তুফানি ধ্বংসযজ্ঞের মঞ্চ

শক্তিই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সামর্থ্যের জায়গা, শারীরিক ও মানসিক উভয়ই। টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন না হলেও তাঁকে বল করতে গেলে রীতিমত আতঙ্কে থাকতেন বোলাররা। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ওপেনারদের একজন ছিলেন ম্যাথু হেইডেন।

শক্তিই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সামর্থ্যের জায়গা, শারীরিক ও মানসিক উভয়ই। টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন না হলেও তাঁকে বল করতে গেলে রীতিমত আতঙ্কে থাকতেন বোলাররা। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ওপেনারদের একজন ছিলেন ম্যাথু হেইডেন। হেইডেনের ভয়ঙ্কর সেই রূপেরই সাক্ষী হয়েছিল সেদিন জিম্বাবুয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ের পাতা ওলট পালট করেছিলেন এই অজি ওপেনার।

সেদিন আগে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও ম্যাথু হেইডেন। পার্থে সেদিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটাই খেলতে নেমেছিলেন হেইডেন। মোটামুটি সবার সাথেই সেদিন দারুণ সব জুটি গড়েছিলেন এই ওপেনার। সহজ ভাবে বললে জিম্বাবুয়ে বোলারদের সেদিন একাই তুলো-ধুনো করেছিলেন হেইডেন।

সেদিন হেইডেন ওলট-পালট করেছিলেন ক্রিকেট বইয়ের পাতাও। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন হেইডেন। এর আগে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্রায়ান লারা। ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৭৫ রানের ইনিংস। প্রায় ১০ বছর পর ২০০৩ সালে লারার সেই রেকর্ড ভাঙেন হেইডেন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেদিন ঠিক ৬২২ মিনিট ব্যাটিং করেন এই ক্রিকেটার। ৪৩৭ বল খেলে করেন ৩৮০ রান। বিধ্বংসী সেই ইনিংসে ছিল ১১ টি ছয় ও ৩৮ টি চার। ব্যাটিং করেছেন ৮৬.৯৫ স্ট্রাইক রেটে। এই সংখ্যাগুলো থেকেই বোঝা যায় জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর দিয়ে কী গিয়েছিল সেদিন।

তাঁর সেই ইনিংস দিয়ে হেইডেন টপকে গিয়েছিলেন ৩৭৫ রান করা লারা এবং ৩৬৫ রান করা গ্যারি সোবার্সকে। হেইডেনের সাথে শেষ দিকে দারুণ এক জুটি গড়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্টও। গিলক্রিস্ট করেছিলেন ৯৪ বলে ১১৩ রান। হেইডেনের এই ইনিংসে ভর করে ৭৩৫ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২৩৯ ও ৩২১ রানের অল আউট হয়ে যায়। ফলে ইনিংস ও ১১৭ রানের বড় জয় পায় অজিরা। তবে পার্থের সেই টেস্টে সবকিছু ছাপিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন হেইডেন। অজিদের টেস্ট জয় কিংবা গিলক্রিস্টের ঝড়ো সেঞ্চুরি সবই ঢাকা পড়েছিল হেইডেনের ব্যাটে।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে তাঁর কয়েকমাস পরেই আবার হেইডেনের এই রেকর্ড ভেঙে ফেলেন ব্রায়ান লারা। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে বিখ্যাত সেই ৪০০ রানের ইনিংস খেলেন লারা। এবারও প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ডই। লারার ৪০০ রানের অপরাজিত ইনিংসে এখন তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে হেইডেনেই সেই ইনিংস।

হেইডেন জানতেন তাঁর রেকর্ড বেশিদিন টিকবে না। বলেছিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভাঙাটা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় স্মৃতি। তবে, ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্তত এটা বুঝে ফেলেছিলাম যে, রেকর্ডটা যে কোনো সময় ভেঙে যাবে।’

তাই বলে লারাই আবার সেই রেকর্ডটা নিজের করে ফেলবেন – সেটা কেই বা জানতো! তবে, হেইডেন নাকি বুঝতে পেরেছিলেন।

লারা যখন আবারও হারানো আসনে ফেরেন, সেদিন হেইডেন ফোন করেছিলেন লারাকে। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে সেদিন সকালে লারার কথা হয়। ওকে অভিন্দন জানাতে ফোন করেছিলাম। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল, ওর পক্ষে রেকর্ডটা ভাঙা সম্ভব ছিল। ওর ওরকম মানসিতকতা আছে। ও নিজেকে সেই মানে নিয়ে যেতে পেরেছিল।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link