মিলনের মোহনায় তাঁরা

ভারতীয় ক্রিকেট একটা ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এর শুরুটা হয় গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই। বিরাট কোহলি জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপ শেষেই টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়বেন তিনি।

তখন, হয়তো বিরাট নিজেও জানতেন না যে – আর মাত্র ক’টা মাস বাদেই ক্রিকেটের সব ফরম্যাটের মসনদই ছেড়ে দিতে হবে তাঁকে।

বিশ্বকাপের পর বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) বিরাটকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে ওয়ানডে দলের নেতা বানায়। তখন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় গণমাধ্যম কোহলি-রোহিত দ্বন্দ্বের গন্ধও পেয়েছিল। এমনকি বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির সাথেও যে বিরাট কোহলির সম্পর্কটা ভাল যাচ্ছে না – সেটা ভারতীয় ক্রিকেটে এখন ওপেন সিক্রেট।

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পরই অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ভারতের হয়ে তো বটেই বিশ্বক্রিকেটে সেরা টেস্ট অধিনায়কের একজন ছিলেন বিরাট। ৬৮ টেস্টে তার অধীনে ভারত জয় পেয়েছে ৪০ ম্যাচে। ভারতের হয়ে যেকোনো অধিনায়কের এটি সেরা রেকর্ড। এই তালিকার দুইয়ে আছেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁর অধীনে ৬০ টেস্টের ২৭ টিতে জয় পেয়েছে ভারত।

টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময়ই বিরাট বলেছেন, তাঁর ক্যারিয়ারে বড় অবদান ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির। ধোনি না থাকলে হয়তো ভারতের অধিনায়কই হওয়া হয়ে ‍ওঠে না কোহলির। আবার ধোনির নেতৃত্বকেও পূর্ণতা দিয়েছিল কোহলির পারফরম্যান্স। সব মিলিয়ে দু’জন মিলেছিলেন অদ্ভুত এক মিলনের মোহনায়। তবে, মিলের এখানেই শেষ নয়, আরো আছে।

  • ৩৩ বছর বয়সে অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ

ধোনি ও বিরাট দু’জনেই অধিনায়ক হিসেবে তাদের শেষ ম্যাচ খেলেছে ৩৩ বছর বয়সে এসে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ধোনি এবং বিরাট শেষ ম্যাচ খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। অবশ্য ধোনি ওই সিরিজেই অবসরের ঘোষণা দেন।

বিরাট এখনো ভারতের হয়ে খেলছেন। ধোনি যখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এটা ছিলো সবার জন্যই অবাককরা একটা সিদ্ধান্ত। তবে ধোনির জায়গায় পরবর্তীতে অধিনায়ক হিসেবে এসেছিলেন বিরাট।

  • সাত বছরের টেস্ট অধিনায়কত্ব

অধিনায়ক হিসেবে ভারতের টেস্ট দলে প্রায় সাত বছর ছিলেন বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনি দু’জনেই।। রাহুল দ্রাবিড় টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর দায়িত্ব পান লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে। কুম্বলের অবসরের পর সেই দায়িত্ব পান ধোনি।

আর ধোনির পরবর্তী সময়ে প্রায় সাত বছর টেস্ট অধিনায়কত্ব করেন বিরাট। ধোনির অধীনে ভার‍ত পেয়েছিলো শক্তিশালী স্পিন অ্যাটাক, বিপরীতে বিরাটের অধীনে সলিড পেস অ্যাটাক পেয়েছে ভারত।

  • এস.ই.এন.এ. দেশগুলোতে ১৪ হার ও ১ সিরিজ জয়

কাকতালীয়ভাবে ধোনি এবং বিরাট দু’জনেই এস.ই.এন.এ. দেশগুলোতে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) ১৪ হার ও ১ টি সিরিজ জিতেছে। অবশ্য বিরাটের অনুপস্থিতিতে তাঁর দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয় ও ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে এগিয়ে রয়েছে। অবশ্য বিরাটের তুলনায় ধোনির দল সেনা দেশগুলোতে বেশি স্ট্রাগল করেছে।

বিরাটের অধীনে টেস্ট ক্রিকেটের সেরা দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে ভারত। ২০১৬ সালে তার অধীনেই টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসে ভারত। এরপর প্রায় পাঁচ বছর শীর্ষে থেকে সাদা পোশাকে আধিপত্য বজায় রাখে বিরাটের দল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারলেও বিরাটের অধীনে টেস্টে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করেছিলো ভারত।

অপরদিকে, ধোনির নেতৃত্বে ভারত ওয়ানডে বিশ্বকাপসহ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয় পেলেও টেস্টে বিরাটের রেকর্ডের তুলনায় পিছিয়ে ছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। বিরাটের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ায় হতবাক হয়েছেন ক্রিকেট সমর্থকরাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link