মিরপুরের সেই টিপিক্যাল মন্থর ও টার্নিং উইকেট না।
বোলারদের হাতে মোটামুটি পুঁজিও ছিল না। তবে বোলিং করতে নেমে বাংলাদেশের পেসাররা পাওয়ার প্লেতে নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেই আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা দেখতে চাই ঠিক সেটাই দেখা গেল। প্রথম ছয় ওভারে মাত্র ২৪ রানে পাকিস্তানের চার উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের রাস্তাটা পরিষ্কার করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর আবারো সেই পুরনো চেহারা, পুরনো মানসিকতা ও পুরনো ফলাফল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ভয়ের জায়গা ছিল বাবর আজম ও মোহম্মদ রিজওয়ান। তবে ইনিংসের শুরুতেই এই দুজনকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। এরপর মাহেদীর ঘুর্নিতে প্যাভিলয়নের পথ দেখেন হায়দার আলীও। ষষ্ঠ ওভারে উইকেটের পিছন থেকে সোহানের অসাধারণ থ্রো’য়ে শূন্য রানেই ফিরেন আরেক ডেঞ্জার ম্যান শোয়েব মালিকও। সবমিলিয়ে তখন পুরো খেলাই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে।
তবে এরপরই আবার গা ছাড়া ভাব। মাঠের ফিল্ডিংয়েও যেনো হঠাতই অমনোযোগী বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আবারো সেই ডানহাতি-বাহাতি কম্বিনেশনের তত্ব। লেগ স্পিনার বিপ্লবকে যে একাদশে ছিলেন সেটা বুঝারই উপায় নেই। এবং বরাবরের মতই শেষ দিকে নার্ভ ধরে রাখতে না পেরে মুস্তাফিজ, শরিফুলরা দর্শকদের ডুবালেন হতাশার বৃত্তে।
তবে ডেথ ওভারে মুস্তাফিজ, শরিফুলদের এই ব্যর্থতা মানতেও নারাজ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদ ডেথ ওভারের বোলিং নিয়ে বলেন,’ বোলিং নিয়ে আমি হতাশ নই। সব বোলাররাই ভালো বোলিং করেছে। শেষ দিকে এমন হতেই পারে যে এক ওভারে একটু বেশি রান দিয়ে ফেলে। কেননা ব্যাটসম্যানরাও ওই সময় চেষ্টা করছিল দ্রুত রান তোলার। কয়েকটা ভালো শটও খেলেছে ওদের ব্যাটসম্যানরা। আমার মনে হয় মুস্তাফিজ ভালো বোলিং করেছে।‘
ওদিকে দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে ছিলেন বলে লেগ স্পিনার বিপ্লবকে ১৯ তম ওভার পর্যন্ত বোলিং এই আনেননি রিয়াদ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন দুই রান প্রয়োজন তখন বোলিং দেয়া হয় এই লেগ স্পিনারকে। আসলে পুরো ম্যাচে বিপ্লবকে নিয়ে রিয়াদের কী পরিকল্পনা ছিল সেটা বোঝাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল।
রিয়াদও ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অকপটে স্বীকার করেন দুজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল বলেই তাঁকে বোলিংয়ে আনা হয়নি। বিপ্লকে বোলিং করানোর আদৌ কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রিয়াদ বলেন,’ অবশ্যই পরিকল্পনা ছিল বিপ্লবকে বোলিং করানোর। তবে দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকায় আমাকেই বল করতে হয়।‘
ওদিকে সবসময়ের মত আজকের ম্যাচেও ব্যার্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়া সাইফ হাসানও নিজের প্রথম ম্যাচটা রাঙিয়ে তুলতে পারেননি। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর টেকনিক নিয়ে অনেক ইতিবাচক আলোচনাই হয়। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এলে দেখা মেলে না তাঁর ছিটেফোঁটাও।
সাইফ হাসানের টেকনিক নিয়ে রিয়াদ বলেন, ‘টেকনিকের বিষয়ে আমি খুব একটা বলতে পারবো না। কারণ আমার কাছে মনে হয় সাইফের খুব ভালোই আছে সেটা। আজকেই ও প্রথম ম্যাচ খেললো। যে কারোরই প্রথম ম্যাচে খারাপ হতে পারে তবে আমার মনে হয় ও কামব্যাক করবে।’
তবে এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও স্বস্তির ব্যাপার মাহেদী ও তাসকিনের পারফর্মেন্স। দুজনেই ধারাবাহিক ভাবে ভালো ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। মাহেদী বোলিং করে নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন এবং ব্যাটিং এ যখনই সুযোগ পাচ্ছেন নিজের সেরাটা দিচ্ছেন। এছাড়া এ বছর তিন ফরম্যাটেই দারুণ বোলিং করে যাচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। গতির সাথে নিজের বোলিংয়ে যুক্ত করেছেন বৈচিত্রও।
এই দুইজনকে নিয়ে আশার কথা বলেছেন রিয়াদও। তিনি বলেন, ‘মাহেদী দলের জন্য দারুণ ক্রিকেট খেলছে। ব্যাট ও বল দুই ডিপার্টমেন্টেই নিজের সেরাটা দিচ্ছে। তাসকিনও অসাধারণ। বাকিরাও ভালো পারফর্মই করছে। আফিফ আজকে খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। সোহানও ভালো করেছে। তবে সবমিলিয়ে আমার মনে হয় ব্যাটিংটা আরেকটু ভালো করতে হবে।’