একটা সুযোগ যেন বদলে দিতে পারে সবকিছু। একটা সুযোগ একজন বোলার কিংবা ব্যাটারকে নিয়ে যেতে পারে সফলতার চূড়ায়। ক্রিকেট পাড়ায় ব্যাটাররা প্রায়শই ফিল্ডারদের ভুলে জীবন পেয়ে থাকেন। এই সুযোগ পেতেও যে ভাগ্যর প্রয়োজন।
পাঠক, বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ‘ভাগ্যবান’ হিসেবে কাকে মনে করেন আপনি? মার্নাশ লাবুশেনের অভিষেকের পর থেকে সবচেয়ে বেশি জীবন কে পেয়েছেন জানেন কি?
সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে অ্যাডিলেড টেস্টে ১০৩ রানের পথে চারবার জীবন পেয়েছিলেন অজি তারকা মার্নাস লাবুশেন। অবশ্য এটিই প্রথমবার নয় যেখানে এক ইনিংসে তিনবার জীবন পান লাবুশেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে এর আগেও তিনি বহুবার জীবন পেয়েছেন। ২০১৯ অ্যাশেজেও হেডিংলিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ৮০ রানের পথে তিনবার তিনি জীবন পেয়েছেন। এছাড়া ওই সিরিজে আরো দুই ইনিংসে তিনি দু’বার করে জীবন পান।
লাবুশেনের অভিষেকের পর থেকে ক্যাচ মিস ও স্টাম্পিং মিসে সবচেয়ে বেশি জীবন পাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই মূলত এই আলোচনা।
লাবুশেনের অভিষেকের পর থেকে টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার জীবন পেয়েছেন লাবুশেনই! তাঁর খেলা মোট টেস্টে ১৬ বার তিনি জীবন পেয়েছেন। দ্বিতীয়তে আজিঙ্কা রাহানে ১৫ ও বেন স্টোকস জীবন পেয়েছেন ১৩ বার করে। এছাড়া দিমুথ করুনারত্নে ১৩ বার ঋষাভ পান্ত জীবন পেয়েছেন ১২ বার।
তবে লাবুশেনের অভিষেকের পর থেকে সব ক্রিকেটারদের খেলা মোট টেস্টে জীবন পাওয়ার হার বিবেচনায় সবার উপরে আছেন বাংলাদেশি তারকা ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ২২ বার আউটের সুযোগে তিনি মোট ১২ বার আউট হয়েছেন! অপরদিকে বাকি ১০ বারই জীবন পান মুশফিক! মোট আউটের সুযোগের ৪৫.৪৫ শতাংশ বারই জীবন পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
এই তালিকায় দ্বিতীয়তে আছেন লাবুশেন। ৪১ বার আউটের সুযোগের মধ্যে ২৫ বার তিনি আউট হয়েছেন, বাকি ১৬ ইনিংসেই তিনি জীবন পেয়েছেন। শতাংশ অনুযায়ী জীবন পাওয়ার হার ৩৯.০৬। তালিকার তিনে আছেন পাকিস্তানি ওপেনার আবিদ আলি। যিনি ২১ বার আউট হওয়ার সুযোগ দিলেও এর মধ্যে ১৪ বার আউট হয়েছেন, আর বাকি ৭ বারই তিনি জীবন পেয়েছেন। মোট আউট হওয়ার সুযোগের ৩৩.৩৩ শতাংশ তিনি জীবন পান।
এই তালিকায় আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। ২৮ বার আউটের সুযোগ দিয়ে ১৯ বার তিনি আউট হয়েছেন, ৯ বার জীবন পান এই ব্যাটার। জীবন পাওয়ার হার ৩২.১৪ শতাংশ। এই তালিকার সবশেষ আছেন অজি ব্যাটার উসমান খাজা। ২৫ বার আউটের সুযোগে ১৭ বার তিনি আউট হয়েছেন, ৮ বার জীবন পান এই অজি তারকা। আউটের সুযোগের ৩২ শতাংশই তিনি জীবন পেয়েছেন।
লাবুশেনের অভিষেকের পর যেকোনো ইনিংসে প্রথমবার জীবন পাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি রান করার তালিকায় একটু নজর দেওয়া যাক।
এই তালিকায় সবার উপরেই আছেন লাবুশেন। অভিষেকের পর মোট রান করেছেন ৫৭ গড়ে ২২২০। এই ২২২০ রানের মধ্যে প্রথমবার জীবন পাওয়ার পর তিনি করেছেন ৪২.৩৮ গড়ে ৫৬৭ রান! তালিকার দুইয়ে আছেন দিমুথ করুনারত্নে। লাবুশেনের অভিষেকের পর করেছেন ৪৪ গড়ে ১৯১২ রান। আর কোনো ইনিংসে প্রথমবার জীবন পাওয়ার পর ৩২ গড়ে মোট ৫৪৪ রান।
এরপরই আছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। লাবুশেনের অভিষেকের পর এই তারকা ৩৯ গড়ে ২০৮৮ রান করেছেন। যার মধ্যে ২৯ গড়ে ৪৬৯ রান করেছেন জীবন পাওয়ার পর! এই তালিকায় আরো আছেন ব্ল্যাকক্যাপস অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৬৪ গড়ে তিনি মোট ১৯৩৪ রান করলেও এর মধ্যে জীবন পাওয়ার পর ৪৫.৬৪ গড়ে করেছেন ৪২৮ রান!
পরিসংখ্যান অনুযায়ী লাবুশেনের অভিষেকের পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘ভাগ্যবান’ ব্যাটার মার্নাশ লাবুশেন! সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগের স্বদ্যব্যবহারও তিনি করেছেন তা আলোচ্য পরিসংখ্যানে স্পষ্ট।