এক নায়কের স্পর্ধা

২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ বাংলাদেশি পেসার রবিউল ইসলাম শিকার করেছিলেন টেস্টের এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট। এরপর প্রায় ৮ বছরেও কোনো পেসারই প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট নিতে পারেনি। বাংলাদেশের পেস বিভাগের দুর্দশা ফুঁটে তুলতে এটাই যথেষ্ট।

মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৮ বছর পর প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন এবাদত হোসেন। তাতে, প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারালো বাংলাদেশ। পেল দেশের বাইরে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয়, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে এল প্রথম জয়।

এবাদতের বিধ্বংসী বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেছেন ৬ উইকেট। ২১ ওভারে ৬ মেইডেনসহ ৪৬ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সাত উইকেট নিয়ে তিনি বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়ের অতিমানবীয় নায়ক। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতেই সবচেয়ে বেশি মানায়।

এই সিরিজের আগেও এবাদত ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। তবে, সেটা নেতিবাচক কারণে। বাজে বোলিং গড়ের জন্য তাকে দল থেকে বাদ দিতে উঠে পড়েই লেগেছিলেন বাংলাদেশি ক্রিকেটভক্তরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এবাদত দলে ডাক পাবার পড়েও নাখোশ ছিলেন অনেকেই। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট পেলেও বল হাতে সাদামাটা ছিলেন এই পেসার। এরপর সব সমালোচনা যেন রুখে দিলেন দ্বিতীয় ইনিংরে এক স্পেলেই!

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যখন ম্যাচে জয় থেকে অনেকটাই ছিটকে যাচ্ছে ঠিক সেই মূহুর্তে দুর্দান্ত এক স্পেলে দলকে ম্যাচে ফেরান এবাদত। ১৩৬ রানে ২ উইকেট থেকে এবাদতের দাপটে ১৩৬ রানেই ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ২ ওভারেই শিকার করেন তিন উইকেট।

শেষ দিনে বাংলাদেশের সামনে যখন ঐতিহাসিক জয়ের হাতছানি, ঠিক তখনি দিনের শুরুতেই রস টেলর ও কাইল জেমিসনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়টা অনেকটাই নিশ্চিত করে দেন এবাদত। উইল ইয়ঙ, ডেভন কনওয়ে, রস টেলর, হেনরি নিকোলসরা যেন ঘরের মাটিতে পাত্তাই পাননি এবাদতের স্যুইংয়ের সামনে।

চতুর্থ দিনে শেষ সেশনের শুরুর দিকেও ম্যাচে দুই দলের অবস্থান সমানে সমান। বড় টার্গেটের দিকেই লক্ষ্য ছিলো নিউজিল্যান্ডেরও। কিন্তু হটাৎ করেই এবাদত ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং শিবির। এবাদতের আঘাতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা।

ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে একাই ধসিয়ে দেন প্রতিপক্ষকে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে এই ঐতিহাসিক জয়ের নায়কটা এবাদত। একদিনের ব্যবধানে যেনো সব সমালোচনাকে পালটে দিয়েছেন প্রশংসার বানীতে। এবাদতের প্রশংসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহ মিডিয়া এখন পঞ্চমুখ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়টা যেখানে বাংলাদেশের জন্য দিবাস্বপ্ন, সেখানে এবাদত তান্ডবে সব সমীকরণই পালটে দিলো বাংলাদেশ।

ঠিক এক ইনিংস আগেও যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে ছিলেম স্রেফ একজন ট্রলের পাত্র। যাকে নিয়ে আশা, ভরসা কিছুই ছিলোনা সমর্থকদের। সেই এবাদতই কিনা নিউজিল্যান্ড ধসিয়ে দিয়েছেন দুর্দান্ত বোলিংয়ে। শূন্য থেকে এক ইনিংসের ব্যবধানে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে হিরো বনে গেলেন এই পেসার। একসময়ের জিরো তাই আজকের হিরো – পরিশ্রম আর চেষ্টা এভাবেই সময়কে পাল্টে ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link