তোমার আবেশে আবেশিত মন

দশ বছর বয়সে টেনিস বলে খেলা শুরু করেন আবেশ। শারীরিক গড়ন ভাল হওয়ায় অল্প বয়সেই বলে অতিরিক্ত গতি দিতে পারতেন তিনি। এক চাচার পরামর্শে চামড়ার বলে বোলিং শুরু করেন তিনি। সেখান থেকেই পেশাদার ক্রিকেটে উঠে আসা। ইন্দোরের কটস ক্রিকেট ক্লাবে অমরদ্বীপ পাথানিয়ার অধীনে কোচিং শুরু করেন। তবে বাবা আশিক খান ছেলের ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতেন না। আর্থিক দুরবস্থার কারণে ক্রিকেটটা আশিক খানের জন্য বিলাসিতাই ছিল। তাই ছেলেকে পড়ায় মনোযোগি হবার উপদেশ দেন আশিক।

২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে অভিষেক। ভিত্তিমূল্য ৭০ লাখ রুপিতেই দল পান পেসার আবেশ খান। এরপর আইপিএলে পাঁচ বছরের দীর্ঘ ভ্রমণ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি আইপিএলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়দের একজন। গেল বছর দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি আবেশকে অবশ্য ধরে রাখেনি দিল্লী। এ যেন শাপেবর হয়ে আসে আবেশের জন্যই!

১৫তম আসরের মেগা নিলামে ১০ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় নতুন ফ্র‍্যাঞ্চাইজি দল লখনৌ সুপার জায়েন্টস। আর নতুন জার্সিতে ঠিক চেনা রূপেই বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তরুন আবেশ। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আবেশের অগ্নিঝড়া বোলিংয়ে ১২ রানের জয় পায় লখনৌ। ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার! ১৭০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে আবেশের বোলিং দাপটে শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় হায়দ্রাবাদ। অভিষেক শর্মা, কেন উইলিয়ামসন, নিকোলাস পুরানরা দাঁড়াতে পারেনি এই পেসারের সামনে। আবেশের ম্যাজিকেল স্পেলেই ১২ রানের জয় তুলে নেয় লখনৌ।

প্রথম ম্যাচে ১ ও দ্বিতীয় ম্যাচে দুই উইকেট শিকার করলেও বল হাতে ছিলেন বেশ খরুচে। রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি প্রায় ৯ এর উপরে। তবে তৃতীয় ম্যাচে উইকেটশিকারের পাশাপাশি বেশ কিপটে বোলিং করেন আবেশ। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ৮.১৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন সাত উইকেট।

গেল আসরে গতিরাজ আনরিচ নর্কে, কাগিসো রাবাদা থাকার পরেও ডেথ ওভারে দিল্লির হয়ে সবচেয়ে বেশি বল করেন আবেশ। ছিলেন ওই আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি! ১৬ ম্যাচে ৭.৩৭ ইকোনমিতে শিকার করেন ২৪ উইকেট! সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন চলতি আসরেও। উমেশ যাদবের পর আছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় দ্বিতীয়তে।

গেল আসরের পারফরম্যান্সের পর সাড়া ফেলে দেন আবেশ। সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এক ম্যাচে সুযোগ পান তিনি। এক মৌসুমেই যেন বদলে গেছে আবেশের ভাগ্য।

দশ বছর বয়সে টেনিস বলে খেলা শুরু করেন আবেশ। শারীরিক গড়ন ভাল হওয়ায় অল্প বয়সেই বলে অতিরিক্ত গতি দিতে পারতেন তিনি। এক চাচার পরামর্শে চামড়ার বলে বোলিং শুরু করেন তিনি। সেখান থেকেই পেশাদার ক্রিকেটে উঠে আসা। ইন্দোরের কটস ক্রিকেট ক্লাবে অমরদ্বীপ পাথানিয়ার অধীনে কোচিং শুরু করেন। তবে বাবা আশিক খান ছেলের ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতেন না। আর্থিক দুরবস্থার কারণে ক্রিকেটটা আশিক খানের জন্য বিলাসিতাই ছিল। তাই ছেলেকে পড়ায় মনোযোগি হবার উপদেশ দেন আশিক।

আবেশের বাবা ছিলেন একজন পান দোকানদার। এরপর হঠাৎ দুই বছর কর্মহীন হয়ে পড়েন আবেশের বাবা আশিক খান। রাস্তার কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয় আবেশের বাবার পান দোকান। পরিবারের ভরণ-পোষণ মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল। আবেশের বাসা থেকে মাঠের দূরত্ব ছিল বাসে ২০-৩০ রুপির ভাড়া।

ওই সময়ে এই অর্থই আবেশের পরিবারের জন্য অনেক বেশি কিছু! আবেশ তার বাবাকে বললেন একটি সাইকেল কিনে দিলে স্কুলে আর মাঠে যাওয়ার সমস্যাটা থাকবে না। এতে প্রতিদিন ভাড়াও বাঁঁচবে। কিন্তু নতুন সাইকেল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্যও ছিল না তার বাবার! অনেক কষ্ট করে একটি পুরনো সাইকেল কিনে দিলেন ছেলেকে। আবেশের তখন ক্রিকেটই সব। ক্রিকেটের টানে এই কষ্টকে হাসিমুখে মেনে নিয়েই মনযোগ দেন ক্রিকেটে।

বয়স ভিত্তিক দলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও রাজ্যেভিত্তিক দলে সুযোগ মেলেনি আবেশের। এরপর মধ্যপ্রদেশের হয়ে ট্রায়াল দিলেন এই পেসার। প্রায় ৫০০ তরুনের মাঝে ট্রায়ালে বিশেষ নজর কাড়েন আবেশ। সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও মধ্যপ্রদেশের নির্বাচক অময় কুরসিয়া আবেশের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। ওই ট্রায়ালে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচিত হন আবেশ! অময়ের অধীনেই পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব ১৬ দলে খেলেন তিনি।

২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা করে নেন আবেশ। তবে খুব বেশি সুযোগ পাননি তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে থাকলেও অনেকটাই উপেক্ষিত ছিলেন এই পেসার। তবে ধৈর্য্যহারা হননি মোটেও। নিজের সামর্থ্যের প্রতি আস্থা ছিল সবসময়। আর অপেক্ষা করেছেন সুযোগের।

১৭ বছর বয়সে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয় আবেশের। পাঁচ ম্যাচেই শিকার করলেন ১৫ উইকেট! ঈশান কিষাণের নেতৃত্বে পরের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও পেলেন সুযোগ। ৬ ম্যাচে শিকার করলেন ১২ উইকেট! সেখান থেকেই উঠে এলেন আইপিএলের মঞ্চে। ২০১৭ সালে সুযোগ পেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলার। এরপর ২০১৮-১৯ রঞ্জি ট্রফিতে একবার দশ উইকেট সহ শিকার করেন ৩৭ উইকেট! এরপর জাতীয় দলে আসতেও খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি এই পেসারকে।

দুই চাকার সাইকেল থেকে আবেশ এখন গাড়ির মালিক। বাবার কষ্ট আর পরিশ্রম বৃথা যেতে দেননি এই তরুণ পেসার। নিজের সামর্থ্য আর সাধনার মাধ্যমে এখন তিনি আইপিএলের তারকা পেসার। জাতীয় দলের জার্সিটাও গায়ে দিয়ে ফেলেছেন এক মৌসুমের ম্যাজিকেই। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে সফলতার চাঁদরে মোড়ানো আবেশের এই পথটা আরও দীর্ঘ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...