আপনি থাকছেন স্যার!

দলবদলের শেষ চমকটা হতে পারতেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজি’র এই গোলমেশিনের অনেক ইচ্ছে ছিল রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া। ইচ্ছেটা সেই শৈশবের, কিন্তু বর্তমান ক্লাব তাঁকে না ছাড়ার কারণে আরেকটা মৌসুম তাঁকে ফরাসি ক্লাবটিতে খেলতে হবে। এক মৌসুম আগে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল লিওনেল মেসির। ক্লাব সভাপতির সাথে বনিবনা না হওয়ায় ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েও বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে পারেননি।

দলবদলের শেষ চমকটা হতে পারতেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজি’র এই গোলমেশিনের অনেক ইচ্ছে ছিল রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া। ইচ্ছেটা সেই শৈশবের, কিন্তু বর্তমান ক্লাব তাঁকে না ছাড়ার কারণে আরেকটা মৌসুম তাঁকে ফরাসি ক্লাবটিতে খেলতে হবে। এক মৌসুম আগে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল লিওনেল মেসির। ক্লাব সভাপতির সাথে বনিবনা না হওয়ায় ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েও বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে পারেননি।

এবার যখন থাকবেন স্থির করলেন তখনি তাকে চলে আসতে হলো ফ্রান্সে। দ্বিতীয় বসতি গড়ে স্পেনেকে অনেকটা নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন। বাড়ি কেনা থেকে শুরু করে ছেলেদের স্কুল, সবইতো তার প্রিয় দেশটিতে। যেখানে ২১ বছর কাটিয়ে কান্না ভেজা চোঁখে বিদায় জানিয়ে আসতে হয়েছে। তবে নতুন ঠিকানা পিএসজিতে যে খুব সহজে মানিয়ে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ক্লাব সতীর্থ হিসেবে পাওয়া এমবাপ্পেকে হারাতে হারাতে যেন একটা মৌসুম খেলার সুযোগ হয়েছে মেসির। তবে ৩১ জুলাই ইউরোপিয়ান ক্লাব দলবদলের শেষদিনে এমবাপ্পে চমক না হয়ে নাম ওঠেছে আতোঁয়ান গ্রিজম্যান। তাঁকে পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে ফিরিয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। এর বাইরে পুরনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে যেতে পারা ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদোও একটা চমক হয়ে থাকবেন এবার।

পুরনো প্রিয় ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার আগেই জাতীয় দলের হয়ে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। যেখানে পেছনে ফেলেছেন ইরানের আলী দাইয়িকে। মেসির পর বার্সায় গ্রিজম্যান চলে যাওয়ার পর এটিকে ডাচ ক্লাব বানিয়ে ফেলেছেন কোচ রোনাল্ড কোম্যান। নিজ দেশের লুক ডি ইয়ংকে দলে নিয়েছেন। সেভিয়া থেকে এক বছরের জন্য ধারে তাকে দলে নিয়েছে কাতালানরা।

অবশ্য পারফরম্যান্স ভাল হলে পরবর্তীতে পাকাপাকিভাবে ডি ইয়ংকে দলে নিয়ে নিতে পারে বার্সেলোনা। বর্তমান সময়ের সেরা তিন ডাচ ফুটবলার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, লুক ডি ইয়ং ও মেমফিস ডিপেই এখণ বার্সার। ২০০ মিলিয়ন ইউরো দলবদলের প্রস্তাব দিলেও এমবাপ্পের ক্লাব পিএসজি রিয়ালের কাছে তাকে বিক্রি করতে রাজি হননি। অপর দিকে পিএসজি কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সর্বোচ্চ আয়ের ফুটবলার হওয়ার প্রস্তাব দেয়। যদিও ফরাসি এ তারকা ক্লাবের প্রস্তাবে এবারও রাজি হয়নি।

