২০১৫ সালে মিশেল জনসনের অবসরের পর থেকেই সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়া দলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব তৈরি হয়েছিল। রঙ্গিন পোশাকে একসময় জেমস ফকনার এবং বর্তমানে মার্কাস স্টয়নিস দারুন কার্যকরী হলেও সাদা পোশাকে অজিদের কার্যকরী এক পেস অলরাউন্ডারের অভাববোধটা আছে।
সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজ সিরিজে ইংলিশ ওপেনারদের দূরাবস্থা চলমান থাকা সত্ত্বেও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভাল ভাবেই শুরু করে দুই ইংলিশ ওপেনার ররি বার্নস এবং জ্যাক ক্রলি। কিন্তু বিধিবাম, হঠাৎ যেন কালবৈশাখী ঝড় নেমে এসেছিলো ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপে।
ওপেনারদের ৬৮ রানের বেশ ভালো একটি জুটি সত্ত্বেও মাত্র ১২৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। আর এই ধ্বংসাত্মক ঝড়ের শুরুটা হয়েছিলো ২১বছর বয়সী তরুন অজি পেসার ক্যামেরন গ্রিনের হাতে। এই তরুনের এক স্পেলেই অসহায় আত্মসমর্পণ করে একে একে ফিরে যান বার্নস, ক্রাউলি আর মালানরা।
এরপর আর মাত্র ৫৬ রান যোগ করতেই সাজঘরে ইংল্যান্ড দল। শুধু বল হাতেই নয়, এই টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৭৪ এবং ২৩ রান করেন এই তরুণ তুর্কি। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের জন্য যেনো পুরষ্কার স্বরূপ এই তরুন অলরাউন্ডারকে পাঠিয়েছেন বিধাতা।
১৯৯৯ সালের জুনের ৩ তারিখে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সুরিয়াকো শহরে জন্ম নেন গ্রিন। প্রথম ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয়েছিল সুবিয়াকো-ফ্লোরেট ক্রিকেট ক্লাবেই। ছোটবেলা থেকে মিডিয়াম ফাস্ট বোলিং করতেন গ্রিন। কিন্তু রান করার প্রতি তীব্র বাসনা তাঁকে একজন কার্যকরী অলরাউন্ডারে রূপ দেয়।
তাসমানিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম-শ্রেনীর ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৭ সালে। প্রথম ম্যাচেই ২৪ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে রাখেন ৬ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই সুদর্শন তরুন। এরপর থেকেই ঘরোয়াতে নিয়মিত পারফর্মার বনে যান তিনি। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল পারফর্ম্যান্স সেন্টারে শীতকালীন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন ক্যামেরন গ্রিন।
২০১৯-২০ মৌসুমটা স্বপ্নীলভাবে কাটান এই অজি অলরাউন্ডার। গ্যাবায় কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৭ রান সংগ্রহের পর ১২১ রানের আরেকটি অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচের ফলাফল পরাজয় থেকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান। একই মৌসুমে আরো দুটি শতরানের ইনিংসও খেলেন তিনি।
এরপর ২০২০ সালের অক্টোবরে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। জাতীয় দলের দরজাও খুলতে বেশি সময় লাগেনি গ্রিনের।
গল্পের মত এত সুন্দর আর শৈলীময় ক্যারিয়ার অবশ্য হয়নি, বারবার পিঠের ইনজুরিতে ছিটকে পড়েছেন। কিশোর বয়স থেকেই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ইনজুরি। বোলিং থেকে সাময়িক অবসরও নিতে হয়েছিলো। তবে থেমে থাকেননি কিংবা দমে যাননি। লড়াই করে ঠিকই ফিরেছেন।
সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজ একেবারে নিঁখুতভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন সদ্য আন্তজার্তিক অঙ্গনে পা রাখা এই ক্রিকেটার। যখন অধিনায়ক আস্থা রেখেছেন তখন প্রতিদান দিয়েছেন, নিজের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিয়েছেন দলের জন্য।
পাঁচ ম্যাচে ৩২-এর বেশি গড় নিয়ে ২২৮ রান, আর বোলিংয়ে ১৫-এর বেশি গড়ে ১৩ উইকেট। এই পরিসংখ্যানে আদৌ কার্যকরীতা বোঝা সম্ভব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে। মাত্র একটা ইনিংস বাদে বাকি ৯টা ইনিংসেই উইকেট পেয়েছেন এই পেসার।
ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান রুট, স্টোকস কিংবা ডেভিড মালানও এই তরুনের কাছেই পরাস্ত হয়েছে বেশ কয়েকবার। ব্যাট হাতেও লোয়ার মিডল অর্ডারে আছে ভরসার করার মতই পারফরম্যান্স। যদিও এখনো সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি।
ভারতের বিপক্ষে অভিষিক্ত হওয়া এই ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডারকে এখনো পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। বহু প্রতিকূলতা আর প্রতিযোগিতাইয় জয়ী হয়েই নিজের সক্ষমতা দেখাতে হবে। হ্যাঁ, এখনও বোধহয় তাঁকে নিয়ে স্তুতিকাব্য লিখার সময় আসেনি। তবু যে সম্ভাবনার আলো নিয়ে এসেছেন ক্রিকেট আঙ্গিনায় তাতে একজন নিরপেক্ষ ক্রিকেটভক্ত হিসেবে ওই আলোতে স্নান করতে চাইতেই পারি। স্টিভ ওয়াহদের উত্তরসূরি হয়ে এই তরুন তুর্কি নিজেকে নিয়ে যাবেন সফলতার শীর্ষে আপাতত প্রত্যাশা এটাই।