ওভালে চতুর্থ টেস্টে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে ভারত। ওলি রবিনসন আর ইনজুরি কাটিয়ে সিরিজে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া ক্রিস ওকসের বোলিং দাপুটে মাত্র ১২৭ রানে ৭ উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম দিনেই আবারো ইংলিশ পেস অ্যাটাকের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং শিবির। তবে, অধিনায়ক বিরাট কোহলির ফিফটি ভারতকে সম্মানজনক একটা অবস্থানে এনে দেয়। যদিও সেঞ্চুরির খরা এবারও কাটাতে পারেননি বিরাট।
দ্রুত ৭ উইকেট হারানোর পর প্রথম ইনিংসে ভারতের গুড়িয়ে যাওয়াটা তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ড্রেসিং রুমে বিরাট-রোহিতরাও অপেক্ষমান ফিল্ডিংয়ে নামবেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উমেশ যাদবের সাথে আরেক প্রান্তে ছিলেন শার্দুল ঠাকুর। দলের কঠিন পরিস্থিতিতে ঠিক ভারতের জন্য ত্রানকর্তা হিসেবে রুপ নিলেন শার্দুল ঠাকুর!
শুরু থেকেই কাউন্টার অ্যাটাকে ব্যাট চালাতে লাগলেন ঠাকুর। ক্রিস ওকস, রবিনসনদের যেনো পাত্তাই দিচ্ছিলেন না তিনি। ব্যাটে বল আসছে মানেই সেটিকে বাউন্ডারির বাইরে নিয়ে ফেলছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির আমেজ। একপ্রান্তে উমেশ যাদব ডিফেন্স করছিলেন; আরেকপ্রান্তে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করছিলেন শার্দুল।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩১ বলেই দুর্দান্ত ফিফটি তুলে নেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ৩১ বলে ফিফটি! সেটিও ইংলিশ কন্ডিশনে! যেখানে ভারতের স্বীকৃত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাই উইকেটে টিকে থাকার কোনো সূত্র মেলাতে পারছিলেন না।
ওভালের মাটিতে দ্রুততম টেস্ট ফিফটি করেন শার্দুল ঠাকুর। সেই সাথে অষ্টম উইকেটর জুটিও পৌঁছে যায় পঞ্চাশের কোটায়। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় প্রায় ১৭১ স্ট্রাইক রেটে তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। টেস্টে এটা ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ১৯৮২ সালে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন স্বয়ং কপিল দেব।
কপিলকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও শার্দুল ছাড়িয়ে গেছেন ইয়ান বোথামকে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এতদিন তৃতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি ছিল বোথামের। ১৯৮৬ সালে ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন বোথাম। এবার সেটাকে টপকে গেলেন ঠাকুর। তাঁর আগের দু’জন হলেন ফোফি উইলিয়ায়ামস ও টিম সাউদি। এরা দু’জন যথাক্রমে ২৮ ও ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। প্রথমটা ১৯৪৮ সালের ঘটনা, পরেরটা ২০০৮ সালের।
খানিকটা সময় অতিবাহিত হবার পর টনক নড়লো। সামনেই তো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ! এক ঢিলে তিন পাখি মারার এর চেয়ে ভালো পন্থা হয়তো আর নেই। যদিও ব্যাপারটা নিছক মজার ছলেই বলা। তবে, শার্দুলের কৃপায় কিনা ভারত দেড়শোর গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যায় ১৯১ রানে। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৭ রানের এক পাওয়ারপ্যাক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ক্রিস ওকসের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে।
ঠাকুরের বিদায়ে বাকিরা কি তবে পথ চেয়ে রইবে? এক ওভারের মাথায়ই বাকি দু’জনও ঠাকুরের পথেই হাটা ধরলেন। ঠাকুরের অপ্রত্যাশিত কৃপায় ভারত প্রথম ইনিংসে সংগ্রহে নিলো ১৯১ রান। ঠাকুরের এই ইনিংসটা যেনো মিডল অর্ডারে টানা ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা ঋষভ পান্ত, আজিঙ্কা রাহানেদের ব্যর্থতা আরো বেশি হাইলাইট করছিলো।
ব্যাটিংয়ের পর এবার বোলিংয়ের পালা। এই গুরুদায়িত্বটা অবশ্য নিজের কাঁধেই নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। দলীয় ৬ রানেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশদের চাপে ফেলেন তিনি। এরপর রুটের ব্যাটে আবারো আশা জাগলেও ব্যক্তিগত ২১ রানে উমেশ যাদবের শিকার হয়ে ফেরত যান তিনি। ব্যাটিং অর্ডারে ইংলিশদের ভরসার মূল স্তম্ভ গুড়িয়ে দিয়েছেন উমেশ যাদব। ব্যাট হাতে ঠাকুরের ইনিংসে শক্ত পুঁজি পাওয়া ভারত বল হাতে চেপে বসেছে ইংলিশদের উপর।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ঐতিহাসিক গ্যাবায় টেস্ট অভিষেক। আর প্রথম ইনিংসেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া ভারতকে ৬৭ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন শার্দুল ঠাকুর।
হেডিংলি টেস্টে লজ্জাজনক ইনিংস ব্যবধানে হারের পর চতুর্থ টেস্টেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে ভারত। ঠাকুরের কৃপায় এই টেস্টে কি ঘুরে দাঁড়াবে ভারত? নাকি ঠাকুরের অবদানও ঢাকা পড়ে যাবে ভারতের ব্যর্থতার আড়ালে।