এর অর্থ চুক্তি শেষে আগামী মৌসুমে ফ্রি ট্রান্সফারেই রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাচ্ছেন এমবাপ্পে! দলবদলের শেষদিনে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে চেলসি থেকে দলে নিয়েছে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল নিগেসকে। শেষ দিনে কলোম্বিয়ান তারকা রাদামেল ফ্যালকাও দুই বছরের চুক্তিতে নাম লিখিয়েছেন রায়ো ভায়োকানোতে। তবে আলোচনায় তারা লিওনেল মেসি কিংবা রোনালদো থেকে যোজন যোজন দুরত্বে রয়েছেন।

সদ্য শেষ হওয়া দলবদলকে অবিশ্বাস্য আর পাগলাটেই বলতে হবে। আলোচিতদের মধ্যে ক্লাব বদলেছেন লিওনেল মেসি, ক্রিষ্টিয়ানা রোনালদো, সার্জিও রামোস, আতোয়ান গ্রিজম্যানদের মতো তারকা খেলোয়াড়রা। এমন ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে কেমন হলো দলগুলো হিসাব-নিকাশ, এখন সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। দলবদলে এবার সবচেয়ে বেশি চমক দেখানো দলের নাম পিএসজি।

সার্জিও রামোস, জিয়ানলুইজি ডোনারুমা, জিওর্জিনো উইনালদামদের মতো আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের দলে টানার পর ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মেসিকে নিয়ে আসে তারা। তাদের সবাইকেই ফ্রি ট্রান্সফারে আনাটাই সবচেয়ে বড় চমক। যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। মাঝে ইন্টার মিলান থেকে আশরাফ হাকিমিকে কিনে এনে শক্তি বাড়ায় তারা। শেষ দিকে নুনো মেন্দেসকে ধারে এনে শক্তি আরও কিছুটা বাড়িয়েছে পিএসজি। এছাড়া নানা নাটকের পর কিলিয়ান এমবা্েপ্পকে ধরে রাখতে সমর্থ হওয়াটা বড় সাফল্যই দলটির জন্য।

মৌসুমজুড়েই তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার যে গুঞ্জন ছিল সেটি আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। রিয়াল ও এমবাপ্পে দুই পক্ষই তার দলবদলের জন্য মরিয়া ছিলো। পিএসজির পর বড় চমকটা উপহার দেয় ইংলিশ ক্লাব ম্যানইউ। মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সময়ের আরেক সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে জুভেন্টাস থেকে দলে টেনে নেয় তারা।

এর আগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড জাডন সাঞ্চো ও রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রাফায়েল ভারানেকে এনে চমক দেখিয়েছিল স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসুনের উত্তরসূরীরা। যদিও শেষ দিনে উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমসকে ছেড়ে দিয়েছে তারা।
এদিকে খেলোয়াড় টানায় কোন চমক দেখাতে না পারলেও খেলোয়াড় ছাড়ায় এবার সেরা দলের নাম বার্সেলোনা! আর্থিক অসংগতির কারণে মেসিকে ছাড়া নিয়ে পুরো বিশ্বই নড়েচড়ে বসেছিল। এ মহাতারকাকে ছাড়ার পর শেষ দিনে এসে গ্রিজমানকেও ছেড়ে দেয় তারা।

এছাড়া এমারসন রয়্যাল, ইলিয়াস মোরিবা ও জুনিয়র ফিরপোর মতো উঠতি তরুণদের উপরও আস্থা হারিয়েছে দলটি। তবে ফ্রি ট্রান্সফারে সার্জিও আগুয়েরো, মেমফিস ডিপাই, এরিক গার্সিয়াদের মতো চেনা মুখদের দলে টানে তারা। বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্ধী রিয়াল দলের সেরা দুই ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস ও রাফায়েল ভারানেকে ছেড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে। সে ঘাটতি অবশ্য কিছুটা কমিয়েছে ফ্রি ট্রান্সফারে ডেভিড আলাবাকে টেনে।

