যেভাবে ফিরছেন কুলদ্বীপ

সবশেষ জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন গেলো বছর ২০২১ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর আর সুযোগ পাননি ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদ্বীপ যাদব। গেলো দুই বছর ধরেই দলের অনিয়মিত এক মুখ তিনি। সুযোগ পেয়েছেন হাতে গোনা কয়েকবার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ সুযোগ পাওয়ার পর প্রায় ৭ মাস পর জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরেছেন কুলদ্বীপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিলো অনেকটা স্বপ্নের মতোই। ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুত একশো উইকেটের তালিকায় উপরের দিকেই অবস্থান করছেন কুলদ্বীপ। মাত্র ৫৮ ম্যাচেই শিকার করেন নিজের শততম উইকেট। ২২ গজে নিজের স্পিন বিষে ভুগিয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। তবে এরপরই ধীরে ধীরে কুলদ্বীপের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা নিচের দিকে নামতে থাকে। যুজবেন্দ্র চাহাল, রবীন্দ্র জাদেজাদের ভীড়ে নিজের জায়গাও হারিয়ে ফেলেন জাতীয় দলে। স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে সুযোগ পেতেন কালেভদ্রে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) ম্যাচের পর ম্যাচ কাটিয়েছেন বেঞ্চে।

এরপর হাঁটুর ইনজুরিতে জাতীয় দলের বাইরেও ছিলেন বেশ কিছু সময়। ইনজুরি কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরতে কাজ করেছেন কোচের সাথে। লাইন-লেন্থের সাথে রান আটকানোর ব্যাপারে দিয়েছেন বিশেষ মনযোগ। এছাড়াও কুলদ্বীপের কোচ কপিল দেব পান্ডে মনে করেন তাঁর ছাত্র জাতীয় দলে অনেকটাই উপেক্ষিত। সামর্থ্য থাকলেও গেলো বছর দুয়েক খুব বেশি সুযোগ পায়নি কুলদীপ।

কুলদ্বীপের কোচ কপিল দেব পান্ডে, ‘আমি ওর বোলিং নিয়ে কাজ করেছি। আমি ওর চায়নাম্যান ও গুগলি নিয়ে কাজ করেছি। শর্ট বল না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি যাতে ব্যাটার শটস খেলার সুযোগ না পায়। আগে শুধু উইকেট নেওয়ার ব্যাপারে কাজ করেছি এখন উইকেটের পাশাপাশি রান আটকানোর ব্যাপারেও কাজ করছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালো লেন্থে বল করা, আমি এ ব্যাপারে কাজ করেছি। তাঁর বেশ কয়েকটি ডেলিভারি আছে ফ্লিপারস ছাড়াও এখন স্লাইডার করতে পারে সে।’

সব মিলিয়ে স্কিলের উন্নতির ব্যাপারটা ছিলো কুলদ্বীপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে নিয়েই নিজের কোচের সাথে কাজ করেছেন এই স্পিনার।

গেলো বছর হাঁটুর ইনজুরিতে সার্জারির পর প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে স্কোয়াডে জায়গা পান তিনি। কপিল পান্ডে বলেন, ‘সে খুব ভালো অনুশীলন করেছে ইনজুরির পর। ব্যাঙ্গালোরে তাঁর ট্রেইনারের সাথে কাজ করেছে বেশ কিছু সময় এবং কামব্যাক করেছে। প্রথম এক সপ্তাহ সে ৪ ওভার করে করেছে এরপর যখন দেখলাম ওর মধ্যে ফিল্ডিং বা ক্যাচিংয়ে কোনো সমস্যা নেই এরপর থেকে ৭ ওভার করে করেছে। কিছুদিন এই অবস্থার পর কুলদীপ সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত টানা বোলিং করেছে লম্বা সেশনে। রঞ্জি ট্রফির যেসব ভালো খেলোয়াড় ছিলো তাদের নিয়ে ২-৩টি ম্যাচও আয়োজন করি। ইনজুরির পর পা আগের অবস্থায় যেতে অবশ্যই কিছুটা সময় প্রয়োজন, আমি সেটা নিয়েই কাজ করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুরুতে কুলদ্বীপ কিছু সমস্যা মোকাবেলা করছিলো, তবে এখন সুস্থ সম্পূর্ণ। অনুশীলনেও সে ৭৫ রানে ৩ উইকেট শিকার করে। কুলদ্বীপের সাথে সব বিষয়েই অনুশীলন করেছি। ভালো স্পিন করতে হলে আপনার আঙুল অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। এছাড়া কিছু বড় উইকেটও নিতে হবে। ধরেন বাবর আজমকে আউট করতে হবে? এই অবস্থায় তাকে ওভার দ্য উইকেটের পাশাপাশি রাউন্ড দ্য উইকেটও বল করতে হবে। আপনি যখন উইকেটের দুই পাশ থেকে বল করবেন ব্যাটার ভাববে আপনি ওভার দ্য উইকেটে চায়নাম্যান বোলিং করবেন, তখন আপনি সহজেই গুগলিও করতে পারবেন। আমরা ওভার দ্য উইকেট, রাউন্ড দ্য উইকেট – সবভাবেই অনুশীলন করেছি।’

এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে কুলদ্বীপের মাঝে এখনো অনেক রহস্য আছে। তার মধ্যে সেই স্কিল আছে নিজের সেরাটা দিয়ে ফিরে আসার। এবং মিডল অর্ডারে দলকে প্রতিপক্ষের জুটি ভেঙে দিয়ে দলকে উইকেট এনে দিতেও যথেষ্ট সক্ষম তিনি। কুলদ্বীপের কোচ বলেন, ‘আমি শুধু তাঁকে বলেছি এটা ক্রিকেট, এটা এক দিনের খেলা না এটা ১০০ দিনের খেলা। ক্রিকেটে ক্রিকেটাররা আসবে-যাবে। আজকের পারফরম্যান্স শূন্য হলেও কালকে সেটা ১০০ হতে পারে। সবসময়ই পজিটিভ থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link