেনিংয়ে প্রোমোট করা হয় বোথামকে। আর ব্যাট করতে নেমেই ওয়াসিম আকরামের বলে শূন্য রানে আউট হন বোথাম!

আশির দশকে পাকিস্তান সফর থেকে ফেরার পর বোথাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘পাকিস্তান এমন একটা দেশ, যেখানে আপনি আপনার শাশুড়িকে পাঠিয়ে দিতে পারেন।’৯২ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে বোথাম আউট হবার পর আমির সোহেল তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমার বদলে তোমার শাশুড়িকে ব্যাট করতে পাঠাও। নিশ্চয় তিনি তোমার চেয়ে ভালো করবেন।’

  • অজিত আগারকার (ভারত)

সাবেক ভারতীয় পেসার অজিত আগারকার লর্ডসে অসাধারণ এক টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৯-২০০০ টেস্ট সিরিজে টানা পাঁচ ডাক মারেন অজিত! প্রথম চার বারই টানা গোল্ডেন ডাকে আউট হন তিনি। শেষ বার প্রথম বলে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও দ্বিতীয় বলে আউট হয়েই টানা পাঁচ ডাকের রেকর্ড গড়েন। অজিত ছাড়া টানা পাঁচ ডাকে নাম আছে অস্ট্রেলিয়ার বব হল্যান্ড ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ আসিফ।

  • মানিন্দার সিং (ভারত)

১৯৮৬-৮৭ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মাদ্রাজে এক টেস্টে ভারতের জয়ের জন্য শেষ উইকেটে প্রয়োজন ছিলো মাত্র ১ রান। এই এক রানই নিতে পারেননি মানিন্দার সিং! শূন্য রানে আউট হয়ে ম্যাচ টাই করে মানিন্দর! টেস্ট ইতিহাসে এটি ছিলো দ্বিতীয় টাই।

  • জিম হিগস (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৭৫ সালে পুরো অ্যাশেজ সিরিজে ভিক্টোরিয়ার লেগ স্পিনার জিম হিগস ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে মাত্র ১ বল খেলেন! আর ওই ১ বলেই ক্রিস বাল্ডারস্টোনের বলে শূন্য রানেই আউট হন হিগস! পুরো সিরিজে মাত্র ১ বল খেলার সুযোগ পেয়ে আউট হন গোল্ডেন ডাকে। ২০১১ বিশ্বকাপে কেনিয়ার স্পিনার শেম এনগোচে পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র তিন বল খেলার সুযোগ পান। তিন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের সাথে ব্যাট করতে নেমে তিন বলেই গোল্ডেন ডাকে আউট হন এনগোচে!

  • জিওফ অ্যালট (নিউজিল্যান্ড)

১৯৯৮ এর শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৭ বল আর ১০১ মিনিট ক্রিজে থেকে শূন্য রানে আউট হন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার জিওফ অ্যালট। সময় এবং বলের বিচারে এটিও ছিলো রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি সময় এবং বেশি বল খেলে ডাকের রেকর্ডটা জিওফ অ্যালটের দখলে। অবশ্য ওই টেস্টে ড্র’য়ের জন্য জিওফ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...