প্রথম প্রতিশ্রুতি
করাচির পুলিশ কমিশনার শাইজাদের ডেকে সতর্ক করলেন, খেলা বাতিল করো! নাহলে যে ধর্মীয় সংগঠনগুলো হামলা করবে নাকি শাইজা শরমিনের বাড়ি। আট হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হল সুরক্ষার জন্য। দর্শকশূন্য করাচির স্টেডিয়ামে খেলা হল। খেলা শেষ হতেই দুই মেয়ের বাবা পরামর্শ দিলেন, সোজা ইংল্যান্ডে ফিরে যাও। বেনজির থাকুন ছাই না-থাকুন, পাকিস্তানি পৃথিবী এখনও তৈরি নয় মেয়েদের ক্রিকেট মাঠে সুযোগ দিতে।
এ-গল্পের নায়ক বা নায়িকা খুঁজতে গিয়ে শেষমেশ ক্রিকেটকেই বেছে নিতে হল। চরিত্রগুলো একে একে গল্পের প্রয়োজনে চলে আসে, নায়ককে দাঁড় করাবার জন্য গল্প খাড়া করতে হয় না। এ সেরকম গল্প অথবা ঘটনা।
সালটা ১৯৮৮, করাচির রাস্তায় রাস্তায় তখন উৎসব। জুলফিকার ভুট্টোর পঁয়ত্রিশ বছরের মেয়েটি ইলেকশনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। করাচির রাস্তায় রাস্তায় বাজছে, ‘দিলাতিরবিজা’ বেনজির ভুট্টোর ক্যাম্পেন সং। পাকিস্তানের প্রথম নারী দেশপ্রধান। পাকিস্তান বদলাচ্ছে। এই উৎসবের মধ্যেই কিন্তু একাগ্র চিত্তে নিজেদের নিংড়ে নিচ্ছেন দুই টিনএজ তরুণী। বছর উনিশের শাইজা আর ষোলোর শরমিন। করাচির ধনী কার্পেট ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ খানের দুই মেয়ে। চেহারায়, চলনে-বলনে, ভাবনাচিন্তায় যে-কোনো পুরুষের থেকে এগিয়ে দীর্ঘদেহী এই দুই তরুণী।
পাকিস্তান ক্রিকেট পাগল দেশ; ছেলেরা তো বটেই মেয়েরাও ক্রিকেট দেখতে ছোটে, ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে, লেখে। কিন্তু ক্রিকেট খেলে না। বা বলা ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায় না। খান সাহিবাদের অবশ্য সে সমস্যা হয়নি। তারা ভাইদের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলত। অবশ্য বাড়ির লনে। তারপর যখন ইংল্যান্ডে পড়তে গেল, তখন অবশ্য স্কুল ক্রিকেট চুটিয়ে খেলেছে তারা। স্বচ্ছল পাকিস্তানি পরিবারে বিদেশে পঠনপাঠনে সমস্যা ছিল না কখনোই।
বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বছরেই শাইজা একটা মেয়েদের ক্রিকেট দল তৈরি করলেন। এখন তো পাকিস্তান সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে আধুনিক হয়ে গেছে। একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, চিন্তা কী! জাহির আব্বাসের নেতৃত্বে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের একটা প্রতিপক্ষও ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু বাধ সাধল সমাজ, প্রশাসন। উলেমাদের বাধা এল, মৃত্যুর হুমকি এল।
করাচির পুলিশ কমিশনার শাইজাদের ডেকে সতর্ক করলেন, খেলা বাতিল করো! নাহলে যে ধর্মীয় সংগঠনগুলো হামলা করবে নাকি শাইজা শরমিনের বাড়ি। আট হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হল সুরক্ষার জন্য। দর্শকশূন্য করাচির স্টেডিয়ামে খেলা হল। খেলা শেষ হতেই দুই মেয়ের বাবা পরামর্শ দিলেন, সোজা ইংল্যান্ডে ফিরে যাও। বেনজির থাকুন ছাই না-থাকুন, পাকিস্তানি পৃথিবী এখনও তৈরি নয় মেয়েদের ক্রিকেট মাঠে সুযোগ দিতে।
সময় পেরিয়ে যেতে থাকল, শাইজা আর শরমিন ইংল্যান্ডেই খেলতে শুরু করল। শাইজা প্রথম অ-ইংরেজ হিসেবে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়ক হলেন। পরে দুজনেই মিডলসেক্স কাউন্টির দলে নাম লেখালেন।
