গত বছর পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার একটি টেস্ট ম্যাচে কমেন্ট্রি বক্স থেকে নাসির হুসেইন বলছিলেন, ‘আমরা ফ্যাব ফোরের কথা বলি (বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট)। কিন্তু এটা হওয়া উচিৎ ফ্যাব ফাইভ এবং বাবর আজমের নামটাও এখানে যোগ করুন।’ গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানও বলছে বাবর আজমও থাকতে পারেন এই ফ্যাব লিস্টে। সেটা হতে পারে ফ্যাব ফাইভ কিংবা ফোর।
রঙিন পোশাকের বাবর আজমকে নিয়ে কারো মনেই কোন দ্বিধা নেই। সাদা বলের ক্রিকেটে এই সময়ে ক্রিকেট বিশ্বের সফলতম ব্যাটসমানের নাম বাবর আজম। শর্টার ফরম্যাটের এই সাফল্য হয়তো ঢেকে দেয় টেস্ট ক্রিকেটের বাবর আজমকেও। অথচ টেস্ট ক্রিকেটের শুরুটা সাদামাটা হলেও গত কয়েক বছরে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সেরাদের একজন।
২০১৯ সালের শুরু থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন বাবর আজম। এই সময়ের মধ্যে তাঁর ঝুলি থেকে এসেছে চারটি সেঞ্চুরি। এই সময়ে অন্তত এক হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়ে একটি তালিকা করলে দেখা যায় তাঁর উপরে আছেন মোট চার জন ব্যাটসম্যান। এই সময়ে বাবর আজম ৫৩.৮২ গড়ে করেছেন ১২৩৮ রান।
ফ্যাব ফোরের দুইজন গড়ে তাঁর চেয়ে এগিয়ে আছেন। কেন উইলিয়ামসন রান করেছেন ৬৮.২৫ গড়ে। ওদিকে স্টিভ স্মিথও রান করেছেন ৬৩ গড়ে। তবে ফ্যাব ফোরের বাকি দুই ব্যাটসম্যান জো রুট ও বিরাট কোহলি তাঁর থেকে পিছিয়ে আছেন। জো রুট এই সময়ে রান করেছেন ৪৮.৯ গড়ে।
ওদিকে বাবর আজমের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিরাট কোহলি এই সময়টাতে রান করেছেন মাত্র ৩৯.১৯ গড়ে। বিরাট কোহলি তাঁর সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৯ সালের নম্ভেম্বরে। আর ২০১৯ এর নভেম্বর থেকে এই পর্যন্ত বাবর আজমের ব্যাট থেকে এসেছে চারটি সেঞ্চুরি।
ফলে সংখ্যা বলছে বাবরকে এই ফ্যাবের তালিকা থেকে দূরে রাখা যায় না। তাঁর ব্যাটিং গড় দেখলে বোঝা যায় তালিকার বাকি ব্যাটসম্যানদের সাথে সমানে সমান পাল্লা দিচ্ছেন। বরং বাকি চারজনের থেকে এই সময়ে লড়াইটা বেশি করতে হয়েছে বাবর আজমকেই। বাকি চারজনের দলের কেউ না কেউ এই ১০০০ রানের তালিকায় আছেন। তবে পাকিস্তানের হয়ে বাবর আজম বাদে আর কেউ এই সময়ে করতে পারেননি ১০০০ রান।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানের অন্য ব্যাটসম্যানরা তাঁকে সেভাবে সাপোর্ট করতে পারেননি। ২০১৯ সাল থেকে পাকিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত গড় মাত্র ৩২.৫৪। ওদিকে বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথ কিংবা জো রুটদের সবাই তাঁর থেকে ভালো পার্টনার পেয়েছেন।
ইংল্যান্ডে জো রুটের সাথে টপ অর্ডারে সেভাবে কেউ পারফর্ম না করলেন বেন স্টোকস তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। কোহলির সাথে রোহিত শর্মা, আজিঙ্কা রাহানেরা ছিলেন। ফলে তাঁদের কাউকেই একা লড়ে যেতে হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো ব্যাটিং পার্টনার কতটা জরুরি সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে আশার কথা হচ্ছে ফাওয়াদ আলমের মত সলিড মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের আগমন ঘটেছে। এছাড়া মোহম্মদ রেজওয়ানকে বাবর আজমকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারবেন। এগুলো ব্যবহার করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটেও ব্যাটিং গ্রেট হওয়ার পথেই এগোচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান।
বাবরের আরেকটি বড় ব্যাপার হচ্ছে যেকোন কন্ডিশনে রান করতে পারা। ২০১৯ সাল থেকে রোহিত শর্মা ব্যাটিং গড়ে বাবর আজমের থেকে এগিয়ে থাকলে তাঁর অধিকাংশ রানই এসেছে ঘরের মাঠে। দেশের বাইরে তেমন বড় ইনিংস নেই। তবে বাবর ক্ষেত্রে সেই অভিযোগ তোলা যাবেনা।
অথচ টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের প্রথম দুই বছর পর বাবর আজমের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২৩.৭৫। তবে ২০১৮ সাল থেকে সব কন্ডিশনেই তাঁর ব্যাটিং গড়ে বিশাল পার্থক্য এসেছে। এশিয়ায় সবমিলিয়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ৫৫.৪৭। তবে গত তিন বছরে সেটা পৌছেছে ৭১.১৫-এ। ইউরোপে ২০১৮ সালের আগে না খেললেও এরপর তিনি সেখানে রান করেছেন ৫৬ গড়ে। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে রান করেছেন ৫২.৫ ব্যাটিং গড় নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাঁর ব্যাটিং গড় ২৩.৩৩ থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন ৫৩.৩ এ।
ফলে এই সংখ্যা গুলো প্রমাণ দিচ্ছে যেকোন কন্ডিশনে, যেকোন দলের বিপক্ষেই তিনি অপ্রতিরুদ্ধ। এছাড়া এই সময়ে তাঁর বড় ইনিংস খেলার প্রবণতাও অনেক বেড়েছে। হাফ সেঞ্চুরি গুলোকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছর ১০ হাফ সেঞ্চুরির পাশে ছিল মাত্র ১ টি সেঞ্চুরি। এদিকে ২০১৯ থেকে ৮ হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে আছে ৪ সেঞ্চুরি।
এই সবে একটা কথা পরিষ্কার যে ফ্যাব ফোর হোক কিংবা ফাইভ দরজাটা তিনি বেশ ভালো ভাবেই টোকাচ্ছেন কিংবা ভাঙছেন। মার্টিন ক্রো চলে গেছেন, থাকলে তাঁর এই ফ্যাব ফোর থিওরি নিশ্চয়ই ভেঙে ফ্যাব ফাইভ করে দিতেন।