কিছুদিন আগেও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ট্রল হওয়া ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই রূপটা দেখাতে পারছিলেন। ২০১৯ সালে নিজের মেয়েকে চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেন। তবুও তিনি ফিরে এসেছেন বড় মঞ্চেই।
আসিফ আলী মানুষ হিসেবে জন্মেছেন। একটা দাগ তাঁকে রেখে যেতে হতোই। সেজন্য তিনি বেঁছে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকেই। মাত্র দুটি ম্যাচ, আরো স্পষ্ট করে বললে মাত্র ১৯ বলে খেলেই নিজেকে অবস্মরণীয় করে তুলেছেন। পাকিস্তানের ট্রলের অন্যতম ম্যাটারিয়াল এখন রাতারাতি দেশটার হিরো হয়ে উঠেছেন। ঠিক রাতারাতি না, আসিফ আলী নিজের প্রতি বিশ্বাসটা তৈরি করেছেন কঠিন পরিশ্রমে, বিন্দু বিন্দু ঘামে।
অনেকেই নিজেকে প্রমাণ করার জন্য অনেক আয়োজন চান। অন্তত একজন ব্যাটসম্যান আশা করতেই পারেন বাইশ গজে কিছু সময় পাওয়ার। আসিফ আলীর ভাগ্যে তা জোটেনি। পাকিস্তান তাঁদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে। বাবর আজম ও মোহম্মদ রিজওয়ানই ম্যাচ শেষ করে এসেছিলেন।
তবে পরের দুই ম্যাচে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার সেভাবে ক্লিক করতে পারেনি। দুইদিনই পাকিস্তানের ত্রানকর্তা হয়ে এসেছেন আসিফ আলী। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে ২৭ করে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের বন্দরে। সেদিন মেরেছিলেন ৩ টি ছয় ও ১ টি চার।
পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরো কম সময় পেয়েছেন। খেলেছেন মাত্র ৭ বল। তাতেই হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ১৯তম ওভারে চারটি ছয় মেরে এই ম্যাচেও দলকে জয় এনে দিয়েছেন আসফ আলী।
সবমিলিয়ে দুই ম্যাচে আসিফ আলী খেলেছেন মোট ১৯ বল। তাঁর মধ্যে ৭ টিতেই ছয় মেরেছেন। ব্যাটিং করেছেন যথাক্রমে ২২৫.০০ ও ৩৫৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে। মাত্র ১৯ টি বল খেলেই দলকে দুই দিনের ব্যবধানে দুইটি জয় উপহার দিয়েছেন। তিনদিনের মধ্যে পাকিস্তানের হিরো বনে গেছেন তিনি। এই মুহূর্তে বোধহয় আসিফ আলীর স্লগিং এবিলিটি নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারবেনা।
অথচ সময়টা এত মধুর ছিল না আসিফ আলীর। ২০১৯ সালে নিজের দুই বছরের মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিজের ছোট্ট মেয়েকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেন। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত আসিফ আলীর ব্যাট হাতে সময়টাও তখন খুব ভালো যাচ্ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারছিলেন না।
দুই বছর পর আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পান আসিফ আলী। আসিফের উপর আবার ভরসা করতে শুরু করে পাকিস্তান ক্রিকেট। তারচেয়ে বড় কথা আসিফ আলী নিজের উপর নিজে বিশ্বাসটা অর্জন করতে পেরেছিলেন।
সেটা মাঠে এই দুই দিন তাঁর শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে শোয়েব মালিককে বাইশ গজেই বলেছিলেন তিনি শেষ করে আসতে পারবেন। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে শাদাব খানকে স্ট্রাইক না দিয়ে নিজের উপরই আস্থা রেখেছিলেন।
এরপর পুরো পাকিস্তানকেই বাধ্য করেছেন তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতে। মাত্র এক ওভারেই চারটি ছয় মেরে জয় এনে দিয়েছেন পাকিস্তানকে। আসিফ আলী জয় করেছেন নিজের খারাপ সময়কে, জয় করেছেন পাকিস্তান ও গোটা দুনিয়ার ক্রিকেট প্রেমীদের মন, হয়তো জয় করেছেন তাঁর মৃত মেয়ের মুখের হাসিও।