বিষন্নতায় মলম বোলানো ঘূর্ণি

একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি আজকের আলোচনা। আপনি কি জানেন এ বছর টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার কে? হয়ত অনেকেই জানেন কিংবা অনেকে জানেন না। যারা জানেন না তাঁরা কি মশাই লাল বলের ক্রিকেটকে একেবারেই ভুলে যেতে চাইছেন কি?

সে যাকগে। এখন পর্যন্ত ২০২১ সালে টেস্টে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার ভারতের অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এ বছর তাঁর নামের পাশে উইকেট রয়েছে ৫২টি। এ  বছর টেস্টে উইকেট বিবেচনায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব কম। এক শাহীন শাহ আফ্রিদি তবু পারতেন কিন্তু এ বছর আফ্রিদি খেলছেন না আর কোন টেস্ট।

এসব তো জানলেন, কিন্তু এটা নিশ্চয়ই জানতেন না আজকের এই টেস্ট সেরা বোলার এর আগের দুই বছরে বারংবার ভেবেছিলেন বিদায় নিয়ে নেবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। হ্যাঁ! তিনি ভেবেছিলেন। কিন্তু কি অদ্ভুত রকমভাবে তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ক্রিকেটের মহাকালের মঞ্চে এবং এ বছর তো সাদা পোশাকে করছেন রাজত্ব।

এই যে তাঁর অবসর নিয়ে নেওয়া, ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেওয়ার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বেশকিছু কারণ। তাঁর মধ্যে রয়েছে ইনজুরি এবং দলে তাঁকে কোনঠাসা করবার চেস্টা। এমনটা মনে করেন ভারতের অভিজ্ঞ এই অফ স্পিনার।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, ‘দল এবং দলের সদস্যদের সাফল্য উদযাপনের জন্যে আপনাকে ফিল করতে হবে যে আপনি তাদেরই একজন। কিন্তু আমাকে তখন ফিল করানো হতো আমি বাইরের কেউ।’

২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাঁচ উইকেট নিয়ে বেশ বন্দনায় ভাসছিলেন ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদ্বীপ যাদব। অস্ট্রেলিয়ার মতো পেস বান্ধব উইকেটে একজন স্পিনারের পাঁচ উইকেট শিকার করা চাট্টিখানি কথা নয়।

তাইতো ভারত জাতীয় দলের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছিলেন, ‘কুলদ্বীপ বিদেশের মাটিতে ভারতের সেরা বোলার।’ তবে এই উক্তিতে বেশ ব্যথিত হয়েছিলেন অশ্বিন। কুলদীপকে সেরা বলার থেকেও তাঁকে একেবারে বিবেচনায় না রাখাটাই বেশি পুড়িয়েছে তাঁকে।

এ বিষয়ে অশ্বিন বলেন, ‘আমি রবি ভাইকে যথেষ্ট সম্মান করি। আমরা যে কেউ কোন কিছু একবার বলে পরে তা প্রত্যাহার করে নিতে পারি। কিন্তু রবি ভাইয়ের ওমন বক্তব্য আমার মনে বেশ আঘাত করেছিল।’

যদিও কুলদ্বীপের বিদেশের মাটিতে ফাইফার নেওয়াতে বেশ খুশিই ছিলেন অশ্বিন। তবে একটু হলেও প্রসংশা প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি। কেননা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনজুরির প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়েও দুই ইনিংস মিলিয়ে ছয়টি উইকেট নিয়েছিলেন অশ্বিন। যা পরবর্তীতে ভারতকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেছিল।

বলছিলেন, ‘আমি মনে করি আমি বেশ ভালই বল করেছিলাম অসহ্য যন্ত্রনা নিয়েও কিন্তু আমাকে শুনতে হয়েছে নাথান লিঁও ছয় উইকেট নিয়েছে আর অশ্বিন কিনা নিয়েছে কেবল তিন উইকেট।’

নিজের শারীরিক অক্ষমতা এবং ইনজুরি জর্জরিত সেই সময় নিয়ে দারুণ বিরক্তি প্রকাশ করে অশ্বিন বলেন, ‘আমি আমার শরীর নিয়ে প্রচণ্ড হতাশ ছিলাম। কেননা আমি যখন ফর্মে ছিলাম তখন আমার শরীর আমাকে সঙ্গ দেয়নি। তাছাড়া সেই মুহূর্তে নানানসব তুলনা দিয়ে আমার দিকে ইশারা করা হয়েছিল যে আমি দলের প্রয়োজনে ছিলাম একেবারেই নিষ্প্রভ।’

এমন নানা রকম কারণে ক্রিকেটটাকেই ছেড়ে দিতে চাইছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অথচ ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট বোলারদের তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অশ্বিন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৪২৭ উইকেট। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মাথায় হয়ত মাঝেমধ্যেই বিষন্নতা ভর করে। সেই বিষন্নতা ছাপিয়ে লড়াকু সৈনিকের ন্যায় তাঁরা আবার আসেন ফিরে বারে বারে, করেন রাজত্ব বিশ্বসংসারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link