২০২১ সালে অর্ধেক হওয়া উত্তেজনাটা আবারো ফিরে আসছে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে। কাতারে যাবার মিশনে আজ মধ্যরাতে আলাদা ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইতালি ও পর্তুগাল। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নটা অবশ্য দু’দলের একটির পূরণ হবে, অন্যটিকে থাকতে হবে বাইরে। ইতালির প্রতিপক্ষ উত্তর মেসিডোনিয়া এবং তুরস্কের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল।
বলা যায় বাচাঁ মরার মিশনে নামতে হচ্ছে ইউরোর বর্তমান ও সাবেক চ্যাম্পিয়নকে। আজ্জুরিরা প্লে-অফ সেমিফাইনালে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও ইউরোর বর্তমান শিরোপাধারী দলটি খেলবে। প্লে-অফের অন্য ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও লড়বে কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। এই দুই দল জিতলেই কেবল প্লে অফ ফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য লড়বে।
চার বছর আগে বাছাইপর্বের বৈতরনি পেরোতে ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি ইতালি। এবারও একই পরিণতর সামনে দাড়িয়ে থাকলে সেই কষ্টটা বরণ করতে চায় না দলটি। পালেরমোতে উত্তর মেসিডোনিয়াকে হারিয়ে পথ তৈরি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাম্প্রতিক সময়ে অনেক লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যাওয়া দেশটি। আর ইতালির মাঝমাঠের খেলোয়াড় মার্কো ভেরাত্তি গত ইউরোর উদ্যম ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়েছেন সতীর্থদের প্রতি। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর কোচ রবার্তো মানচিনির অধীনে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাড়ায় ইতালি। অনেকটা চমক দেখিয়ে জিতে নেয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ।
এবারও ঠিক একই সমীকরণের সমানে দাঁড়িয়ে আছে উত্তর মেসিডোনিয়াও। তাদেরকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছে না ইউরোপের দেশটি। তাইতো মার্কো ভেরাত্তি বেশ চিন্তা নিয়েই বলেছেন, ‘উত্তর মেসিডোনিয়ার রক্ষণভাগ বেশ শক্ত পোক্ত। ওদের কাউন্টার অ্যাটাকগুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের সমস্যায় ফেলার সব ধরনের ফাঁক খুজে বের করতে হবে আমাদের। অনুশীলনে ট্যাকটিকস এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছি আমরা।’ ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের পর ২০১৮ তে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ মিস।
সাবেকরাও ম্যাচটা নিয়ে দারুণ টেনশনে রয়েছেন। বিশ্বকাপ জেতা ইতালির কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ফ্যাবিও কানাভারো বলেছেন, ’২০২২ সালেও ইতালির এমন পরিণতি হলে সেটি শুধূ ইতালিরই নয় হবে ফুটবলেরই বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতিতে জান বাজি রেখে লড়বেন ভেরাত্তিরা, এমনটাই মনে করি আমি।
তিনি বলেন, ‘চাপ নিয়ে খেলতেই বেশি অভ্যস্ত আমরা। আমরা জানি মুহূর্তটা কতটা আমাদের সবার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনভাবেই বিশ্বকাপ মিস করতে চাই না। এজন্য আমাদের যা আছে সব উজার করে দিতে হবে মাঠে। আমাদের প্রতিপক্ষ দলও মরণপ্রাণ লড়বে। আমাদেরও জিততে হলে তাই করতে হবে।’
নিজেদের মাঠে ইতালির মতো খেলবে পর্তুগালও। এই দুই ম্যাচের বিজয়ী দল আগামী ২৯ মার্চ রাতে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে একে অপরের মুখোমুখি হবে। পোর্তোতে হওয়া ওই ম্যাচের জয়ী দল দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। বাছাইপর্বের প্লে অফ এই দুই দলসহ ১২টি দল তিনটি গ্রুপে প্রতিদ্বন্ধিতা করছে।
