নিখাঁদ আনন্দ আর নেই

‘মিস্টার থ্রিসিক্সটি’ এই কথা শুনলেই আপনার মাথায় কার নামটি ভেসে উঠবে? অবশ্যই আপনি যদি একজন প্রকৃত ক্রিকেট প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের নাম ভেসে উঠবে। তবে মজার বিষয় হলো আপনি একেবারেই ক্রিকেটে মগ্ন না থাকলেও এবি ডি ভিলিয়ার্সের নাম আপনার মাথায় আসতে বাধ্য।

কেননা ক্রিকেটার হিসেবে ডি ভিলিয়ার্স ছিলেন এক ও অনন্য। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স নতুন যুগের ক্রিকেটের একজন অসাধরণ ব্যাটার ছিলেন তা বলতে দ্বিধা নেই। কোন প্রকার বিতর্ক ছাড়াই বলে দেওয়া যায় তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই ‘এন্টারটেইনার’।

মাঠের চারপাশে খেলতে পারার দক্ষতা থাকা এই খেলোয়াড় বিনোদনের খোরাক মিটিয়েছেন দর্শক-সমর্থকদের। কিন্তু হঠাৎ করেই সমর্থকদের খানিক হতভম্ব করে তিনি বিদায় বলে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।

মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই তিনি অবসর নিয়ে নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। অবশ্য তাঁর মধ্যে হয়ত আর ক্রিকেটকে দেওয়ার জন্যে কিছু ছিলোনা। তবুও ভক্ত-সমর্থকেরা অন্তত প্রত্যাশা করেছিলেন যে আরো বছর খানেক তিনি থেকে যাবেন ক্রিকেটে। দিয়ে যাবেন বিনোদন।

কিন্তু, তা আর হলো কই। কিন্তু তাঁর এমন সিধান্তের পেছনের কারণ ছিল আড়ালেই। তিনি নিজে থেকে সে বিষয়ে খুব একটা কথা বলেননি কিংবা বলতে চাননি। এবার মুখের কুলুপ খুলে তিনি জানালেন তাঁর কারণ।

তবে তাঁর আগে দর্শকদের উৎসাহ ছিলো তাঁকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে আবার দেখা যাবে কিনা সে নিয়ে। ২০২১ সালের আইপিএলের সমাপ্তির পর প্রত্যেকটি দলকে সর্বোচ্চ চারটি খেলোয়াড় রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ ছিলো। দর্শকদের আকর্ষণে সেটাও ছিলো যে ভিলিয়ার্সকে তাঁর সাবেক দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরু রেখে দেয় কিনা।

কিন্তু, সবাইকে হতাশ করে তাঁকে রেখে দেয়নি দলটি। সুতরাং তাঁকে হয়ত নতুন করে অন্যকোন দলে দেখা যেতে পারে আসন্ন আইপিএলে। কিন্তু আদৌ তিনি আইপিএল খেলবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। কেননা এই আইপিএলই তাঁকে উপলব্ধি করায় যে ক্রিকেটকে তাঁর বিদায় জানানো উচিৎ। এমনটাই বলেছেন মিস্টার থ্রিসিক্সটি।

ভিলিয়ার্স বলেন, ‘ক্রিকেট বিবেচনায় আমি আইপিএলে এসেছি বিগত বেশকিছু বছর ধরেই। সবকিছুই করেছি আমি উপভোগ করতাম বলেই। কিন্তু এবার আইপিএলে আসতে হবে ভেবেই আমার খানিক অনীহা তৈরী হয়। এই জৈব সুরক্ষা বলয় এবং কোভিড পরিস্থিতি এসব কিছু মিলিয়ে দুই তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে এসে থেকে যাওয়া এবং নানান প্রতিবন্ধকতা সবকিছু আমার জন্যে উপভোগ করার বিষয়টা কঠিন করে দিচ্ছিলো।’

২০২১ সালের আইপিএল হয়েছিল দুইভাগে। সেখানে বায়ো বাবলের কঠোর প্রতিবন্ধকতা খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলো। এই মানসিক অবসাদ ছাড়াও ভিলিয়ার্সের নিজস্ব তাগিদ শেষ হয়ে যাওয়াও তাঁর ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

ভিলিয়ার্স আরো বলেছেন, ‘আমার কাছে মাঠে দাঁড়িয়ে রান করা দলের জন্যে অবদান রাখা সবকিছুর মাহাত্ম্য কমে যেতে শুরু করে আমি খেলাটা আর উপভোগ করছিলাম না। সেটাই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো যে সময় এসেছে আমার গ্লাভস তুলে রাখার।’

প্রোটিয়া সাবেক অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স ক্রিকেটটাকে খুব ভালোবাসতেন এবং উপভোগ করতেন। অন্তত তাঁর কথায় সেই আভাসটুকু পাওয়া যায়। একটা মানুষের কাছে যখন তাঁর ভালবাসার প্রতি অনীহা জেগে যায় তখন সেখান থেকে সড়ে আসাই বরং শ্রেয়। তাছাড়া ভিলিয়ার্স মনে করেন তিনি সব সময় নিজেকের পুশ করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো কোন সত্ত্বা নন।

ভিলিয়ার্স বলেন, ‘আমি কখনোই সেই ব্যক্তিটা ছিলাম না যে নিজের সর্বোচ্চ এনার্জি এবং ক্রিকেটিং স্কিলকে পুশ করে ক্রিকেটকে আকড়ে ধরে থাকবে। আমি সবসময় নিজের আনন্দের পাশাপাশি ক্রিকেটের বিনোদনের জন্যে ক্রিকেট খেলেছি। যখন আমার মনে হয়েছে সেই জায়গাটা আর অবশিষ্ট নেই আমি নিজেকে সড়িয়ে নিয়ে এসেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link