বর্তমানে ক্রিকেট এমন একটি পেশা যেখানে সহজেই মোটা অংক আয় করছেন ক্রিকেটাররা। ম্যাচ ফি কিংবা বেতন সবকিছুই বেশ ভালো অংকের। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলেও অতিরিক্ত মোটা অংক আয় করতে পারছেন অনেক ক্রিকেটারই।
তবে, একটা সময় ক্রিকেটারদের এখনকার মতো খুব বেশি আয় উপার্জন ছিল না। তার উপর অনেকেরই ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেমে গেছে অল্পতেই। যার কারণে সাবেক অনেক ক্রিকেটারকেই পরিবার চালাতে বেছে নিতে হয়েছে উপার্জনের ভিন্ন পথ। বলাই বাহুল্য, রাস্তাটা সহজ ছিল না তাঁদের জন্য।
- জনার্দন নাভলে – ভারত
১৯৩২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জনার্দন নাভলে। সে সময় ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি কত টাকা আয় করেছেন তা অনুমান করা না গেলেও শেষ বয়সে তিনি অর্থের অভাবে বেশ ভুগেছেন।
অনেকের মতে, পুনেতে একটি সুগার মিলে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ভারতের হয়ে ২ টেস্টে ৪২ রান করেন নাভলি। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ ম্যাচে ৯ ফিফটিতে আছে প্রায় ২ হাজার রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নাভলি ক্যারিয়ার শেষে বেশ কষ্টেই দিন যাপন করেছেন।
- আরশাদ খান – পাকিস্তান
সাবেক পাকিস্তানি স্পিনার আরশাদ খান জাতীয় দলের হয়ে ৯ টেস্ট এবং ৫৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এছাড়া ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) লাহোর বাদশাহর হয়েও খেলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং!
তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অবসরের পর আর্থিকভাবে বেশ কষ্টে ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে উবারে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেছেন সাবেক এই পাকিস্তানি স্পিনার। ২০২০ সালে তিনি পাকিস্তানের নারী দলের বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পান।
- ম্যাথু সিনক্লেয়ার – নিউজিল্যান্ড
টেস্ট অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সাবেক নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ম্যাথু সিনক্লেয়ার। ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর আয় রোজাগারহীন অবস্থান ছিলেন বেশ কিছু সময়। আর্থিক দুরবস্থার প্রভাব ফেলে তাঁর সাংসারিক জীবনেও।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ না করায় কোনো কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। এরপর নেপিয়ারে এক রিয়েল স্টেট ফার্মে বিক্রয়কর্মী হিসেবে যোগ দেন তিনি। সেই আয় থেকেই কোনোমতে পরিবার চালিয়েছেন সিনক্লেয়ার।
- অ্যাডাম হোলিওক – ইংল্যান্ড
সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যাডাম হোলিওক বেশ কিছু সময় খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে ৪ টেস্ট এবং ৩৫ ওয়ানডে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ২০০২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর বড় ভাই।
এরপর ২০০৭ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পারিবারিক বিজনেসে মনোনিবেশ করেন অ্যাডাম। ২০০৮ সালে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিলে আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এর তিন বছর পরই তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হন। তবে এখন তিনি একজন মার্শাল আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। যার মাধ্যমে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন।
- ক্রিস কেয়ার্নস – নিউজিল্যান্ড
এই তালিকার সবচেয়ে বড় নামটি হলো সাবেক কিউই অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস। তিনি এই তালিকায় আছেন সেটা জেনেও অনেকেই অবাক হবেন! ২০১০ সালে তিনি ডায়মন্ড ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলেন। তার কয়েক বছর বাদেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাবেক চেয়ারম্যান ললিত মোদির বিপক্ষে এক কেইস জয়ে বেশ কিছু অর্থও আয় করেন তিনি।
এরপর ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনগত কাজেই তাঁর সম্পদের অনেকাংশই ব্যয় হয়। বেশ কিছুদিন তিনি ট্রান্স-তাসমানে বাস ডিপো পরিষ্কার করছিলেন! এছাড়া ট্রাক ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাবেক এই ক্রিকেটারকে অস্ট্রেলিয়ার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তবে বর্তমানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাঁর।