খাজা দ্য রান মেশিন

এই পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকেই শুরু করেছিলেন। এরপর সেখান থেকে পারি জমিয়েছেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। তবেই না বাস্তব হলো সেই স্বপ্নের টেস্ট ক্রিকেট। কখনো ক্যানবেরা, কখনো দুবাই দেখেছে তাঁর জাদুর কাঠি। তবে ফিরে আসার গল্প আরো খানিকটা বাকি ছিল। সিডনির টানা দুই সেঞ্চুরি তাঁকে ঠেলে দিল আবার সেই পাকিস্তানেই। জন্মভূমিতে খাজা আরেকবার ফিরলেন, আরেকবার খাজাও ফিরে আসার উপাখ্যান লিখলেন।

প্রায় দুই যুগ পর পুর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে মাটিতে পড়লো অস্ট্রেলিয়ার। সাথে এসেছেন পাকিস্তানের ঘরের একজনও। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে যিনি অবিস্মরণীয় এক যোদ্ধা। তিনি কতটা বড় ব্যাটসম্যান সেসব আলোচনা তোলা থাক। তবে ক্রিকেটের জন্য উসমান খাজার লড়াইটা অদ্বিতীয়। আর এই ক্রিকেটের টানেই আবার নিজের জন্মভূমিতে মহাকাব্যিক এক প্রত্যাবর্তন উসমান খাজার।

পাকিস্তানে তিনি আগেও এসেছিলেন একবার। ২০১০ সালে সাধারণ এক সন্তান হয়েই নিজের জন্মভূমিতে পা দিয়েছিলেন। তবে এবার খাজা পাকিস্তান গিয়েছেন নিজের স্বপ্নের পিঠে চড়ে। ৩৬ বছর বয়সী খাজার ক্রিকেটীয় লড়াই আবার তাঁকে নিয়ে গিয়েছে সেই পাকিস্তানের। আর করাচিতে খাজা আরেকবার প্রমাণ করলেন তাঁকে অজিদের টেস্ট দলে প্রয়োজন, তাঁকে ক্রিকেটের প্রয়োজন।

বারবার ক্রিকেট পাড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এই খাজাকে অস্ট্রেলিয়া বাদ দেয় কী করে। বাদ পড়াটাই যেন তাঁর নিয়তি হয়ে উঠেছিল। তবুও যখনই কারো ইনজুরিতে কিংবা কোন অঘটনে খাজার সুযোগ হয়েছে, তিনি জ্বলে উঠেছেন। আর এবার সুযোগটা যখন নিজের জন্মভূমিতেই এসেছে, তখন সেই ঋণ খাজা না চুকিয়ে থাকবেন কী করে।

প্রায় তিন যুগ আগের কথা। ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে চার বছর বয়সী খাজাকে নিয়ে তাঁর পরিবার পারি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই খাজা ক্রিকেট লড়াইটা শুরু। এরপর ছোট ছোট পায়ে এগোতে এগোতে খাজা একদিন স্বপ্নটা ছুয়েই ফেললেন। প্রথম মুসলিম ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক।

তবে খাজার গল্পটা এখানেই শেষ হয়না। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই ব্যাটসম্যান বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবুও অজিদের মন ভরেনি। খাজা চুপটি করে বসেছিলেন আরেকটি সু্যোগের অপেক্ষায়। এভাবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় এক যুগ পার করে ফেলেছেন। তবুও অস্ট্রেলিয়া দল তাঁকে একটা পাকা জায়গা করে দিতে পারেনি।

২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজেও দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। সেই সময় লাবুশেন দলে তাঁর জায়গা পাকা করেছিল। পরে স্মিথ ফিরলে খাজাকেই জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়। তবুও খাজা ক্রিকেটের সাথে লড়েছেন। এবছর সেই অ্যাশেজেই আবার ফিরে এসেছেন রাজার মত করে। সিডনিতে দুই ইনিংসে টানা দুই সেঞ্চুরি।

উসমান খাজা সিডনিতে লিখেছিলেন ফিরে আসার এক মহাকাব্য। ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়। তবে এরপরও পরের টেস্টে দলে তাঁর জায়গা হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কণ্ঠেও আক্ষেপের সুর ভেসে এসেছিল। তবে খাজার জন্য সবার আগে ক্রিকেটটা সত্য। এই খেলাটার জন্য তিনি যেকোন কিছু করতে পারেন।

তবে খাজাকে অস্ট্রেলিয়ার আবার প্রয়োজন হয়েছে। পাকিস্তানে প্রথম টেস্টেই খাজার ব্যাট আবার প্রমাণ করেছে কেন তিনি জরুরি। তিনি জানান দিয়েছেন কতটা অবহেলিত তাঁর ব্যাট। রাওয়ালপিন্ডিতে ৯৭ রানের এক ইনিংস খেলে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে এতে খাজার মন ভরে না।

করাচি টেস্টে নিজের পুরোটা নিঙরে দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে আরেকবার নিজের প্রয়োজনীতা বোধ করালেন, মাতৃভূমির ঋণ শোধ করলেন। তবুও যেন খাজার ব্যাট থামবার নয়। করাচি টেস্টের প্রথমদিন ছিল শুধুই খাজার। ২৬৬ বলে ১২৭ রানের এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। সকালে আবার ব্যাট হাতে নামবেন অস্ট্রেলিয়ার এই কান্ডারি, পাকিস্তানের এই সন্তান। আবারো প্রশ্ন করা যায়, এই খাজাকে অস্ট্রেলিয়া বাদ দিবে কী করে?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link