হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় ডেভিড বুনের। ঘুম ভেঙে খানিক বিস্মিত হন তিনি। দেখেন তাঁর সতীর্থ জিওফ মার্শ শ্যাডো-প্র্যাকটিস করছেন। অবশ্য এ ঘটনা বিস্ময়ের স্মৃষ্টি করে। কিন্তু এর থেকেও বিস্ময়ের কারণ জিওফ মার্শ নাকি সে সময় ছিলেন পুরো উলঙ্গ অবস্থায়।
জিওফ মার্শ অবশ্য এ ঘটনা স্বীকার করেছেন তবে তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি পুরোপুরি উলঙ্গ ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, উলঙ্গ হয়ে শ্যাডো-প্র্যাকটিস করার ঘটনা সত্য। তবে এও সত্য আমি পুরোপুরি উলঙ্গ ছিলাম না। আমার মাথায় তখন ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটাও ছিল।’ অর্থাৎ তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের টেস্ট ক্যাপ পরে অনুশীলন করছিলেন।
ক্রিকেটকে নিজের মধ্যে একেবারে ধারণ করতেন জিওফ মার্শ। জিওফ মার্শের আরো একটি পরিচয় আছে তিনি শন মার্শ ও মিচেল মার্শের বাবা তিনি। তবে এসব কিছু তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পরিচয়কে খুব একটা প্রভাবিত করে না। ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জিওফ মার্শ।
জিওফের জীবনে তিনি একটি ভিন্নধর্মী রেকর্ডের সাথে যুক্ত আছেন। সেই আলাপে খানিক পরে যাওয়া যাক। জিওফ যখন অস্ট্রেলিয়া দলে এলেন তখন দলটির মোটামুটি বেহাল দশা। তাঁর অভিষেকটা প্রথম হয়েছিলো ক্রিকেটের বনেদি পোষাকে ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপে। ১৯৮৫ সালের দিকে অজিদের তারকা খেলোয়াড় গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি ও রড মার্শের মতো খেলোয়াড়েরা অবসর নিয়ে নেন।
বলে রাখা ভাল রড মার্শ এবং জিওফ মার্শের তেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। কেবল শেষ নামেই রয়েছে তাঁদের মিল। তা অন্য বিষয়। তাঁদের অবসরে দল খানিকটা বিপাকেই পড়েছিল। ভারতের বিপক্ষে নম্বর তিনে ব্যাটিং দিয়ে তিনি নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তবে বিফলতায় দল থেকে বাদ হওয়ার পরিবর্তে তাঁর ব্যাটিং পজিশনের উন্নতি হলো। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হলো ইনিংসের ভিত গড়ার।
সেখানেই সফলতা আসতে থাকে তাঁর। এমনকি সেই ওপেনিং এ তিনিই প্রথম রেকর্ড গড়েছিলেন। অবশ্য তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন মার্ক টেইলর। ওপেনিং জুঁটি হিসেবে টেস্টে পুরো একটা দিন ব্যাটিং করবার রেকর্ডটা তাঁরাই প্রথম লেখেছিলেন। ৩০১ রানের শেষ করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষের একটি টেস্টের প্রথম দিন।
টেস্ট অভিষেকের বছর খানেক বাদে জিওফ মার্শের অভিষেক ঘটে ওয়ানডে ফরম্যাটে। এই ফরম্যাটটায় বেশ উজ্জ্বল তাঁর ক্যারিয়ার। তবে সাদা পোষাকের ক্রিকেটে যে তিনি একেবারেই সাদামাটা তা বলা যায় না। ছোট্ট একটি ক্যারিয়ার ছিল তাঁর। সেই ক্যারিয়ারে ৫০টি টেস্ট খেলেছেন অজিদের হয়ে। তাঁর টেস্ট গড় ছিল ৩৩.১৮।
১৫টা অর্ধ-শতক ছাড়াও চারটি শতক রয়েছে তাঁর নামের পাশে। তিনি তাঁর পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে একটি মাত্র ছয় মেরেছিলেন। এই এক নামক সংখ্যার সাথে জিওফ মার্শে সম্পৃর্ক্ততা রয়েছে। নিজের পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র একটি ওভার করেছিলেন। সেটা করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে। সেটা অবশ্য ছিল ওয়ানডেতে।
ওয়ানডেতে বেশ সফল বলা যায় জিওফ মার্শকে। কেননা তিনি ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। শুরুর দিকে বলেছিলাম যে তিনি এক ভিন্নধর্মী রেকর্ডের সাথে জড়িত। জিওফ মার্শ একমাত্র ব্যক্তি যিনি কিনা খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি কোচ হিসেবেও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছেন।
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপটা তিনি জিতেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। তাঁর ঠিক এক যুগ বাদে তিনি আরও একটি বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। এবার কোচ হিসেবে। টেস্টের মতো জিওফের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটাও ছিল স্বল্প সময়ের, কিন্তু ওয়ানডেতে তাঁর সফলতার হার বেশি।
মাত্র ছয় বছরের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ার তাঁর। সেই সময়কালে জিওফ ম্যাচ খেলেছেন ১১৭টি। সেখানে তাঁর মোট রান চার হাজারের ঘরে, ৪৩৫৭। গড় টেস্টের থেকে প্রায় সাত বেশি। ৩৯.৩৭ তাঁর ওয়ানডে ব্যাটিং গড়। টেস্ট থেকে প্রায় দ্বিগুণ শতক হাঁকিয়েছেন তিনি রঙিন পোশাকে। নয়টি শতকের বিপরীতে তাঁর অর্ধ-শতকের সংখ্যা ২২টি।
এই ফরম্যাটে অবশ্য একটি ছয়ে ক্ষান্ত হননি তিনি। আবার ছয়ের বন্যাও বইয়ে দেননি তিনি। ১৯৯২ সালেই জিওফ তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেন। সেই বছরের জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। তাঁর মাস দু’য়েক বাদে ওয়ানডেতে শেষ ম্যাচ খেলেন উপমহাদেশের আরেক দল পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর ১৬৭ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ম্যাচেই থেমে যান জিওফ মার্শ।
ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন কোচ হিসেবে। আর এই বছরে এসে ছেলে মিচেল মার্শকে দেখালেন দলকে, দেশকে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে। বাপকা বেটা। অবসর সময়ে নিশ্চয়ই খুব গর্ববোধ করেন তিনি তাঁর ছেলেদেরকে নিয়ে। সফল খেলোয়াড় বাবা হিসেবেও হয়ত ভীষণরকম সফল।