তবে এমবাপ্পেকে দলে টানতে না পারাটা ব্যর্থতাই বলতে হবে দলটির জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিএসজির গোঁয়াতুর্মি কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এবারের দলবদলে আবার দারুণ কিছু সাইনিং করেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। বিশেষ করে শেষ দিনে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা গ্রিজমানকে ফেরানো বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সাফল্যই বটে। মাঝমাঠের শক্তি বাড়াতে উদিনেসে থেকে আর্জেন্টাইন রদ্রিগো দি পলের মতো খেলোয়াড় আগেই নিয়ে এসেছিল তারা। এর বাইরে অলিম্পিকে চমক দেখানো ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ম্যাথুস কুনহাকে টেনেছে দলটি।

ইউনাইটেডের নগর প্রতিপক্ষ সিটি এবার চমকে ভরা দলবদলটা এক অর্থে হতাশার ছিল। তবে রেকর্ড ব্রিটিশ রেকর্ড ভেঙে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাস্টন ভিলা থেকে জ্যাক গ্রিলিশকে আনে তারা। মূল লক্ষ্য একজন স্ট্রাইকার নেওয়া হলেও হ্যারি কেন, লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য চেষ্টা করেও সফলতা পায়নি দলটি। ইন্টার মিলান থেকে দলের সাবেক তারকা রোমেলু লুকাকুকে দলে টেনে সফলতা দেখায় বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন চেলসি।

শেষ দিনে ধারে নিয়ে গেছে অ্যাটলেটিকো থেকে ধারে এনেছে সাউলকে। এছাড়া লিভারপুল দলবদলে বেশ নীরবই ছিল। শুরুতেই ইব্রাহিম কোনাতেকে রক্ষণভাগের ব্যাকআপের জন্য কিনলেও ছেড়ে দিয়েছে জর্দান শাকিরি ও উইনালদামকে। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে অনেক টাকা খরচ করলেও কোনো খেলোয়াড়দের কিনতে পারেনি আর্সেনাল। যদিও বেন হোয়াইট, লোকোঙ্গা, ওডেগার্ড, রামসডেলেদের দলে টানার পর শেষ দিনে বোলোনিয়া তাকেহিরো তুমিয়াসোকে টেনেছে তারা।

পাশাপাশি ধারে ছেড়েছেন হেক্টর বেলেরিনকে। অন্যদিকে নগর প্রতিদ্বন্ধী টটেনহ্যাম শেষ পর্যন্ত হ্যারি কেনকে ধরে রাখে। পাশাপাশি বেশকিছু দারুণ কিছু খেলোয়াড়ও নিয়েছে। আতালান্টা থেকে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও সেভিয়া থেকে ব্রায়ান গিলকে দলে টেনেছে তারা। শেষ দিনে আবার বার্সা থেকে এসেছেন এমারসন রয়্যাল।

জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখও তাদের ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। ডেভিড আলাবাকে ছাড়তে হয় কিছুটা আগেই।লাইপজিগ থেকে মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিতজার ও ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানোকে দলে নিয়েছে তারা। চলে যাওয়ার গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত থেকে গেছেন লেভানডোভস্কি। সাঞ্চোকে ছেড়ে দিলেও তার জায়গায় ভালো কাউকে দলে টানতে পারেনি তাদের নিয়মিত প্রতিদ্বন্ধী ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ইন্টার মিলান থেকে এবার রোমেলু লুকাকুর পাশাপাশি দল ছেড়েছেন আশরাফ হাকিমিও।

তবে গুঞ্জন থাকলেও দলে থেকে গেছেন লাউতারো মার্তিনেজ। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হোয়াকিন কোরেয়ার পাশাপাশি ফ্রি ট্রান্সফারে হাকান শালানুলু ও স্ট্রাইকার এডিন জেকোকে দলে টেনেছে তারা। তাদের প্রতিদ্বন্ধী জুভেন্টাস রোনালদোর জায়গায় দলে এনেছেন ময়জে কিনকে। এছাড়া মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির পাশাপাশি চেলসির ফিকোয়া টোমোরি ও অলিভিয়ের জিরুকে দলে টেনেছে আরেক ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...