পাঁচ অধিনায়কের দায় কী এটুকুই!

মুনিম শাহরিয়ার এখন ময়মনসিংহে।

অথচ এই সময়ে তার বিসিএল খেলার কথা ছিলো। সেন্ট্রাল জোন শুরুতে দলে রাখলেও এই দারুন ফর্মে থাকা ওপেনারকে শেষ অবধি ছেড়ে দিয়েছে। বলেছে, ওয়ানডেতে ডাকা হতে পারে। আসলে সেন্ট্রাল জোনের দোষ দিয়ে লাভ নেই। মুনিম গত মৌসুম স্বপ্নের মত কাটিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে। সেই ফরম্যাটের বিপিএলেই কোন দল তাকে দলে রাখেনি!

কেবল কী মুনিম? দল পাননি আনিসুল হক ইমন বা তানজিদ হাসান তামিমের মত সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়রা। দল পাননি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের মত জাতীয় দলের খেলোয়াড়।

প্রতিবার বিপিএলেই ড্রাফট শেষে এই ঘটনাটা ঘটে। কিছু প্রতিভাধর, সম্ভাবনাময়, তরুন খেলোয়াড় দল পান না। এ নিয়ে সবাই হা হুতাশ করেন। আমি এই হা হুতাশ করার পক্ষে নই। কারণ, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কেউ নিজের পায়ে কুড়োল মেরে কোনো সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়কে দলে না নিলে বলার কিছু নেই। জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবতে তারা বাধ্য নন। ফলে বিপিএলের সব দলকে আমি অভিযুক্ত করতে পারছি না।

কিন্তু ঢাকা দলকে তো একটু প্রশ্ন করতেই পারি। এটা বিসিবির দল। জাতীয় স্বার্থ দেখা, দেশের ক্রিকেটকে একটু প্রমোট করার দায় নিশ্চয়ই বিসিবির মালিকানাধীন দলের আছে। বিসিবি নিজেই কিছুদিন পরপর বলে লেগ স্পিনারদের খেলাতেই হবে। সেই বিসিবির দল জাতীয় দলের লেগস্পিনারকে উপেক্ষা করে কেনো? কেনো তারা বিপ্লবকে রেখে রিশাদকে দলে ভেড়ায়? মাত্র ৭ লাখ টাকা বাচানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিলেন?

তাহলে কী হাবিবুল বাশাররা মনে কওেরন, তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভুল আছে? যে কারণে তাদেরই জাতীয় দলের জন্য বাছাই করা বিপ্লবকে তারা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যোগ্য মনে করেন না? রিশাদ যদি এই স্তরে বিপ্লবের চেয়ে এগিয়ে থাকেন, তাহলে হাবিবুল কেন তাকে জাতীয় দলে ডাকেন না?

স্ববিরোধিতাটা বুঝতে পারছেন?

এবার আসুন, ঢাকার ম্যানেজমেন্টের দিকে। এই দলের ম্যানেজমেন্টে পাঁচ জন বর্তমান ও সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক আছেন। হাবিবুল বাশার দেশের ইতিহাসের প্রথম সফল অধিনায়ক। শাহরিয়ার নাফিস প্রথম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। মাশরাফি বিন মুর্তজা কিংবদন্তি অধিনায়ক। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তামিম ইকবাল চলমান টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে অধিনায়ক।

এখন প্রশ্ন হলো, এই ৫ অধিনায়ক কী স্রেফ বানিজ্যেই নিজেদের দায়বদ্ধতার শেষ দেখলেন।

শুনতে অত্যন্ত খারাপ শোনালেও বছর দেড়েক ধরে টি-টোয়েন্টি না খেলা তামিম ইকবাল এবং ক্রিকেট থেকে বহু দূরে চলে যাওয়া মাশরাফিকে তারা ‘যোগ্য’ মনে করেছেন। করতেই পারেন। কারণ, এই তারকাদের নামের ওজন আছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পারফরম্যান্স না থাকলেও নামে বিজ্ঞাপন আসে। তাই মাশরাফি, তামিমরা দল পেয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু সেই তামিম, রিয়াদ যখন নিলামের টেবিলে বসেন, তাদের কী জাতীয় দলের প্রতি একটু দায় থাকবে না? তারা কী মনে করবেন না যে, বিপ্লব-মুনিম-ইমনদের একটু প্রমোট করা দরকার। নিজেরা না পারলেও বন্ধুস্থানীয়দের দিয়ে অন্য দলে পাঠানোর চেষ্টাও করবেন না?

তারপরও আশাটা ছাড়তে চাই না।

আমি ভাবতে চাই যে, এই সব অধিনায়করা এখন এসব নিয়ে ভাবছেন। তারা ভাবছেন যে, জয় পরপরাজয় শেষ কথা নয়। জাতীয় দলের জন্য, দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করা দরকার। আর সেই ভাবনা থেকে নিশ্চয়ই কোটার বাকী খেলোয়াড় হিসেবে এই তরুনদের দিকে হাত বাড়াবেন তারা।

আশা করতে দোষ কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link