৭৪… ৭৫… জয়

দলের রান তখন ৭ উইকেটে ১৭৩। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন আরো ৬৮ রান, হাতে ৬৯ বল! ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের চেয়ে হারের সম্ভাবনাটাই তখন অনেক বেশি। তবু আশায় বুক বেঁধে বসেছিলেন বহু ক্রিকেট সমর্থকরা, তবে সেই আশায় খুব ভরসা ছিল না।

একপ্রান্তে তখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে। অন্য প্রান্তে ক্রমেই ব্যাটসম্যান সংকট। তাঁর সাথে যুক্ত হলেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সিঙ্গেল নিয়েই ধীরে ধীরে এগোতে থাকলেন দু’জনে!

বাংলাদেশের তখন উইকেট বাঁচিয়ে রান বের করাটাই রাখাটাই মূল লক্ষ্য। একপ্রান্তে জার্সি নাম্বার ৭৫, আরেকপ্রান্তে জার্সি নাম্বার ৭৪। দুই অলরাউন্ডারের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তরা। ধীরে ধীরে উইকেটে থিতু হতে থাকলেন সাইফউদ্দিন। সিঙ্গেল নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইক দেওয়ার পরিকল্পনাটা শুরু থেকেই নিজের মগজে সেট করে নিয়েছিলেন তিনি।

ওভার শেষে দু’জনের শলা-পরামর্শে সাকিব হয়তো সাইফকে বলছিলেন এ ম্যাচে আমরা মাথা নোয়াবো না। এক, দুই করেই ধীরে ধীরে ভাঙ্গা তরী ঠেলতে লাগলেন দু’জনে। এনগারাভা, মুজারাবানি, জঙ্গেরা দমাতে পারেনি দু’জনকে। অনেক চেষ্টা করলেও ভাঙ্গতে পারেনি দু’জনের জুটি।

ঠেলতে ঠেলতে শেষ পর্যন্ত তীরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের তরী। সাকিব-সাইফউদ্দিনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল সবুজের দল। অষ্টম উইকেটে দু’জনের ৬৯ রানের দুর্দান্ত জুটিই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এই ৬৯ রানের মধ্যে শেষ দুই বলে দুই বাউন্ডারি ছাড়া বাকি ৬১ রানের মধ্যে ছিলো মাত্র এক চারের মার! বাকি ৫৭ রানই দু’জনে দৌঁড়ে নিয়েছেন। ম্যাচ বাঁচাতে নিজেদের সেরাটা সবাই উজাড় করে দেয়। কিন্তু এমন প্রেশার সিচুয়েশনে দলের হাল ধরা, কোনো রকম বড় শট খেলার চিন্তা না করে সহজাত সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ বের করা! নি:সন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা জুটি।

যেখানে ম্যাচে পরাজয়ের শঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছিলো সেই মূহুর্তে দু’জনের অসাধারণ জুটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দীর্ঘদিন ব্যাটে রান খরায় থাকা সাকিবের অপরাজিত ৯৬ আর সাইফউদ্দিনের ২৮ রানের অনবদ্য ইনিংসে শেষ ওভারে তিন উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ দল।

স্নায়ুচাপকে দূরে ঠেলে দিয়ে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেই জয় ছিনিয়ে নেয় সাকিব- সাইফরা। দলের প্রয়োজনেই আবারো হাসলো সাকিবের ব্যাট। আর সাইফউদ্দিন? আপনি জানেন কি – বাংলাদেশের বর্তমান হেড কোচ একবার সাইফউদ্দিন সম্পর্কে বলেছেন, সাইফ শুধুই একজন বোলার। তিনি সাইফকে অলরাউন্ডার মনে করেননা। আর শেষে সাকিবের সাথে সেই সাইফের অনবদ্য ইনিংসেই কিনা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার এড়িয়ে কোচের মুখ রক্ষা!

সচরাচর টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে কামব্যাক করতে দেখা যায় না। এমন রেকর্ড খুবই কম। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব-রিয়াদের সেই জুটি! এরপর আজকের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ম উইকেটের এক কাব্যিক জুটি। নির্ভিক শট, চোখে মুখে হারের কোনো শঙ্কাই নেই। এই জুটিকে কোন উপমা ব্যবহার করে প্রশংসায় ভাসাবো সেটিই ভাবছি।

জার্সি নাম্বার ৭৫ এবং ৭৪ দুই অলরাউন্ডার একসাথে দাঁড়িয়ে দলকে টানলেন। একসাথে মাঠ থেকে জয় নিয়ে বের হলেন! একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আরেকজন হালের তরুণ একজন। এক সেরার সাথে নিজের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ বের করে আনলেন এই তরুণ অলরাউন্ডার। তফাতটা যাই হোক এই দু’জনের কাধে চড়েই তো সিরিজটা নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। অসাধারণ চোখ রাঙানো এক জুটি। সেই ৭৪-৭৫ এর হাত ধরেই কিনা ভাঙা তরী ভাসতে ভাসতে তীরে ভিড়লো। অনেক অভাবের দল জিতলো আরেকটা সিরিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link