চারু শর্মা। নব্বইয়ের ক্রিকেট দর্শকদের জন্য এক নস্টালজিক নাম। সেই শারজাহ কিংবা টরেন্টোর টুর্নামেন্টগুলোর কথা মনে পড়ে যাওয়ার কথা। ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দলের টুর্নামেন্টে ম্যাচের আগে পরের এক নিয়মিত মুখ ছিলেন এই চারু শর্মা। বিশেষ করে মন্দিরা বেদির সাথে তাঁর অনুষ্ঠানগুলো ক্রিকেটের এক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিলো।
কিন্তু কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই চারু শর্মা। গত প্রায় এক যুগ ধরে ক্রিকেটের সাথে কোনো সম্পর্কই ছিলো না তার। অবশেষে এক দূর্ঘটনার ফলে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসলেন চারু শর্মা। এসেই একেবারে সেই আগের দিনের মত করে সামাল দিলেন পরিস্থিতি।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৫তম আসরের নিলাম চলাকালীন ঘটে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। নিলাম সঞ্চালক হিউজ অ্যাডমিডস হুট করেই নিলাম চলাকালীন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত মেডিকেল টিমের সাহায্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই ইংলিশ আইপিএল নিলাম সঞ্চালককে।
পরবর্তীতে জানা যায় তিনি সুস্থ আছেন এবং চাপের কারণেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি সময় নিলাম কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর শুরু হয়ে নতুন এক সঞ্চালকের মাধ্যমে!
এলেন সেই চারু শর্মা।
বিভিন্ন লিগে নিলাম সঞ্চালনার অভিজ্ঞতাও ছিলো তাঁর। অভিজ্ঞতা ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লাইভ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার। এডমিডসের অসুস্থতায় আইপিএলের চেয়ারম্যান ব্রিজেশ প্যাটেলের ফোনে ব্যাঙ্গালোরেই থাকা চারু দ্রুত পৌঁছে যান নিলাম রুমে! চারু নিলামে অনুষ্ঠিত হওয়া হোটেলে পৌঁছানো অবধি জানতেনই না কেনো তাকে ডাকা হচ্ছে! কারণ চারু শর্মা তখনো টেলিভিশন অন করেননি!
হটাৎ করেই ব্রিজেশ প্যাটেলের কাছ থেকে ফোন পেলেন। ফোনে বলা হলো, ‘জলদি তৈরি হয়ে নাও এবং এখানে আসো। এটা ইমার্জেন্সি।’
চারু জানতেনও না কোন বিষয়ে বা কেনো তাকে ডাকা হচ্ছে! তবুও প্যাটেলের কথায় সম্মতি জানিয়ে দিলেন।
ব্যাঙ্গালোরের জ্যাম পেরিয়ে পৌঁছে গেলেন হোটেলে। হোটেল থেকে অবশ্য খুব বেশি দূরে ছিলেন না চারু শর্মা। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেখানে পৌঁছালাম আমাকে হিউজ এডমিডস সম্পর্কে বলা হলো যে তাঁর কি হয়েছে। আমি বললাম ওকে ঠিকাছে শুরু করা যাক। ১৫ মিনিটের মধ্যে সব কিছু জানলাম কি করতে হবে কতটুকু করার মতো বাকি আছে। আইপিএল অফিসিয়ালসরা আমাকে বললো বিরতি কি আরো বাড়াবো? আমি বললাম-না একদম ঠিকাছে; আমি একটু মজা করতে চাই।’
চারু বলছেন, এটা তার জন্য মজারই একটা ব্যাপার ছিলো, ‘মজা? হ্যাঁ, মজা। এটা আমার জন্য কোনো বড় বিষয় না। এটা শুধুমাত্র হাতুড়ি হাতে আরেকটা কর্মদিবসের মতোই। পার্থক্য শুধু এখানে হয়তো আরো বেশি মানুষ দেখবে। প্রফেশনাল জব প্রফেশনালই সেটায় দুই জন থাকুক বা দুই মিলিয়ন; ২ রুপি হোক কিংবা ২ বিলিয়ন সেটা ব্যাপার না।’
চারু সর্বশেষ ক্রিকেটে ছিলেন এই আইপিএলেই। ২০০৮ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর সিইও ছিলেন। দলের খারাপ পারফরম্যান্সের পর সরে দাড়ান। এরপর আর ক্রিকেটে ছিলেন না। সর্বশেষ তিনি প্রো কাবাডি লিগের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এসব করতে গিয়ে নিলাম বা ক্রিকেট ভুলে যাননি।
এর আগেও বিভিন্ন খেলার নিলামে কাজ করেছেন চারু। ব্যাঙ্গালুরুতে একটা আর্ট গ্যালারিতেও নিলাম সঞ্চালনা করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক! আমি অনেক ছোট লিগে নিলাম করেছি, অনেক লিগে আমি ছিলাম। স্কিল একই আছে শুধু উদ্দেশ্যেটা ভিন্ন।’
চারু শর্মা জানান আইপিএলের নিলামটা বেশ ভিন্ন, ‘এটা অনেক বড় এবং বৈশ্বিক একটা ব্যাপার। এখানে অনেক মানুষ জড়িত। যারা বিক্রি হতে পারেনি তাদের অবশ্যই খারাপ লাগছে। সন্দিপ লামিচানের জন্য খারাপ লেগেছে, আমার প্রতিবেশি দেশের সে অবিক্রিত ছিলো। আমি মনে করি আইপিএল নিলামের সাথে যারাই জড়িত সবাই খেলোয়াড় কেন্দ্রিকই। আপনি খুশি হন যখন কোনো প্লেয়ার চড়ামূল্যে বিক্রি হয়, নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পায়।’
চারু শর্মা অবশ্য খুশি আইপিএলের অংশ হতে পেরে এবং সঠিক সময়ে সাহায্য করতে পেরে। নিলাম রুমে থাকা সবাই সহ বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) অনেকেই বেশ প্রশংসাও করেন চারুর, ‘আমার জীবন খেলা নিয়েই। এটা সত্যি দারুন খেলার জন্য সার্ভিস দিতে পেরে তাও প্রয়োজনের সময়।’
চারু অবশ্য এডমিডসের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। তিনি বলেন, ‘সে হাসপাতালে ছিলো। আমি প্রার্থনা করি সে সুস্থ হয়ে যাবে।’