হাশিম আমলা তো এমনই!

ক্রিকেট মাঠের উৎকৃষ্ট ও শান্ত এক চরিত্র হাশিম আমলা। একদম ক্রিকেটের আদি ভদ্রলোক যাকে বলে। তবে লেগ সাইডে তাঁর কব্জি মোচড়ানো ফ্লিক কিংবা কপিবুক কাভার ড্রাইভ কথা বলে। শুধু কথাই বলে না, তাঁর ব্যাট বাইশ গজে যেনো বন উল্লাস করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিনে আরো বছর দুই আগে। তবে চলে যাওয়া মানেই যে প্রস্থান নয়, হাশিম আমলা চলে গিয়েও থেকে গেছেন তাঁর চেয়েও বেশি কিছু হয়ে।

ক্রিকেট মাঠের উৎকৃষ্ট ও শান্ত এক চরিত্র হাশিম আমলা। একদম ক্রিকেটের আদি ভদ্রলোক যাকে বলে। তবে লেগ সাইডে তাঁর কব্জি মোচড়ানো ফ্লিক কিংবা কপিবুক কাভার ড্রাইভ কথা বলে। শুধু কথাই বলে না, তাঁর ব্যাট বাইশ গজে যেনো বন উল্লাস করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিনে আরো বছর দুই আগে। তবে চলে যাওয়া মানেই যে প্রস্থান নয়, হাশিম আমলা চলে গিয়েও থেকে গেছেন তাঁর চেয়েও বেশি কিছু হয়ে।

একটু ২০১৫ সালের নাগপুর টেস্টে ফিরে যাই। দক্ষিণ এশিয়ার টিপিকাল র‍্যাংক টার্নার উইকেট যেমন হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই উইকেটেও ভারতের স্পিনাররা একটা উইকেট তুলতে রীতিমত হিমসিম খেয়েছিল। আগে ব্যাট করে ২১৫ রানের বিরাট সংগ্রহ (পিচ বিবেচনায়) দাঁড় করা ভারত।

জবাব দিতে গিয়ে মাত্র ৭৯ রানেই অল আউট দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের দুই স্পিনার অশ্বিন আর জাদেজা মিলেই নিলেন ৯ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত আরো ১৭৯ রান যোগ করলে ৩১০ রানের বিরাট টার্গেট পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে আবারো অশ্বিনের ঘুর্ণিতে টালমাটাল প্রোটিয়া ব্যাটাররা।

তবে একজন বাইশ গজে আঁকড়ে ছিলেন চুম্বকের মত। খেললেন ৩৯ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। মহাকাব্যিক বলছি কেননা এই ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন ১৬৭ বলে। তবে এর চেয়েও বেশি কিছু জমিয়ে রেখেছিলেন দিল্লীর জন্য। সেখানেও একইরকম পিচ ও ম্যাচের চিত্র প্রায় এক।

সেখানেও আমলা ২৫ রান করলেন। এবার বল খেললেন ২৪৪ টি। ওই ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ১০.২৪। দিল্লির ওই পিচে দ্বিতীয় ইনিংসে বাইশ গজে আঁকড়ে ছিলেন ঠিক ২৮৯ মিনিট। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো টেস্ট ক্রিকেট কেমন হয়, টেস্ট টেম্পারমেন্ট কেমন হয়।

২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি ইতিহাস গড়লেন হাশিম আমলা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন ওভালে। ৩১১ রানের অপরাজিত সেই ইনিংসটি খেলেছিলেন ৫২৯ বলে। সময় নিয়েছেন ঠিক ১৩ ঘন্টা ১০ মিনিট। এছাড়া পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ১৮৫৭৩ বল।

এতকিছু বলছি শুধু বাইশ গজের সাথে আমলার বন্ধুত্বটা বোঝাতে। টেস্ট ক্রিকেটের সাথে এই ব্যাটসম্যানের বোঝাপড়াটা বোঝাতে। আমলা আবারো তাঁর এই অতিমানবীয় ব্যাটিং দেখালেন কাউন্টি ক্রিকেটে। কাউন্টি দল হ্যাম্পশায়ার আগে ব্যাট করতে নেমে করলো ৪৮৮ রান।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে আমলার দল সুররে মাত্র ৭২ রানেই অল আউট হয়ে যায়। সেখানে সর্বোচ্চ ২৯ রানের ইনিংসটি এসেছে আমলার ব্যাট থেকে। ফলো অনে পড়ে আবার ব্যাট করতে নামে সারে। সহজ জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল হ্যাম্পশায়ার।

একপ্রান্ত থেকে টানা উইকেট পড়তে থাকলে আরেকপ্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে পরীক্ষিত সৈনিক হাশিম আমলা। পঞ্চম দিন সারাদিন ব্যাট করে দলের সহজ হার আঁটকে দিলেন। ২৭৮ বলে ১৩.৩০ গড়ে খেললেন ৩৭ রানের অবিস্মরণীয় আরেকটি ইনিংস। ক্রিজে ছিলেন ঠিক ৩৮১ মিনিট।

২৭৮ বলে ইনিংসটিতে ছিল মাত্র ৫ টি চার। রীতিমত একাই দলকে হারের লজ্জা থেকে বাঁচালেন। তাঁর অপরাজিত এই ইনিংসে ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ শেষ করে সুররে। ফলে হাশিম আমলার আরেকটি দিনে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় হ্যাম্পশায়ারকে। অবশ্য আমলা যেদিন টেস্ট খেলবেন সেদিন আর কীই বা করার থাকে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...