পাঁচ বছর কেটে গেল, সালটা ১৯৯৩। শাইজা আর শরমিন লর্ডসে, প্রত্যক্ষ করলেন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ড জিতে নিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। তখন আবার সেই সুপ্ত ইচ্ছেটা চাগাড় দিল। শাইজা আর শরমিন দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পরবর্তী বিশ্বকাপে তাঁদের খেলতেই হবে। যে-কোনো সাধারণ মানুষ পাঁচ বছর আগের কথা মনে রেখে ইংল্যান্ডে বসবাস করে, নাগরিকত্ব নিয়ে ইংল্যান্ডের হয়েই খেলার চেষ্টা করবে। শাইজা বা শরমিন প্লেয়ার হিসাবে তো খারাপ ছিলেন না। কিন্তু না, যাঁদের যুদ্ধ জয়ের ইচ্ছা থাকে, তাঁরা শত প্রতিকূলতাতেও রণক্ষেত্রের দিকেই আগুয়ান হন।
তখন মেয়েদের ক্রিকেট পেশাদার ছিল না। আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট কাউন্সিল তখন মেয়েদের ক্রিকেট চালাত। সালটা ১৯৯৬; শাইজা জানতে পারলেন যে, ১৯৯৭-এর বিশ্বকাপ খেলার জন্য, তাঁকে প্রথমেই একটা দল তৈরি করতে হবে, এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের স্বীকৃতি পেতে হবে। বেশ কথা। শাইজা দেশে ফিরে প্রথমেই, উইমেন’স ক্রিকেট কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন অফ পাকিস্তান (ডব্লিউসিসিএপি) তৈরি করে পিসিবির অনুমোদন নিলেন।
এবারে দল গঠন করতে হবে। এইখানে, এই প্রায় কাহিনির মতো ঘটনাপ্রবাহে প্রবেশ হল আর-এক করাচির মেয়ে কিরণ বেলুচের। কিরণের বাবা পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন। কিরণও যথেষ্ট ভালো ব্যাট করেন। মোটে ১৮ বছর বয়স। তিনি সুযোগ পেলেন, যখন শাইজা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দল গঠন করলেন। কিরণকে সহ-অধিনায়ক করে দেওয়া হল সরাসরি।
কিরণ, শাইজা, শরমিন আর বাকিদের নিয়ে দল তৈরি হল। নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলারও ব্যবস্থা হল। শাইজাদের সাহায্য করলেন আর-এক মহিলা, তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী অনিতা গুলাম আলি। সরকারের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে পাকিস্তানি নারী ক্রিকেট দল প্রথমবারের জন্য একদিনের ম্যাচ খেলতে গেল তাসমান সাগরপার। যদিও সব ম্যাচ হারল তারা, কিন্তু তাতে কী!
কিরণ বেলুচ একটি সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে বলছেন, ‘আমাদের শারীরিক ভাবে দক্ষ ও সক্ষম খেলোয়াড় দরকার ছিল। ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা থাকুক ছাই না-থাকুক। তাই হকির মেয়েরা প্রাধান্য পেল, এমনকি একজন মহিলা জ্যাভেলিন থ্রোয়ারকেও কষ্ট করে বোলিং শিখিয়ে দলে নেওয়া হল। এইভাবে গঠিত হল পাকিস্তানের প্রথম নারী ক্রিকেট দল।’ শাইজার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। সে উদ্দেশ্য সফল।
কিন্তু দেশে ফিরেই সমস্যা শুরু। না, এবারে কোনও ধর্মীয় সংগঠন বাঁশটা দেয়নি। কারণ এখন তো মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে খেলছে না। সমস্যাটা এল অন্য একটা কোণ থেকে। যার কথা কেউই ভাবেনি।
ঘটনা হল, শাইজারাই পাকিস্তানে প্রথম নারীদের ক্রিকেট নিয়ে আসেনি। ১৯৭৮-এই গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান উইমেন’স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (পিডব্লিউসিএ)। তারা অ্যাদ্দিন ধরে ঘুমোচ্ছিল, না আইডব্লিউসিসি, না পিসিবি কারও সঙ্গেই অ্যাফিলিয়েশন করেনি, আন্তর্জাতিক খেলা তো দূরস্থান। শাইজারা ইতোমধ্যেই অ্যাফিলিয়েশন, খেলা সবই করে ফেলেছেন। বিশ্বকাপের যোগ্যতাও পেয়ে গেছেন। কিন্তু তাতে কী! পিডব্লিউসিএ কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠে প্রতি পদে বাগড়া দিতে লাগল। তাদেরও যথেষ্ট রাজনৈতিক চেনাপরিচিতি, তার উপর পিসিবির প্রধান মজিদ খানের সঙ্গেও পরিচিত।
