জ্যোৎস্না-ঔজ্জ্বল্য-কলঙ্ক

চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। রুশ সুন্দরীরও আছে। ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ হন ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হয়ে! নিষিদ্ধ ড্রাগ মেলডেনিয়াম সেবনে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন তিনি। হতে পারতেন এমনকি আজীবন নিষিদ্ধ! ‘ডাক্তারের পরামর্শে ১৫ বছর বয়স থেকে অ্যাজমার মেডিসিন হিসেবে সেবন করে আসছেন এটি’ আত্নপক্ষ সমর্থন করে বলা কথার সত্যতা মিলেছে বলেই বেঁচে গেছেন তিনি।

মারিয়া শারাপোভা। টেনিস কোর্টের দুরন্ত এক তরুণীর নাম, র‍্যাকেট হাতে যিনি বিমুগ্ধ করেন সবাইকে। আবেদনময়ী দেহশৈলী, দুরন্ত শারীরিক ভাষা, কেতাদুরস্ত লাইফ স্টাইলের সাথে শৈল্পিক ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড আর রিভার্সের দারুণ সমন্বয়ে হয়ে উঠেছেন টেনিস নামক খেলাটির আদর্শ বিজ্ঞাপন।

তাঁকে শুধু ভালোবাসতে পারেন তাঁর খেলায় বিমোহিত হয়েই। এরসাথে যখন মিলিত হয় চেহারার মাধুর্য আর ঠোঁটের মায়াবী হাসি,তখন তাতে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কি? ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তখনকার জনপ্রিয় সার্চইঞ্জিন ইয়াহুতে সবচেয়ে বেশিবার খোঁজ করা নামটি মারিয়া শারাপোভা! এতেই বোঝা যায়, তিনি অনুসারীদের কতটা প্রিয়!

১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল রাশিয়ার ন্যাগান শহরে ইউরি শারাপোভ-ইয়েলিনা শারাপোভ দম্পতি। কোল আলো করে জন্ম নেন মারিয়া ইয়ুরেভনা শারাপোভা। ডাক নাম ‘মাশা’। বয়স যখন চার, বাবার বন্ধু সাবেক নাম্বার ওয়ান ইয়েভগনি কাফেলনিকভের বাবা অ্যালেকজান্ডার কাফেলনিকভ মাশাকে উপহার দেন একটি টেনিস র‌্যাকেট।

যেন এটার অপেক্ষাতেই প্রহর গুণেছিল সে! স্থানীয় টেনিস কোর্টে শুরু ধারাপাত দীক্ষা, হাতেখড়ি যাকে বলে। কিছুদিন পর সান্নিধ্য পান রাশিয়ার নামি কোচ ইউরি ইউতকিনের। তিনি সুপ্ত প্রতিভার আঁচ করেছিলেন, ছোট্ট শারাপোভাকে পাঠিয়ে দেন কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ‘টেনিস কমপ্লেক্সে’। রত্ন চিনতে নাভ্রাতিলোভারও দেরি হয়নি।

মাশার নতুন ঠিকানা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিক বোলেত্তেইরি টেনিস একাডেমি’। আন্দ্রে আগাসী-মনিকা সেলেসের মত তারকারা উঠে এসেছেন টেনিসের ‘গ্রেট ওয়াইড হোপ’ খ্যাত একাডেমিটি থেকে। সময়টা ১৯৯৪। বাবার হাত ধরে পাড়ি জমান ফ্লোরিডায়। মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইউরি দেশ ছেড়েছেন বটে, কিন্তু ছিল না পর্যাপ্ত সঞ্চয়। অর্থাভাবে মেয়ের খেলাধুলায় যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে তাই তিনি নেন থালাবাসন ধোয়ার চাকুরি।

বাবার ত্যাগ, শ্রম বিফলে যেতে দেননি শারাপোভা। ২০০৪ সালে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়। বয়স তখন সবে ১৭। ২০০৫ সালে প্রথমবার উঠেন র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। ততদিনে কষ্টের দিনগুলি পেছনে ফেলে নতুন সূর্যের আঁচ গায়ে মেখেছেন মাশা।

তারপর ২০০৬ সালে ইউএস ওপেন, দুইবছর পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নিজের আসনটা পাকা করে নেন শৈশব থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিং আর স্ট্যাম্প সংগ্রহের শখকে লালন করা শারাপোভা। সফলদের ক্যারিয়ার থামিয়ে দিতে ইঞ্জুরি বরাবরই চেষ্টারত থাকে। মাশার বেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটবে কেন?

২০০৭ সালে হানা দেয় কাঁধের ইনজুরি। নতুন করে মাথাচাড়া দেয় অজি ওপেন জয়ের পর। এতটাই যে, কোর্টে নামতে পারেননি পাক্কা এক বছর। কিন্তু, হাঁটতে শেখার আগেই যিনি শিখে গেছেন ব্যাট ধরা তার কাছে এসব তুঁড়িতে উড়িয়ে দেওয়া ব্যাপার। তিনি ফিরেছেন। ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে পূর্ণ করেছেন আরাধ্য ক্যারিয়ারস্লাম (চারটি গ্র্যান্ডস্লামের সবকটি জিতলে তাকে ক্যারিয়ারস্লাম বলে)। ২০১৪ সালে জিতেছেন দ্বিতীয় ফ্রেঞ্চ ওপেন, যা কি না মাশার পঞ্চম ও এখন পর্যন্ত সর্বশেষ গ্র্যান্ডস্লাম।

চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। রুশ সুন্দরীরও আছে। ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ হন ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হয়ে! নিষিদ্ধ ড্রাগ মেলডেনিয়াম সেবনে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন তিনি। হতে পারতেন এমনকি আজীবন নিষিদ্ধ! ‘ডাক্তারের পরামর্শে ১৫ বছর বয়স থেকে অ্যাজমার মেডিসিন হিসেবে সেবন করে আসছেন এটি’ আত্নপক্ষ সমর্থন করে বলা কথার সত্যতা মিলেছে বলেই বেঁচে গেছেন তিনি।

একসময় যার খেলার খরচ যোগাতে বাবাকে মাজতে হয়েছে থালাবাসন সেই শারাপোভাই ১১ বছর ধরে ছিলেন সর্বোচ্চ উপার্জিত নারী ক্রীড়াবিদ। বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোর্শে এবং লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড কোলে হানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। নিউইয়র্কে নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে (সুগারপোভা) খুলেছেন ক্যান্ডি ব্যবসা।

মারিয়া শারাপোভার গল্পটা রূপকথার মতোন। উত্থান পতন, নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। এসবকিছুই করেছেন মলাটবদ্ধ। ২৯টি ডব্লিউটিএ টাইটেল জেতা মাশা ২০১৮’র সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করেছেন নিজের আত্নজীবনী- ‘আনস্টপেবল : মাই লাইফ সো ফার’।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...