অতিমানবীয় আগ্রাসনের অধিপতি

মাঠে ম্যাচ চলাকালীন যেকোনো পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দলের অধিনায়ক। ক্রিকেট মাঠে বিচক্ষণ, বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব অনেক ক্রিকেটারই নিজেদেরকে নিয়ে গেছেন সেরাদের তালিকায়। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন অধিনায়ক। ম্যাচের জয় কিংবা পরাজয়ে একজন অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন দলকে।

আর আধুনিক নেতৃত্বে, অধিনায়ককে যখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয় – তেমনই আবার প্রয়োজনে আগ্রাসীও হতে হয়। কিছু কিছু অধিনায়ক এই আগ্রাসনকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। মাঠে তাঁদের আগ্রাসী সব সিদ্ধান্তে বাজিমাৎ করেছে দলগুলো। সেই আগ্রাসনের অনন্য অধিনায়কদের নিয়েই এবারের আয়োজন আমাদের।

  • ইমরান খান (পাকিস্তান)

ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বের কারণেই ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে পাকিস্তান। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসদের সাথে পেস অ্যাটাকের নেতৃত্বে ছিলেন ইমরান খান। সেই সাথে ব্যাট হাতে অনবদ্য পারফরম্যান্স আর তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে সেবার শিরোপা জিতে পাকিস্তান।

৪৮ টেস্ট এবং ১৩৯টি ওয়ানডে পাকিস্তানের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন ইমরান। পাকিস্তানের হয়ে ৮৮টি টেস্ট এবং ১৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন এই পাকিস্তানি গ্রেট। সাদা পোশাকে বল হাতে ৩৬২ উইকেটের পাশাপাশি রঙিন জার্সিতে নিয়েছেন ১৮২ উইকেট। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। ৩৭.৬৯ গড়ে টেস্টে করেছেন ৩৮০৭ রান। অপরদিকে, ওয়ানডেতে করেছেন ৩৭০৯ রান। ১৯৯২ সালে দেশের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেন এই কিংবদন্তি।

  • স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের কথা আসলে উপরের দিকেই থাকবে স্টিভ ওয়াহর নাম। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সাত বছর অজিদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়াহ। ১৯৯৯ সালে তাঁর অধীনেই অজিরা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৭ টেস্টে নেতৃত্ব দেন ওয়াহ। যার মধ্যে ৪১ টেস্টে জয় পায় অজিরা।

তাঁর নেতৃত্ব দেওয়া ১০৬ ওয়ানডেতের মাঝে অজিরা জয় পায় ৬৭ ম্যাচে। দুই দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬৮ টেস্ট এবং ৩২৫ ওয়ানডে ম্যাচে খেলেছেনন স্টিভ ওয়াহ। টেস্টে ব্যাট হাতে প্রায় ১১ হাজার রানের পাশাপাশি ওয়ানডেতে করেছেন ৭৫৬৯ রান। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান এই অজি তারকা।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)

লর্ডসে ব্যালকনিতে ইংল্যান্ড বধের পর সৌরভ গাঙ্গুলির সেই ঘুরপাক জার্সির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ভারতের জার্সি গায়ে ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ খ্যাত গাঙ্গুলি জিতিয়েছেন অনেক ম্যাচ। তাঁর নেতৃত্বে বহু ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়ে জয় তুলে নিয়েছে ভারত। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৬ বছর ভারতের হয়ে অধিনায়কত্ব করেন গাঙ্গুলি।

৪৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে জয় পাইয়েছেন ২১ টেস্টে। অপরদিকে, ১৪৭ ওয়ানডেতে তাঁর অধীনে ভারত জয় পেয়েছে ৭৬ ম্যাচে। সৌরভের অধীনেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে জয় পায় ভারত। ভারতের জার্সি গায়ে ১১৩ টেস্ট এবং ৩১১ টি ওয়ানডে খেলেন তিনি।

যেখানে সাদা পোশাকে ব্যাট হাতে ৭ হাজারের বেশি এবং ওয়ানডেতে ১১ হাজারের বেশি রান করেছেন গাঙ্গুলি। ২০০৮ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। এখন তিনি বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

তর্ক-সাপেক্ষে শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয় তথা ক্রিকেট বিশ্বের সেরা অধিনায়ক হিসেবেই পরিচিত সাবেক অজি তারকা রিকি পন্টিং। যিনি পুরো ক্যারিয়ারেই কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে কখনো পেছপা হননি। ২০০৩ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপে অজিদেরকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ক্রিকেট পাড়ায় তিনি ‘পান্টার’ নামেই পরিচিত ছিলেন।

৭৭ টেস্ট এবং ২৩০ টি ওয়ানডেতে অজিদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে তাঁর অধীনে ৪৮ টেস্ট এবং ১৬৫ ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে অজিরা। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক হলেন পন্টিং। পন্টিংয়ের অধীনে ২০০৬-০৭ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-০ তে জয় পায় অজিরা।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬৮ টেস্ট এবং ৩৭৫ টি ওয়ানডে ম্যাচে খেলেছেন পন্টিং। টেস্টে ১৩৩৭৮ রানের পাশাপাশি ওয়ানডেতেও তিনি ১৩৭০৪ রানের মালিক! ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন তিনি।

  • বিরাট কোহলি (ভারত)

ক্রিকেট পাড়ায় সবচেয়ে আগ্রাসী অধিনায়ক হিসেবেই পরিচিত ভারতীয় কাপ্তান বিরাট কোহলি। মহেন্দ্র সিং ধোনির পর ২০১৪ সালে টেস্টে দায়িত্ব পান তিনি। কোহলি বরাবরই মনে করেন তার দল যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো দেশের বিপক্ষেই জেতার সামর্থ্য রাখে। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে সেরাদের তালিকায় নেওয়ার সাথে সাথে অধিনায়ক হিসেবেও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।

ভারতের হয়ে ৬8 টেস্ট এবং ৯৫ ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিরাট। যার মধ্যে ৪০ টেস্ট ও ৬৫ ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখেছে ভার‍ত। ৫০ টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন ৩০ ম্যাচে! ব্যাট হাতে ৯৪ টেস্টে ৭৬০৯ রান করেছেন তিনি।

এছাড়া এখন পর্যন্ত ২৫৪ ওয়ানডেতে ১২ হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও তিনি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এই ফরম্যাটে ব্যাট হাতে করেছেন ৩১৫৯ রান। এখন পর্যন্ত ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে আগ্রাসী অধিনায়ক হিসেবেই তিনি পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link