মজিদ খান তখন পাকিস্তান ক্রিকেটে গড়াপেটা নিয়ে জেরবার। তার গভীরে গিয়ে ক্রিকেটকে দূষণমুক্ত করতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু সেটা পুরুষদের ক্রিকেট, নারী ক্রিকেট নিয়ে মাথা ঘামাবার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই নেই তাঁর। ফলে প্র্যাকটিসের মাঠ, সরঞ্জাম, নেট ইত্যাদির ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাতে শুরু করলেন। এদিকে সময় বয়ে যাচ্ছে। প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়াও হচ্ছে না। পিডব্লিউসিএ-র প্রতিবাদে ডব্লিউসিসিএপি-র সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আশা তো শেষ এভাবে হয় না।
সম্পূর্ণ অন্য জায়গায় ভাগ্য দরজা খুলে দিল। ভদ্রলোকের নাম মহম্মদ সৈয়দ খান। শাইজা, শরমিনের বাবা। তাঁর এলাহি কার্পেটের ব্যবসা, করাচির উপকণ্ঠে টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল সহ বিশাল বাংলো। সেই বাংলার দেওয়াল ভেঙে তৈরি হল ডরমেটরি, টেনিসকোর্টে অ্যাস্ট্রোটার্ফ পেতে প্র্যাকটিসের জায়গা তৈরি হল। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এল বোলিং মেশিন। সৈয়দ খান ব্যবস্থা করলেন সমস্তকিছুর, সরঞ্জাম, পোশাক, খাবারদাবার, যাতায়াতের টিকিট, থাকার ব্যবস্থা। নিজের কারখানার মাঠটাকে ক্রিকেট পিচ বানালেন করাচির গদ্দাফি স্টেডিয়ামের কিউরেটরকে দিয়ে।
শাইজা, শরমিন বা বেলুচ যেমন ধনী পরিবার থেকে এসেছিলেন, তেমন তো সবার ক্ষেত্রে নয়। দেশের এদিক-ওদিক শহরতলি, গ্রাম থেকে মেয়েরা নির্বাচিত হয়েছিল, তাদের বাবা-মায়েরা মেয়েকে নিয়ে আসত, মেয়ে যে ক্রিকেটপাগল। সুবিধাও হয়েছিল সৈয়দ খানের বাংলোয় সমস্ত ব্যবস্থা হওয়ায়, বাবা-মায়েরা মেয়েদের ভরসা করে ছাড়তেও পারছিল।
কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তো বাপ-মা রূপকথা লেখার দায়িত্ব নেন না। সাজ্জিদা শাহ, মাত্র বারো বছর বয়সে পাকিস্তানের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু বাপ-মা বাধ সাধেন যে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না। সাজ্জিদা, মাত্র বারো বছরের মেয়ে, ভুখ হরতাল করে বসেন। সাত দিন না খেয়েদেয়ে বাপমার কাছ থেকে বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র আদায় করে নেন। শাইজাদের কৃতিত্ব এখানেই শেষ নয়। দল গঠন করতে তো সারা দেশ ঘুরে বেরিয়েইছিলেন, সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান স্পোর্টস কমিশনের সহায়তায় জোডি ডেভিস নামের এক অস্ট্রেলীয় কোচকে ট্রেনিং দেবার জন্য নিয়েও আসেন তাঁরা।
কিন্তু রূপকথা কি অত সহজে লেখা যায় নাকি? পিডব্লিউসিএ কি ছেড়ে দেবার পাত্র? তাদেরও উপরমহল তক যোগাযোগ। ১৯৯৭-এর ভারতে বিশ্বকাপের ঠিক আগেই প্রতিটি খেলোয়াড়কে পাকিস্তান সরকারের এক্সিট কন্ট্রোল লিস্টে ঢুকিয়ে দিল তারা। সেই তালিকায় নাম থাকলে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু শাইজারা সুযোগটা নিলেন।
