বেলিস ক্রিম না ইয়ং মঙ্ক!

জানি না এই ভদ্রলোককে কতজন ক্রিকেটপ্রেমী আজ মনে রেখেছেন। খেলাটাই যে এমন। আজকে রাজা কালকে ফকির। আর একবার বিস্মৃত হয়ে গেলে, তাঁর মতো নির্বিবাদী সাধকসম শান্ত লোকের গণচেতনায় ফেরা মুশকিল।

জানি না এই ভদ্রলোককে কতজন ক্রিকেটপ্রেমী আজ মনে রেখেছেন। খেলাটাই যে এমন। আজকে রাজা কালকে ফকির। আর একবার বিস্মৃত হয়ে গেলে, তাঁর মতো নির্বিবাদী সাধকসম শান্ত লোকের গণচেতনায় ফেরা মুশকিল। মাঝখানে তাঁর আজব ব্যাটিং স্টান্স নিয়ে কিছু ফিসফাস হয়। তবে তা দ্রুতই থেমে যায়। তিনি জর্জ বেইলি। জন্মেছিলেন সাত সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ সালে।

সেই বিখ্যাত ওয়ানডে সিরিজের কথা হয়তো অনেকেই মনে রেখেছেন। আরে ওইটা। যেটায় রোহিত শর্মা ভারতের ক্রিকেট আকাশে মাঝে মধ্যে বিরাজ করা হ্যালির ধূমকেতু থেকে চির উজ্জ্বল তারায় পরিণত হন। শচীন টেন্ডুলকার উত্তর যুগে (ওয়ানডে) কোহলি এমআরএফ ব্যাট নিয়ে প্রথমবার নামেন। এবং নেমেই তাঁর মালিকানাধীন ‘চেজ মাস্টার’ নামক অট্টালিকার শেষ দুটো ইট গাঁথেন।

জয়পুরে ভারতের হয়ে দ্রুততম একদিনের সেঞ্চুরি এবং নাগপুরে ৩৫০ তাড়া করতে নেমে অনবদ্য সেঞ্চুরি। ‘চেজ মাস্টার’ নামক অট্টালিকা এখনো বহাল তবিয়তে তাঁর মালিকানাধীন। আর সেই সিরিজে বোধহয় দুই দলের বোলারদের একটা অলিখিত চুক্তি হয়। যে আমরা ভালো বল করবোই না। আর সেটাও সম্ভবত পিচ কিউরেটারদের প্রতি নীরব প্রতিবাদে। তা এতসবের মধ্যেও তিনি, জর্জ বেলি এক রকম ফুটনোটেই রয়ে গেছেন।

অথচ রেকর্ড বই খুলে দেখা যাচ্ছে সেই সিরিজে ভারতের রোহিত শর্মার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁর। ৯৫ গড় ও ১১৬ স্ট্রাইক রেটে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসাবে সেই সিরিজ খেলেন তিনি। এবং শুধু সেই সিরিজ নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে অবধি প্রায় পুরো সময়টাই তিনি অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন। ক্লার্ক সেই সময়ে প্রায় ওয়ানডে খেলতেন না।

এক জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ শুরুর দিন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৪৮টি ওয়ানডে খেলেন। বেইলি তার ২৯টি তে অধিনায়ক ছিলেন। মায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও। তারপর মাঝ-টুর্নামেন্টে দল থেকেই বাদ। কারণ, দলের ব্যালান্স। পাঁচটি টেস্টেও সুযোগ পেয়েছিলেন। অবশ্যই জ্বালিয়ে দেবার মতো কিছু করেননি। কিন্তু পাঁচ টেস্টের পর চিরতরে বাদ যাবার মতনও কি খেলেছিলেন? জানি না। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) একবারই ফাইনাল খেলেছে। সেবার তাদের অধিনায়ক এই বেইলি।

২০১৫ বিশ্বকাপের পর সেই যে দল থেকে বাদ গেলেন, ফিরলেন বছর খানেক পর। কিন্তু ততদিনে তিনি আধখানা। অদ্ভুত একটা ব্যাটিং স্টান্সে খেলতে লাগলেন। এমন স্টান্স যে অদ্ভুত স্টান্সের রাজ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ন চন্দরপলের একনায়কতন্ত্র ধাক্কা খেতে বাধ্য।

কিন্তু, চন্দরপলেরটা যেমন তাঁর স্বাভাবিক স্টান্স, বেইলির তা নয়। কাজেই তাঁর নিজস্ব ক্রিকেট গবেষণাগারে ম্যানুফ্যাকচার করা স্টান্সে বেলিকে ব্যর্থই বলা চলে। তবে এতসবের পরেও প্রায় সাধকের মতো শান্ত বেলিকে মনে থেকে যাবে পন্টিং উত্তর এবং স্মিথ পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার সাদা বলের ক্রিকেটের ফেভিকল হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link