ফিরে আসা রুপেল ভলচার

এমিলিয়ানো মার্টিনেজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর ফেসবুক জুড়ে ওর উড়ন্ত ছবি দেখে ভাবলাম সবচেয়ে উচুতে উড়তে পারে পাখি কোনটা একটু দেখি। সম্প্রতি এক অভ্যাস গড়ে উঠেছে। মোবাইলে সফট কপির বই বা বিশাল বিশাল আর্টিকেল পড়তে কেন জানি বেশ আরাম পাই।

আরো পড়ুন

বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি এই কাজের জন্যে। উইকিপিডিয়াতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম রুপেলস ভলচারকে। এই পাখি উড়তে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৭ হাজার ফিট উঁচুতে, মিটারের হিসাবে যার মাপ ১১,৩০০। পাখিটার নাম দেখে বুঝতেই পারছেন কোনো মানুষের নামানুসারে রাখা।

জার্মানির এডওয়ার্ড রুপেল সাহেবের নামেই এই পাখির নাম। এই রুপেল সাহেব আবার বিখ্যাত ‘রুপেল অ্যান্ড হার্নিয়ার্স’ ব্যাঙ্কের অর্ধেকের মালিক রুপেল সিনিয়ের ছেলে। মার্চেন্ট হবার কথা ছিল ছোটো রুপেলের। কিন্তু সিনাই পর্বত ঘুরে দেখার পরে মত বদলে হয়ে গেলেন প্রকৃতিবিদ। বোটানি এবং জুলোজি দুটোতেই সমান বিদ্যে এই ভদ্রলোকের। দীক্ষা নিয়েছেন ইতালির জেনোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই ওয়ান থিং ফলোড এনাদার। আর রুপেল ভলচারের খোঁজ পাওয়া।

এই পাখিটি কিন্তু বেশ বিরল। বিভিন্ন কারণে হারায়ে যাচ্ছে দিনদিন আরো। এমিলিয়ানো বা এমি মার্টিনেজের আগে আর্জেন্টিনাকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে একটা ভালো মানের গোলরক্ষকের জন্যে। ২০১৮ বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ কোপা আমেরিকায় গোলরক্ষকদের পারফরম্যান্স ছিল লজ্জাজনক।

রুপেল ভলচারের মতন আর্জেন্টিনায় ভাল গোলরক্ষকও বেশ দুর্লভ। টাইব্রেকার জিনিসটা ভয়ংকরভাবে সুন্দর। কাউকে ভালোবাসার মতন। আমেরিকার সাউদার্ন রক ব্যান্ড দ্যা অলম্যান ব্রাদার্স ব্যান্ডের গান সোলসাইনে এমন একটা কথা বলা আছে।

‘Sometimes a man can feel this emptiness

Like a woman has robbed him of his very soul’

ব্যাজ্জিও হিরো থেকে জিরো বনে গিয়েছিল। এই রকম কষ্টে দণ্ডিত অনেক নামিদামি প্লেয়ারই আছেন গোলরক্ষকদের জন্যে ব্যাপারটা ভিন্ন। মানুষ ধরেই নেয় সেভ হয়তো করতে পারবে না। পারলে বোনাস। জীবনে অনেক টাইব্রেকার দেখেছি।

অনেক বিখ্যাত-সফল গোলিদের দেখেছি এই স্নায়ুযুদ্ধে হার মানতে, তাও আবার যুদ্ধ শুরুর আগেই। এবার কোপা আমেরিকার মঞ্চে এমি মার্টিনেজ যে আত্মবিশ্বাস আর কারিশমা দেখিয়েছে এর কথা আমি মনে রাখব আজীবন। এমন নাকানিচুবানি খাইয়েছে সাঞ্চেজ-মিনা-কারদোনাদের। এমন কাউকেই তো খুঁজেছি সরোবর থেকে সরোবর। যাহ, মনোসরণির তোমাকে খুঁজেছি গানের লাইন মেরে দিলাম।

আফ্রিকান সংস্কৃতিতে রুপেল ভলচারকে হত্যা করা হয়-হতো এবং হত্যার পরে ব্যবহার করা হত জাদুমন্ত্রে। না রুপেল ভলচার আসলেই জাদুময়ী, নাইলে এমি মার্টিনেজের এমন পারফরম্যান্স আসল কোথা থেকে? সেও তো আমাদের রুপেল ভলচার। উড়ছে ডানা মেলে সকল বাধাবিপত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

হয়তো ব্রাজিলের কাছে হেরে যাব। লজ্জাজনকভাবেও হারতে পারি। কিন্তু এটা শুধুই আনন্দের দিন। এটা শুধুই রুপেল ভলচারের দিন। এটা শুধুই এমি মার্টিনেজের দিন। আর একই সাথে এটাও সত্যি যে, আর্জেন্টিনা এমন আরেকটা নিজেদের দিন পেলেই হয়তো ঘুঁচে যাবে শিরোপা ক্ষরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link