প্রতিটি গ্রুপে চারটি করে দল খেলছে। তিন গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে আগামী ২০২২ বিশ্বকাপ। পর্তুগাল ও ইতালির দুর্ভাগ্য, ড্রতে একই গ্রুপে অর্থাৎ পার্স ‘সি’ তে পড়ায় সমস্যায় পড়ে গেছে। যে কারণে একটি দলকে বাদ পড়তেই হবে অর্থাৎ বিশ্বকাপ ইচ্ছে থাকলেও খেলা হবেনা। অথচ ড্র’ তে আলাদা আলাদা গ্রুপে থাকলে হয়ত দুটি দেশকেই বিশ্বকাপে দেখা যেত। ফুটবলের কথা চিন্তা করেই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হওয়া ইতালি এবার মূল পর্বে ফিরে আসার জন্য মুখিয়ে আছে। ১৯৫৮ সালের পর থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপে খেলা আজ্জুরিরা সবশেষ বিশ্বকাপে খেলতে না পারার দুঃসহ স্মৃতি থেকে এখনও বেরিয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজকে তাদের প্রথম পরীক্ষা।
এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেই কেবল মিলবে ২৯ মার্চ ম্যাচ খেলার সুযোগ। সে হিসেবে অনেকটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতালি আগেরবার প্লে অফে সুইডেনের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। এরপর কোচ রবার্টো ম্যানচিনির অধীনে নিজেদের আবারও দারুণভাবে ফিরিয়ে এনেছে ফুটবলপাগল জাতির দেশটি। এই ধারাবাহিকতায় ইউরো ২০২০ (যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়) জয়সহ ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে।
কিন্তু, ইউরোপীয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে ইতালি নিজেদের গ্রুপে শেষ ম্যাচ ড্র করে সুইজারল্যান্ডের অনেকটাই পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়। যে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই আবার তাদের খেলতে হচ্ছে প্লে অফ। সেখানেও আবারও ড্রতে পর্তুগালের বিরুদ্ধে খেলতে হবে তাদের। কাতারের রাজধানী দোহায় আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে হবে এবারের বিশ্বকাপের ড্র। সেখানে জায়গা করে নিতে হলে প্লে অফের দুটি ম্যাচই জিততে হবে ইতালিকে। কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে দলটির কোচ ম্যানচিনি বলেন, ‘এই ম্যাচ নিয়ে বেশিকিছু বলার সুযোগ নেই। আমাদের লক্ষ্য হলো আরেকটু বাড়িয়ে বললে বিশ্বকাপ জয় করা। আর সেটা করতে হলে এই দুটি ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প নেই। সত্যি কথা বলতে গেলে এখানে আর কিছু বলার নেই।’
এদিকে ইতালির মতো কঠিন পরীক্ষায় রয়েছে পর্তুগাল। বাছাই পর্বে ‘এ’ গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ার কারণে পর্তুগালকেও নামতে হচ্ছে জীবন মরনের খেলায়। ঘরের মাঠে সাবেক ইউরো চ্যাম্পিয়নদের সামনে তুরস্ক বাধা এখন। ম্যাচের আগে সতীর্থদের প্রতি সুপারষ্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বার্তা, ‘এখন সব মনোযোগ ২০২২ বিশ্বকাপে। পর্তুগালের হয়ে খেলা আমার জন্য সবসময়ই গর্বের। আমরা জানি রাস্তাটা অন্যান্য বারের মতো সহজ হবে না। আমাদের প্রতিপক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সমীহ রেখেই জয়ের জন্য খেলতে নামব। কারণ তুরস্ক আমাদের মতো একই লক্ষ্যে নেমেছে। কিন্তু একসঙ্গে লড়াই করে পর্তুগালকে তার প্রাপ্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারাই এখন একমাত্র লক্ষ্য আমাদের দলের।’
ইউরো ও উয়েফা নেশন্স লিগ জিততেও বিশ্বকাপের সোনার ট্রফিতে লিওনেল মেসির মতো চুমো খাওয়া হয়নি রোনালদোর। ৩৭ বছর বয়সী এ তারকার সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। আর সেটিতে যদি সুযোগই না পান তাহলে আর হবেনা তাকে নিয়ে কোন আলোচনা। তখন মেসির চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে যাবেন সিআর সেভেন।