স্টিভ ওয়াহ নিজের খেলোয়াড়ী জীবনেই অদ্ভুত একটা কথা বলেছিলেন। তিনি যখন ভারতের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আসতেন তখন নাকি একটা অদৃশ্য চাপ টের পেতেন। ভারতের দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পরেই নাকি গ্যালারি ভর্তি দর্শক কেমন একটা আলোড়ন তৈরি করতো। আর সেই চাপটা অজি ফিল্ডারদের উপরও পড়তো। কেননা তখন ব্যাটিং করতেন নামতেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
চার নম্বরে শচীন নামার সময় থেকেই পুরো মাঠের পরিস্থিতিটা বদলে যেত। এমনকি সেটা অস্ট্রেলিয়ার মত দলকেও ভড়কে দিতে পারতো। আর সেই ফাঁকে কখন যেন শচীন ৩০ রানের মত করে নিজেকে সেট করে ফেলতেন। স্টিভ ওয়াহর সেই বয়ানই যেন আবার ফুটে উঠলো চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। বিরাট কোহলির আরেকটি ব্যর্থতার দিনে বেঙ্গালুরুর দর্শকরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারকে।
১৩৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে একটু চাপেই পড়েছিল ভারত। কিন্তু তখনই চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ডিজে বাজিয়ে দিলেন বলিউডের আইটেম সং। হতাশ হয়ে যাওয়া দর্শক যেন আবার প্রাণ ফিরে পেল। এরপরই ব্যাট হাতে আবার নিজের চেনা রূপ দেখালেন ঋষাভ পান্ত।
ব্যাট করতে নেমেই রিভার্স স্যুইপ করে যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। যেন আইপিএলের তালে, ছন্দে এবং ঢঙে একটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভারতের পুরনো এক ভেন্যু যেন টেস্ট ক্রিকেটকে গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানাল। একটা রৌদ্রজ্জ্বল সপ্তাহ ও করোনা মহামারির পর এই প্রথম সম্পূর্ণ দর্শক নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট ফিরলো চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। এছাড়া রবিবার সপ্তাহের ছুটির দিনটাকে যেন ষোল আনা পুষিয়ে দিয়েছেন ঋষাভ পান্ত, শ্রেয়াস আইয়াররা।
এমনিতেই ভারতের ক্রিকেটে আইপিএলের একটা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। ওদিকে এই টেস্টের প্রথম দিনেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরি তাঁদের নতুন অধিনায়কে নাম ঘোষণা করেছে। এবার এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে নেতৃত্ব দিনে ফাফ ডু প্লেসিস।
এছাড়া বিরাট কোহলি বেঙ্গালুরুর সাবেক অধিনায়কও খানিকটা আইপিএলের স্বাদ টেনে আনলেন টেস্ট ম্যাচের মাঝেই। ওভারের বিরতিতে কোহলি তাঁর ভিতরের লাল শার্টটা দেখিয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের মিমিক্রিও করলেন খানিকটা।
তবে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আনন্দে মাতিয়েছেন ঋষাভ পান্ত ও আর স্টেডিয়ামের ডিজে। পান্তের আবারো সেই আক্রমণাত্মক ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ বলে ৫০ রান। ১৬১.২৯ অবিশ্বাস্য স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা আর পান্তের ব্যাটের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজের বলিউড মিউজিক। আর বেঙ্গালুরুর দর্শকদের নাচ।
সবমিলিয়ে ভারত-শ্রীলঙ্কার টেস্ট ম্যাচের এই দিনটা যেন মনে হয়েছে আইপিএলের কোন ম্যাচ। এছাড়া বাইশ গজেও ভারতের ব্যাটসম্যানরা ক্রিকেটটা শর্টার ফরম্যাটের মত করেই খেলেছেন। চেন্নাশ্বামীর বোলিং পিচেও ভারত ব্যাটিং করেছে ৪.২৫ ইকোনমি রেটে।
শ্রেয়াস আইয়ার, মোহাম্মদ শামীরা কাউকর্ণারের উপর দিয়ে বিশাল ছয় মেরেছেন। ঋষাভ পান্ত ২৮ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি ছুয়েছেন। এছাড়া দুই ইনিংসে ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট করে বিশ্ব রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন এই ব্যাটার।
সবমিলিয়ে চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের এই দিনটা প্রমাণ করলো টেস্ট ক্রিকেটও কতটা রোমাঞ্চের হতে পারে। এই সময়ের দর্শকদেরকেও ক্রিকেটের প্রচীন এই ফরম্যাট কতটা মাতিয়ে রাখতে পারে। আইপিএল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যতকিছুই হোক লাল বলের ক্রিকেট তাঁর সৌন্দর্য্যে অটল।
শেষটা হল ভারতের অবিচ্ছেদ্য বিজয় দিয়ে। আইপিএলও কি তাই নয়!