গোসসা কিংবা অভিমান অথবা নেহাৎ দায়িত্ববোধ কোন এক কারণে বর্ণাঢ্য সফল এক অধিনায়কত্বের সিংহাসন ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি। গেল মাস তিনেকের মধ্যেই সবধরণের নেতৃত্বের জায়গা থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিলেন বিরাট।
প্রথম ইস্তফা দিলেন টি-টোয়েন্টি থেকে। এরপর ধাপে ধাপে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর, ভারত জাতীয় দলের ওয়ানডে দল ও শেষমেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
হঠাৎ করেই বিরাটের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই খানিক হতভম্ব হয়ে পড়েছিলো। সামান্য এক টুইট বার্তায় ভারতের অন্যতম সফল একজন অধিনায়ক কিনা জানিয়ে দিলেন নিজের ইস্তফার কথা। না এতটাও অপেশাদার বিরাট নন। বিরাট জানেন ঠিক কখন তাঁর কি করা উচিৎ। তিনি তাই করেছেন বিশ্ববাসীকে তাঁর দায়িত্ব ছাড়ার বার্তা দেওয়ার আগে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগেই হয়ত তিনি সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। তবে কাওকে ঘুনাক্ষরেও টের পেতে দেননি। অপেক্ষা করলেন সঠিক সময়ের। সেই সময় এলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর। কেপ টাউনে শুক্রবার শেষ টেস্ট ম্যাচের ফলাফল চলে আসে। তা ভারতের বিপক্ষের ফলাফল।
এরপর সেই সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামের ডাইনিং রুমে একটা লম্বা সময় ধরে বিরাটকে আলোচনা করতে দেখা যায় বর্তমান ভারত দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে। দীর্ঘ সেই আলোচনায় হয়ত দ্রাবিড় তাঁকে বোঝাবার চেষ্টা করেছে নিশ্চয়।
তবে বিরাটের মতো ধীরচিত্তে দাপুটে বোলারদের সামলে নেওয়া ব্যাটার, নিজের সিধান্তে অনড়ই থেকেছিলেন। খুব একটা যুক্তিতে তাঁকে বেঁধে ফেলা দুষ্কর। হাজার হোক তা তো আর গুগলি নয়। অনেকের মনে হয়ত প্রশ্ন জেগেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতায় তাঁকে এমন সিধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। তবে বিরাটের ঘনিষ্ঠ এবং ভারতীয় দলের অনেকেই বলেছেন যে বিরাট সিরিজটি জিতলেও নাকি একই রকম সিধান্ত নিতেন।
দ্রাবিড়ের সাথে ঘন্টাখানেক আলোচনা শেষে তিনি বেড়িয়ে চলে গেলেন টিম হোটেলে। সবাই দিনের ধকল কাটিয়ে উঠে বিশ্রাম নিয়ে জড়ো হলেন একটি রুমে। সেখানে দিনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটাই হয়ত খেলেন ভারতীয় টেস্ট দলে থাকা সদস্যরা।
সতীর্থ এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিরাট জানিয়ে দিলেন তাঁর সিধান্ত। অধিনায়কের পদটা যে তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন তা জানালেন। সতীর্থরা হয়ত খানিক অবাক হয়েছিলেন সেই সাথে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন দলের সদ্য সাবেক হওয়া দলপতিকে।
এরপর চাইলেই বিরাট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর সিধান্ত জানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে প্রয়োজন মনে করলেন ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার উর্ধ্বতন কাওকে জানানো। সেটা প্রয়োজনের থেকেও বড় কর্তব্য। তিনি ফোন করলেন বিসিসিআই সিইও জয় শাহ-কে।
তাঁকেও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত জানান। তবে বোর্ডের সাথে বিরাটের একটা মনোমালিন্য যে রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে বিতর্কের কথা নিশ্চয়ই স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। বিরাট তাঁর সিধান্ত শুধুমাত্র বোর্ডের সিইও-কে জানান। অথচ তিনি যখন টি-টোয়েন্টির অধিনায়কের পদ ছাড়ার সিধান্ত নিয়েছিলেন তখন বোর্ডের উর্ধ্বতন সকল কর্মকর্তাদের কনফারেন্স কলের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন।
নিতান্তই একটা চেইন অব কমান্ড না মানতে হলে হয়ত বিরাট সিইও-কেও জানাতেন না বিষয়টা। তবে পেশাদার বিরাট তা করেননি। নিজের পেশাদারিত্বটা ধরে সঠিক পন্থায় বিদায় জানালেন অধিনায়কত্বের অধ্যায়কে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে গল্পে তিনি শুধু রান করেই যেতে চাইছেন। সেখানে বড্ড ফিঁকে হয়ে গেছে সেরা অধিনায়ক হওয়ার ইচ্ছেটা। তবে তিনি যে সেরা নন তা কিন্তু নয়।
ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক বিরাট কোহলি। আর যদি টেস্টের হিসেব করা হয় তবে সেখানে জয়ের পরিসংখ্যানে তিনি থাকবেন বিশ্বের সফলতম অধিনায়কদের তালিকার তৃতীয় স্থানে। সেই যাই হোক। বোর্ডকে নিজের সিধান্ত জানানোর পরই বিরাট নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিশ্ব ক্রিকেটকে জানান দেন দীর্ঘ সাত বছরের দায়িত্বভার থেকে নিজেকে মুক্ত করলেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হলো বিরাটের অধিনায়কত্বের একটি অধ্যায়।