ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস

‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’ এমন প্রবাদ বাক্যের সাথে পরিচয় নেই এমন ক্রিকেট ভক্ত বা সমর্থক কিংবা নেহাৎ দর্শক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্রিকেট ময়দানে ক্যাচ মিস হওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি ক্যাচ যেমন খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ঠিক তেমনি ক্যাচ মিস খেলার ফলাফলই বদলে দেয়। আজকে ঠিক এমন সকল ঘটনার পসরা নিয়ে হাজির হয়েছি।

  • অ্যাশলে জাইলস (ইংল্যান্ড)

‘অ্যাশেজ’ ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী টেস্ট সিরিজে। বেশ সমৃদ্ধ এক ইতিহাস রয়েছে অ্যাশেজ সিরিজের। সেই সিরিজের প্রতিটা দিন থাকে টানটান উত্তেজনা। সময়ে সময়ে ম্যাচের রঙ বদলায়। এমনই এক মুহূর্ত এসেছিল ২০০৬/০৭ মৌসুমের অ্যাশেজে। ইংল্যান্ড খেলোয়াড় অ্যাশলে জাইলস মিস করেন অস্ট্রলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং এর ক্যাচ। অস্ট্রেলিয়া সেই মৌসুমের অ্যাশেজে ১-০ তে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া।

দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল দ্বিতীয় ম্যাচে। ইংল্যান্ড ফ্ল্যাট পিচের সুবিধা নিয়ে ৫৫১ রান তোলে স্কোর বোর্ডে ছয় উইকেট হারিয়ে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ৬৫ রানের মাথায়। চতুর্থ উইকেট হিসেবে রিকি পন্টিং ও চলে যেতে পারতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৫ রানে পন্টিং এর করা পুল শটে ওঠা ক্যাচ মিস করেন অ্যাশলে জাইলস। পরবর্তীতে ১৪২ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন রিকি পন্টিং এবং সেই টেস্টে ছয় উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলো অজিরা।

  • কিরণ মোরে (ভারত)

আশির দশকের শেষের দিকে এবং পুরো নব্বই দশক জুড়েই ভারত জাতীয় দল খুব একটা ভাল পারফর্ম করতে পারছিলো না। কিন্তু ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে একটি মাত্র টেস্ট ম্যাচে জয় পাওয়ার সুযোগ ছিলো ভারতের কাছে।

কিন্তু ইংল্যান্ড ব্যাটার গ্রাহাম গুচ ৩৬ রানে ব্যাটিংরত অবস্থা ব্যাটের খোঁচা লেগে বল পৌঁছায় ভারতীয় উইকেট রক্ষক কিরণ মোরের কাছে। কিন্তু মোরে সেই ক্যাচটি তালুবন্ধি করতে অপারগ হয়। এতেই যেন টেস্ট জয়ে আশা ক্ষীণ হয়ে যায়।  ৩৬ রানে সুযোগ পেয়ে শেষ অবধি ৩৩৩ রানে থামেন গুচ। তাতে ভারতের হার সুনিশ্চিত হয়ে যায়।

  • মারলন স্যামুয়েলস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

২০১৫ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাকক্যাপস ওপেনার মার্টিন গাপটিল ব্যক্তিগত চার রানের মাথায় ক্যাচ তুলে দেন স্কোয়ার লেগের দিকে।

সেখানে ফিল্ডিং করতে থাকা ক্যারিবিয়ার খেলোয়ার মারলন স্যামুয়েলস যেন ছিলেন একেবারেই অপ্রস্তুত। মিস করে ফেললেন ক্যাচ। সেই ক্যাচ মিসের মাশুল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানের বড় পরাজয় বরণ করে নিতে হয়। গাপটিল সে ম্যাচে দ্বিশতক হাঁকিয়ে থেমে যান ২৩৭ রানে।

  • গ্রাহাম থর্প (ইংল্যান্ড)

১৯৯৭ সালের অ্যাশেজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ছয় ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছিলো। চতুর্থ টেস্টে সিরিজের ফলাফলের পাল্লা ভারি করার উদ্দেশ্যে দুই দল মুখোমুখি হয়। ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে কেবলমাত্র ১৭২ রানেই আটকে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে বিপাকে পড়ে যায় অজিরা। ৫০ রানের মাথায় হারিয়ে ফেলে চারটি উইকেট। কিন্তু তখনও ক্রিজে ছিলেন অজি ওপেনার ম্যাথিউ এলিয়ট। খুব অল্প রান থাকা অবস্থায় তাঁর ব্যাটে খোঁচা লেগে ক্যাচ ওঠে স্লিপ পজিশনে। সেখানে থাকা ইংলিশ খেলোয়াড় গ্রাহাম থর্প ক্যাচটি মিস করেন। ফলস্বরুপ ম্যাচের দখল নিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। থর্প করেন ১৯৯। শেষমেশ ইংল্যান্ড ইনিংস ও ৬১ রানে হেরে যায় ম্যাচটি।

  • থিসারা পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)

২৬৪ রানে দূর্দান্ত এক ইনিংস রয়েছে ভারতীয় ব্যাটার রোহিত শর্মা। তাও আবার ওয়ানডে ফরম্যাটে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ইনিংসের শুরুর দিকে বেশ একটা ঝক্কি সামলাতে হচ্ছিলো রোহিতের। থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলেও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সেই ক্যাচটি ফেলে দেন লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। অনবদ্য সেই ওয়ানডে ইনিংসটাই এখন অবধি রোহিতের সেরা।

  • হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ফলাফল ঘুরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হার্শেল গিবসের একটিমাত্র ভুলে। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার স্টিভ ওয়াহের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন। যার প্রতিদান হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ম্যাচটি হেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। অস্ট্রেলিয়া শেষমেশ নিজেরদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নেয় সেবার।

  • হাসান আলী (পাকিস্তান)

২০২১ সালে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি হয়েছিল টানটান উত্তেজনাকর একটি ম্যাচ। সেই ম্যাচে দূর্দান্ত খেলতে থাকা ম্যাথু ওয়েডের একটি ক্যাচ মিস করেন পাকিস্তানের হাসান আলী।

সেই ক্যাচটাই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা পাকিস্তান দলকে ছিটকে দেয় বিশ্বকাপ থেকে। এমন অভিমতই প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেননা শেষমেশ ম্যাথু ওয়েড অজিদের হয়ে ম্যাচটি জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। এমনকি পরবর্তীতে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা যেতে অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link