আসলে তখন ইন্টারনেটের যুগ নয়, লাহোর ইসলামাবাদ থেকে তালিকা আসতে আসতে হয়তো তাঁরা ভারতের বিমানে চড়ে বসবেন। এই আশায় তাঁরা ঢিপঢিপ বুক নিয়ে, এয়ারপোর্ট, ইমিগ্রেশন, চেক ইন পেরিয়ে প্লেনে চড়লেন। ভারতের মাটিতে যখন তাঁরা প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছেন তখন সারা স্টেডিয়াম ফেটে পড়ছে হাততালিতে, বীরের সম্মান পাচ্ছেন শাইজারা। সব ম্যাচ হারলেন, তাতে কী! অংশগ্রহণেই যেখানে অর্ধেক যুদ্ধজয়, সেখানে হারজিত তো পিছিয়ে যায়ই।
এরপর পিছনে তাকাতে হয়নি। কিরণ বালোচ তখন বিশ্বস্তরীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে উঠে আসছেন। ২০০১-এ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয়। তারপরে এল ২০০৩। তদ্দিনে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্যবহার করছে পাকিস্তানি মহিলা ক্রিকেট দল। অস্ট্রেলিয়ায় যা তৈরি হয়।
কিরণ বেলুচের জন্য ব্যাট নিজে হাতে বেছে দিলেন শাইজা। তার পরের বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এল পাকিস্তানে। সাতটি একদিনের ম্যাচ খেলতে এবং তার সঙ্গে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি টেস্ট। চারদিনের হলেও টেস্ট। করাচির গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শাইজা টসে জিতে ব্যাট নিলেন। কিরণের উপর নির্দেশ ছিল, যতক্ষণ সম্ভব ব্যাট করতে হবে। প্রথম উইকেটে ওঠে ২৪১, সাজ্জিদা শাহ ৯৮ করে আউট হন। কিরণ দিনের শেষে ১৩৪ নটআউট।
পরের দিন দ্রুত চার উইকেট পড়ে গেল। ২৪১/১ থেকে ২৭৫/৫। শাইজা এলেন উইকেটে। ভরসা দিলেন কিরণকে। কিরণ যখন ২০০ ছুঁলেন, তখনও সঙ্গে ছিলেন শাইজা। মিতালি রাজের বিশ্বরেকর্ড ২১৪ যখন ভাঙলেন কিরণ, তখনও অপর প্রান্তে শাইজা। শেষে ম্যারাথন ইনিংস থামল কিরণের। কিরণ বালোচ নারী ক্রিকেটের সর্বাধিক রানের ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড করে তবে থামলেন। শাইজা হ্যাটট্রিক-সহ ম্যাচে নিলেন ১৩ উইকেট।
এরপর আরও দুটো টেস্ট খেলেন শাইজারা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ২০০৫-এ আইডব্লিউসিসি আইসিসির সঙ্গে মিশে গেল, মহিলা ক্রিকেটও পিসিবির অধীনে হয়ে গেল। আর ডব্লিউসিসিএপি-র স্বীকৃতি ঘুচে গেল। কিন্তু তদ্দিনে এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে শাইজাদের সঙ্গে পিসিবি কাজ করবে না, করতে পারবে না। পৌরুষে ঘা লেগেছে কিনা।
শাইজা বা শরমিনের বয়স যথেষ্ট হয়েছে, কিন্তু কিরণ বালোচ তখন মাত্র ২৫। তবুও তিক্ততায় খেলা ছেড়ে দিলেন। এরপরের পথ তো অন্য পথ, যে-পথ বেয়ে সানামিররা উঠে আসেন, পাকিস্তান নারী দল হয়তো এখনও কোনও টুর্নামেন্ট জেতেনি, কিন্তু সানামির হয়ে যান বিশ্বের এক নম্বর ওয়ানডে বোলার।
পাকিস্তান নারী ক্রিকেট টিম যে-গতিতে উঠে আসছে, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ভারত অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু তখন আমরা শাইজা খান বা কিরণ বেলুচকে মনে রাখব তো? কিরণ বেলুচ না হয় এখনও এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসাবে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। কিন্তু পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে যখন একটি মেয়ে ক্রিকেট বল হাতে তুলে নেবে বা ব্যাট মাটিতে ঠুকতে থাকবে সারা বিশ্বের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, অলক্ষে তার কাঁধে হাত রাখবেন শাইজা খান। চওড়া কাঁধে যিনি পাকিস্তানে মহিলা ক্রিকেটের ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে।
কৃতজ্ঞতা: ময়দানী স্ক্র্যাপবুক