রবিউল হাসানের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। অসীম প্রতিভা নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে আগমন ঘটেছিল তার। কিন্তু এখন অনেকটাই আড়ালে। যে লাওসের বিপক্ষে ম্যাচের জয় দিয়ে এখন বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের মূল রাউন্ডে খেলছে বাংলাদেশ সেখানে এই মিডফিল্ডারের অবদান সবচেয়ে বেশি।
যে গোলের কল্যানে এতকিছু, সেটি এসেছিল রবিউলের পা থেকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে খুব বেশি মাঠে দেখা যাচ্ছেনা তাকে। মোটা অংকের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বসুন্ধরা কিংসে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মিত একাদশে খেলার সেই স্বপ্ন ফিকে হতে বেশি সময় লাগেনি। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সময় কাটানোর কারণে তাঁকে আর জাতীয় দলের জন্য বিবেচনায় আনা হয়নি।
সে কারণে মধ্যবর্তী দলবদলে বসুন্ধরা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন মোহামেডানে। যে কোচ তাঁকে পেতে মরিয়া ছিলেন সেই অস্কার ব্রুজোন এখন মূল্যায়ন করছেন না তাকে। ২০১৮ সালে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জেতাতে আরামবাগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপরই জাতীয় দলে অভিষেক। আর খুব দ্রুত বসুন্ধরার মতো বড় ক্লাবে খেলার সুযোগকে ছাড়তে চায়নি বলেই আলোচিত দলটিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চান। আর প্রতিভার অপচয় করতে চাননা রবিউল হাসান।
কিন্তু আর ফিরতে পারলেন না, প্রতিভার অপচয় তো করেছেনই বাদ পড়ে গেছেন মোহামেডান থেকে। ক্যাম্প থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ঢাকার ফুটবলে এখন আলোচিত ঘটনার একটি। অথচ কি সম্ভাবনা হজাগিয়ে অঅগমন ঘটেছিল তার। ফুটবল একাডেমী থেকে নিজের যাত্রা শুরু করে যোগ দিয়েছিলেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে।
ক্লাবটির হয়ে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিততে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। ২০১৮ সালেই পেয়েছিলেন সেরা তরুণ উদীয়মান কেলোয়াড়ের পুরস্কার। যার ফলশ্রতিতে সেবারই পেশাদার লিগে আগমন ঘটে বসুন্ধরা কিংসের। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন রবিউলকে দলে পেতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে ওঠেন। মোটা অংকের পারিশ্রমিকে তাকে দলে নিয়ে নেয় বর্তমান জায়ান্ট ক্লাবটি। শুরুর মৌসুমে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পান অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে। এরপর ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে তার পৃথিবী। শুয়ে-বসে থেকে হাত বাড়ান নেশার দিকে। এরপর এখন নিজেই টেনে এনেছেন নিজের বিপদ।
অথচ কাতার বিশ্বকাপের আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে পরাজয়ের পর রীতিমতো খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য নির্বাসনে যাওয়া দলের জন্য ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য প্রাক বাছাইয়ে সুযোগ পায়। প্রতিপক্ষ হিসেবে লাওসের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় জেমি ডে’র শীষ্যরা।
লাওসের মাটিতে বাংলাদেশ ১-০ গোলে জয়লাভ করে। গোলটি করেছিলেন নাম্বার ১০ রিবউল হাসান। এরপর ঘরের মাঠে গোলশুন্য ড্র করে বাংলাদেশ চলে যায় বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে সময় জাতীয় দলের একাদশ গড়তে তার কোন বিকল্প ছিলনা। সেই খেলোয়াড়টিই এখন চলে গেছেন আলোচনার বাইরে। মধ্যবর্তী দলবদলে বসুন্ধরা কিংষ ছেড়ে দিলে মোহামেডান তাকে নিয়ে নেয়।
জার্সি নম্বর পেছাতে পেছাতে সাদা কালোতে তার নাম্বার হয় ৩৮! কয়েকটা ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেলেও স্পষ্টতই বোঝা গেছে ফিটনেসের অভাব। হ্যাংলা পাতলা শরীর এখন মোটা হয়ে গেছে। আর উত্তর বারিধারা বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাকে ক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়।
অথচ ক্লাব দলের পাশাপাশি জাতীয় দলের জন্য বড় সম্পদ ছিলেন টাঙ্গাইলের এই ফুটবলার। নিজেকে ফিরে পেতে ধারে মোহামেডানে যোগ দিয়েও অনুশীলনে নাকি সিরিয়ার ছিলেন তিনি। কিন্তু রাতের আধারে ডুবে থাকতেন নেশায়। তার নামে গুরুতর নেশার সেই পুরোনো অভিযোগ এনেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
ক্লাবটির পরিচালক ও ফুটবল ক্লাবের দলনেতা আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স বলেন, ‘অনেক আশা নিয়েই রবিউলকে আমরা দলে নিয়েছিলাম। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণেই তাকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আমরা এর আগেও তাকে কয়েকবার শৃঙ্খলা মানতে শোকজ নোটিশ দিয়েছিলাম কিন্তু সে তা মানে নি। যে কারণে আমরা তাকে ছেড়ে দিতে একরকম বাধ্য হয়েছি। আমাদের দলে শৃঙ্খলা না মানলে কোন খেলোয়াড়ের জায়গা নেই।’
বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে মোহামেডানে এসে মাত্র তিন ম্যাচ খেলে সর্বসাকুল্য ৩৬ মিনিট খেলার সুযোগ পায় রবিউল। যদিও সব ম্যাচেই শুরু থেকে নয় বদলি হিসেবে নেমেছিলেন।
চলতি মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস ফেডারেশন কাপ ও লিগের প্রথম পর্ব মিলিয়ে ১৭টি ম্যাচ খেললেও কোনও ম্যাচেই মাঠে নামার সুযোগ হয়নি রবিউলের। তাকে মাঠে না নামানোর কারণ হিসেবে কিংস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, শৃঙ্খলা না মানা ও অস্বাভাবিক জীবন যাপনের কারণে রবিউলের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল বসুন্ধরা কিংস। যে কারণেই তাকে প্রথম একাদশে তো দুরের কথা ম্যাচেই মাঠে রাখা হতো না।
শুধু ক্লাবে খেলার সুযোগ নয় জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন অনেকদিন হলো। ২০২০ সালের সর্বশেষ ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন রবিউল। এরপর থেকেই জায়গা হারিয়েছেন লাল-সবুজের দলে। বাংলাদেশের জার্সিতে ১৩ ম্যাচ খেলে তিন গোল করে সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন রবিউল হাসান। কিন্তু এখন তো সেই সুযোগ একেবারেই নেই।
সব মিলিয়ে তাঁর মতো তরুণ একজনকে মোটা অংকের টাকায় বুসন্ধরা দলে নিয়ে নিয়মিত না খেলিয়ে বসিয়ে রাখল। আবার প্রয়োজন শেষে ছুড়েও ফেলল। ফুটবল সংশ্লিষ্টরা তাই মনে করেন, রবিউলের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে বসুন্ধরা কোনভাবেই দায় এড়াতে পারবেনা। ভবিষ্যতে যাতে কোন ফুটবলারের ভাগ্যে এমন কিছু না ঘটে সেই দিকে খেয়াল রাখাও এখন জরুরি।