ফুটবলে কোন কিছুই নিশ্চিত নয়। যেকোন সময় নবাগত কোন দল হারিয়ে দিতে পারে কিংবা কঠিন করে দিতে পারে সমীকরণ। বিশ্ব ফুটবলে বিষয়টা নতুন না। তবে এবারের মৌসুমে ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা ধুকছে তাদের নিজ নিজ লিগ থেকে শুরু করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চেও। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের পরাশক্তিদের কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে ভক্ত-সমর্থকদের।
স্প্যানিশ লিগ লা লিগার কথাই ধরা যাক। লা লিগার পরাশক্তি দুই দল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। এই দুই দল ভুগছে ভিন্ন রকমের সংকটে। বার্সার হাল পুরোই নাজেহাল। এই মৌসুমে লিগে রয়েছে তাঁরা নবম স্থানে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রয়েছে গ্রুপের একেবারে তলানিতে। আশংকার বিষয় শেষ দুই ম্যাচে তাঁরা ছিল গোল শূন্য। খেয়েছে পাঁচটি গোল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁরা হেরেছে ৩-০ গোলে বেনফিকার কাছে। যে হার কিনা এক রেকর্ড গড়া পরাজয়। প্রায় ষাট বছর পর বেনফিকা জিতেছে বার্সেলোনার বিপক্ষে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিরতির আগে শেষ লিগ ম্যাচে অ্যাতলেটিলো মাদ্রিদের কাছে হেরেছে ২-০ গোলে। এ কেমন বার্সেলোনা!
এই বার্সা বড্ড অপরিচিত সমর্থকদের কাছে। অনেকের মনের আনাচেকানাচে এই প্রশ্ন জাগে কবে স্বরুপে ফিরবে বার্সা? কে ধরবে বার্সার হাল? প্রশ্নের উত্তর মেলার আগে হয়তো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে বার্সা ডাগআউটে। কেননা পরিবর্তন যে অবিসম্ভাবী।
বার্সার যখন খাবি খাচ্ছে ঠিক তখন তাদের চির প্রতিদ্বন্দি রিয়াল হারিয়েছে পথ। কার্লো আনচেলত্তির দায়িত্বের পর মৌসুমের শুরুটা বেশ চমকপ্রদ ছিল রিয়ালের। কিন্তু মাঝপথে এসে গত সপ্তাহে রিয়াল হয়েছে পথভ্রষ্ট।
লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটা হঠাৎ করে হেরে বসেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নবাগত দল শেরিফ টিসারপোলের কাছে হেরেছে ২-১ ব্যবধানে, তাও আবার ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়!প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে আশা দল নাকি হারিয়ে দেয় তেরো বারের শিরোপা জয়ীদের!
ঠিক তার পরের লিগ ম্যাচে একই ব্যবধানে হেরেছে এসপানিওলের কাছে। লিগের শুরুতে উড়তে থাকা দলের হঠাৎ এমন ছন্দপতনে চিন্তিত কোচ কার্লো আনচেলত্তি। তিনি অবাক হয়েছেন সপ্তাহখানেকের মাথায় দলের এমন পথভ্রষ্টতায়।
শুধু যে স্প্যানিশ লিগ পরাশক্তি দলগুলো এমন দূর্দশা দেখা দিয়েছে বিষয়টা ঠিক তেমন নয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম পরাশক্তি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও খুঁজে বেরাচ্ছে তাদের ছন্দপতনের কারণ। দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সংযুক্তি প্রত্যাশা বাড়িয়েছে বহুগুণে। প্রত্যাশা অনুযায়ী শুরুও করেছিল রোনালদো ও ম্যানচেস্টার
কিন্তু ছন্দপতনের গল্পে আর নতুন কি বা হবার থাকে? তাদেরও কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে গত দুই ম্যাচে একটিতে হেরেছে ও অপরটি ড্র করেছে ওলে গুনারের শীর্ষ্যরা। এভারটনের সাথে ১-১ ড্র ও অ্যাশটন ভিলার কাছে ১-০ গোলের হারে প্রশ্নের সম্মুখীন রেড ডেভিলরা।
শুধু যে তাঁরা ঘরের মাঠে গত দুই ম্যাচ জয়হীন ছিল তা নয়। মৌসুমের শুরুতে দুর্দান্ত শুরু করা ম্যান ইউর কারাবো কাপের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে ওয়েস্ট হামের সাথে পরাজয়ে। অবশ্য রোনালদোর শেষ মূহুর্তের গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয়ে ধারা অব্যাহত রেখে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জিতেছিল ম্যান ইউ ১-২ গোলে। আন্তর্জাতিক বিরতিতে তাই নতুন করে ছক কষতে হচ্ছে ওলে গুনার সোলশেয়ারকে।
এত এত ছন্দপতনের মাঝে নিজেদের প্রথম হারের দেখা পেয়ছে ইউরোপিয় ক্লাব ফুটবলের অন্য দুই পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। বুন্দেসলিগায় ফ্রাঙ্কফুটের বিপক্ষে লিওন গোরেজকার গোলে এগিয়ে গিয়েও হেরেছে ২-১ গোলে।
অন্যদিকে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেকে নিয়ে সাজানো আক্রমণভাগ যদি গোলপোস্ট বরাবর শটই করতে না পারে তাহলে তার দায়ভার কার উপর এসে বর্তায় তা জানা নেই। তবে এমনটা ঘটেছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে। স্টেড রেইনেসের বিপক্ষে হেরেছে পিএসজি ২-০ গোলে। মৌসুমের প্রথম হার বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয় সবসময়ই।
অপরদিকে, বার্সার মতো নিজেদের অস্তিত্বে সন্ধানে অথৈ সাগরে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে ইতালির ক্লাব জুভেন্টাস। দীর্ঘ নয় মৌসুমের রাজত্ব হারিয়েছে জুভেন্টাস ইন্টার মিলানের কাছে গত মৌসুমে। ২০১১ থেকে ২০২০ টানা সিরি আ জেতা দল রক্ষা করতে পারেনি তাদের শিরোপা। তাই কোচের পরিবর্ত্ন ঘটিয়ে এই মৌসুমেও মেলেনি কোন উপায়। চলতি মৌসুমে ইতালিয়ান লিগে তাদের অবস্থান সাতে।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের এমন দশা বহুকাল দেখেনি কেও। এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে অচিরেই। আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যদয়।