ফিরে এসেছি, আমিই নয়া দ্রগবা

এক দশক আগেও একবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল চেলসির আঙিনায় পা পড়েছিল বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকুর। তখন তিনি আজকের মত প্রকাণ্ড তারকা নন, উঠতি তরুণ ফটবলার কিংবা সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচলে থাকা এক স্ট্রাইকার। স্টামফোর্ড ব্রিজে এবার যখন এলেন বয়সটা তখন ২৮ পেরিয়ে ২৯- এর ঘরে। লুকাকুও অনেকটা পরিপক্ক। ইংল্যান্ডের দলটির সঙ্গে চুক্তিতে সই করে বেলজিয়ান আন্তর্জাতিক ফুটবলার বললেনও সেভাবে, ‘আমি এখানে এসেছিলাম শিশু হিসেবে, এখন এসেছি অভিজ্ঞতা আর পরিপক্কতা নিয়ে।’

রোমেলু লুকাকুর ফুটবলে হাতেখড়ি তার স্কুলে। ছয় বছর বয়সে বাবা রজার লুকাকুকে বলে-কয়ে রুপেল বোম নামে নিজ দেশের চতুর্থ বিভাগে খেলা ক্লাবে ভর্তি হন তিনি। সেই যে পথচলা, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই স্ট্রাইকারকে। উইন্টাম, লিয়ার্স, অ্যান্ডারলেখট হয়ে চেলসি। এরপর ওয়েস্ট ব্রোমউইচ, এভারটন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইন্টার মিলান হয়ে আবার ব্লুজদের দলে। মাঝখানে পতনের চেয়ে উত্থানের গল্পই বেশি তার।

চেলসির সঙ্গে ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চুক্তি করে একটি রেকর্ডেও ঢুকে গেছে লুকাকুর নাম। ক্যারিয়ারজুড়ে দল বদল করার ফির হিসাবে তিনি এখন সবচেয়ে দামি ফুটবলার। এই রেকর্ড গড়তে লুকাকু পেছনে ফেলেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমার জুনিয়রকে।

সান্তোস থেকে বার্সেলোনা, আবার বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যাওয়া নেইমারের সর্বমোট ট্রান্সফার ফি প্রায় ৩১০ মিলিয়ন ইউরো। ট্রান্সফার ফির হিসাবে লুকাকু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি ফুটবলারদের মধ্যেও এখন দ্বিতীয় স্থানে। প্রায় ১১৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়মূল্য নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে অ্যাস্টন ভিলা থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে আসা জ্যাক গ্রেয়ালিশ।

বলছিলাম চেলসি আর রোমেলু লুকাকুর কথা। আবার সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি লুকাকুর পছন্দের ক্লাবের মধ্য অন্যতম। বেশ কয়েকটি উপলক্ষ্যে এই বিষয়টি বলেছেন ২৮ বছর বয়সি তারকা। ফুটবলে লুকাকুর আদর্শ কিংবা ফেবারিট তারকা; যেটাই বলুন না কেন, তিনিও এই চেলসির সাবেক ফুটবলার দিদিয়ের দ্রগবা।

ফুটবল বিষয়ক গণমাধ্যম গোল.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকাকু ২০১১ সালে বলেন, ‘যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমার বাবাই আমার আদর্শ ছিলেন। পরে আমি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে অনুসরণ করি। একটা সময় মনে হলো দ্রগবার সাথে আমার অনেক কিছু মিলে। আমার মধ্য আমি তার সব কিছু দেখতে পাই।’

২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চেলসির হয়ে খেলেছেন আইভরি কোস্টের সাবেক তারকা দ্রগবা। ২০১২ সালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচটি হয়তো তার ক্যারিয়ার সেরা হয়ে থাকবে। ৮৮তম মিনিটে তার গোলেই ম্যাচে সমতা এসেছিল। টাইব্রেকারে চেলসি ওই ম্যাচে জিতে ৪-৩ গোলে, শেষ শুট আউট নিয়ে চেলসিকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এনে দেন দ্রগবা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছাড়াও তিনি ইংল্যান্ডের ক্লাবটির হয়ে ৪টি লিগ, ৪টি এফএ কাপ, ৩টি লিগ কাপ ও ২টি কমিউনিটি শিল্ডের ট্রফি জিতেছেন। লুকাকুরও এখন দ্রগবা হয়ে ওঠার পালা। বেলজিয়ান তারকা যেমন বলেছেন, এবেলা পরিপক্ক হয়ে ফিরে এসেছেন তেমনি আত্মবিশ্বাসের পারদটাকে চাঙ্গা করে চেলসিকেও জানিয়ে দিতে পারেন – ‘আবার ফিরে এসেছি, আমিই এই তল্লাটের নয়া দ্রগবা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link