আরেক পেস ত্রয়ী

তাসকিন ও মুস্তাফিজ বারবার অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে বল করে যাচ্ছেন। আফগানিস্তানের দুই ওপেনারকে শট খেলতে বাধ্য করছেন। শুরুর দিকে খানিকটা মুভমেন্টও পাচ্ছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে দুই পেসারই বেশ কিছু ওয়াইড দিয়েছেন। তবে পেসারদের এই পরিকল্পনা দিন শেষ কাজে দিয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে অনেকদিন পর পেসারদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল।

সেই ২০১৫ সালের কথা মনে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তখন স্বর্ণযুগ। সেবছর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিন পেসার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিয়ম করে ঝড় তুলেছেন। বাংলাদেশের সেই পেস ত্রয়ী যতদিন গিয়েছে তত ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। এই নামগুলো সেইসময় বিশ্বের যেকোন ব্যাটিং লাইন আপে কাপন ধরাতে পারতো। দেশের মাটিতেও বাংলাদেশ এই পেস ত্রয়ীর ওপর ভর করে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিলো।

চান্দিকা হাথুরুসিংহে ও মাশরাফির ‘ব্রেন চাইল্ড’ ছিলো সে সময়ের সেই পেস ত্রয়ী। বাংলাদেশ এর আগে নিখাঁদ তিন পেসার নিয়ে অন্তত দেশের মাটিতে খেলানোর সাহস দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ দলে দু জন পেসার খেলানোও ছিলো একসময় বিলাসিতা। এক পেসার নিয়ে বাংলাদেশ বহু ম্যাচ খেলেছে। সেখান থেকে তিন পেসারের সংষ্কৃতিতে আসাটা খুব সোজা ব্যাপার ছিল না।

তবে এরপর খরা মৌসুমও এসেছে। পেস বোলিংয়ের ওই সংষ্কৃতি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হঠাত করেই পেস বোলার সংকটে পড়ে গেল। মাশরাফি বিদায় নিলেন। আস্তে আস্তে রুবেলের ধাঁর কমতে শুরু করলো। তাসকিনও ইনজুরি ও অফ ফর্মের গোড়াকলে পড়ে জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাচ্ছিলেন। বাংলাদেশ দলে যেন পেসারদের হাহাকার। একাদশ সাজানোর জন্য তিনজন পেসার পাওয়াই কঠিন হয়ে গেল।

তবে এরপরই আবার সুদিন ফিরলো। গত বছর দুয়েকে বাংলাদেশের পেস বোলিং অ্যাটাকে একটা বিপ্লব হয়ে গেল। নতুন, পুরানদের মিলে আবার সমৃদ্ধ হতে শুরু করলো বাংলার পেস আক্রমণ। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাজটা করেছেন তাসকিন আহমেদ। নিজের একাগ্র চেষ্টা যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরেছেন এই পেসার। গত একবছর ধরে তিন ফরম্যাটেই অগ্নিঝড়া বোলিং করছেন এই পেসার।

এছাড়া মাঝের অফ ফর্মটা কাটিয়ে উঠে মুস্তাফিজও নতুন বৈচিত্র এনে আরো ধারালো হলেন। গতবছর আইপিএলেও দুর্দান্ত বোলিং করলেন। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেন সেই ২০১৫ সালের দুর্ভেদ্য মুস্তাফিজুর রহমান।

তাসকিন, মুস্তাফিজের সাথে এরপর যুক্ত হলেন তরুণ তুর্কি শরিফুল ইসলাম। অভিষেকের পর থেকে তিন ফরম্যাটেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই পেসার। প্রতিনিয়ত বাইশ গজে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছেন। দ্রুতই নিজের বোলিংকে আরো শাণিত করছেন। ফলে এই পেসার বাংলাদেশকে লম্বা সময় সার্ভিস দিবেন বলেই ভাবা হচ্ছে।

সবমিলিয়ে এই তিন পেসার এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইন আপের কান্ডারি। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে এবাদত হোসেনের মত পেসারদেরও আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। ফলে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ এখন একটা শক্ত পেস আক্রমণ তৈরি করতে পেরেছেন।

বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরিফুল পেস ত্রয়ী রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও ভিত্তিটা পেসাররাই গড়ে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন এই তিন পেসারই।

ম্যাচের শুরুতেই আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিলেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ। নিজেদের পরিকল্পনার পুরোটা বাস্তবায়ন করেছেন মাঠে। এরপর তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন শরিফুল ইসলামও। এই তিনজন মিলেই নিয়েছেন আফগানিস্তানের ৭ উইকেট। এরমধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান মাত্র ৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আর তাসকিন ও শরিফুল নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। চট্টগ্রামের মাটিতে এই তিন পেসারই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপের পোস্টার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link