স্পিন নিয়ে ধুম্রজাল কেন!

এদের উপর আস্থা রেখেই তো আমরা একাদশ সাজাতাম কিংবা এখনও সাজাই। এদেরকে খেলেই তো আমাদের ব্যাটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদেরকে শাণিত করে। এদের বাইরেও তো কতশত স্পিনারদের বিচরণ আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে। সত্যি বলতে গেলে আমরা তো খুব বেশি স্পিন নির্ভর। আমাদের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে স্পিনারদের চাহিদা অনেক। তবে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। এই যে আমরা অধিকাংশ সময়ে স্পিন বল খেলি, তবুও কেন আমরা বিদেশি স্পিনারদের বিপক্ষে খাবি খাই?

বাংলাদশ ক্রিকেট একটা কথা খুব প্রচলিত। বাংলাদেশের উইকেটগুলো নাকি খুব স্পিন বান্ধব। আমাদের উইকেট গুলো নাকি স্পিন স্বর্গ। হ্যাঁ, পরিসংখ্যান ঘাটলে বিষয়টা ঠিক তেমনই মনে হবে। বাংলাদেশ ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি উইকেট শিকারের পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায় তবে সেখানে স্পিনারদের আধিক্য একেবারে চোখ লাগার মত। আর আমাদের তো স্পিনারের অভাব নেই। মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে হালের মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম।

এদের উপর আস্থা রেখেই তো আমরা একাদশ সাজাতাম কিংবা এখনও সাজাই। এদেরকে খেলেই তো আমাদের ব্যাটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদেরকে শাণিত করে। এদের বাইরেও তো কতশত স্পিনারদের বিচরণ আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে। সত্যি বলতে গেলে আমরা তো খুব বেশি স্পিন নির্ভর। আমাদের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে স্পিনারদের চাহিদা অনেক। তবে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। এই যে আমরা অধিকাংশ সময়ে স্পিন বল খেলি, তবুও কেন আমরা বিদেশি স্পিনারদের বিপক্ষে খাবি খাই?

আমাদের তো উল্টো চিত্র হবার কথা ছিল। আমরা তো স্পিনারদের এক হাত দেখে নেবো; সেটা যে মাঠেই খেলা হোক না কেন। সে আমরাই কেন স্পিনের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়ে যাই? এর পেছনে কারণটা আসলে কি? দুইটা কারণ হতে পারে। প্রথমত আমরা একটা ধুম্রজালের মধ্যে বাস করি। আমাদের দেশের পিচগুলো আসলে স্পিন সহায়ক নয়। হ্যাঁ, সত্য! আমাদের উইকেটগুলো স্পিন কিংবা পেস কোনটারই খুব একটা উপযোগী নয়।

আমি দুইটা ভিন্ন চিত্রের কথা বলি, চিত্র না ঠিক আমাদের দেশের দুই রকম উইকেটের কথা বলি। আমাদের দেশের প্রথমত যে ধরণের উইকেট হয় তা হচ্ছে পুরো ফ্ল্যাট উইকেট। সে সব উইকেটে আসলে বোলারদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। ভুরিভুরি রান হয় সেসব উইকেট। সেখানে অতি অসাধারণ বোলার না হলে এবং ব্যাটার ভুল না করলে উইকেট পাওয়া মুশকিল। আর আমাদের অতি অসাধারণ কোন বোলার নেই। এটা আপনি মেনে নিতে না পারলেও এটা সত্য।

আর অন্যদিকে আমাদের ভাল মানের ব্যাটারও নেই। তাইতো ফ্ল্যাট উইকেটেও স্পিনাররা উইকেট পান। আবার আরেক ধরণের উইকেট হয় আমাদের এখানে। প্রচণ্ড রকমের বাজে উইকেট। যেখানে বল অযথাই ঘুরে যাবে, হঠাৎ হঠাৎ নিচু হয়ে যাবে, অনেক দেরিতে বল পৌঁছাবে ইত্যাদি। এমন উইকেটে আসলে আমাদের দেশের স্পিনারদের খুব একটা কষ্ট করতে হয়না। তাঁরা শুধু স্লোয়ার বল করে, হালকা একটু হাওয়া ভাসিয়ে বল করে। ব্যাস! ওই যে ভাল মানের ব্যাটার নেই তাই উইকেট দিয়ে চলে আসে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আসলে কখনোই ‘ট্রু উইকেট’ দেখেনি। ট্রু উইকেট আসলে সে উইকেট যেখানে আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই একজন ভাল বোলার হন তবে আপনার জন্যে সে উইকেটে অনেক কিছু আছে। আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। আর ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও কথা এক।

সুদক্ষ ব্যাটারদের জন্যে খুব একটা হুমকি হতে পারে না উইকেট। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বলতে যা বোঝায় আরকি। যেহেতু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন সব উইকেট নেই তাই আমরা ‘ট্রু উইকেট’ খাবি খাই। স্পিন ঘূর্ণি কিংবা পেস বোলারদের গতিতে আমরা বারবার পরাস্ত হয়ে আমাদের উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসি।

এই যে স্পিনারদের বিপক্ষে আমাদের এমন অসহায় আত্মসমর্পণের পেছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। সে কারণটা বড্ড তেতো। আমাদের ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থে কোন ‘টার্নার’ নেই। এমন একজন স্পিনার যে কিনা সব ধরণের উইকেটে প্রকৃত অর্থে ঘূর্ণি বল করতে পারবে।

সাকিব আল হাসান একজন বুদ্ধিদীপ্ত বোলার, তাই তিনি উইকেট পান। আর বাকি থাকা বোলারদের আসলে ঘরের বাইরে সাফল্যের হার বেশ মন্দ। পিচ যদি কিছু সাহায্য করে তবে তাঁরা উইকেট পায়। আরও একটি তেতো বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে স্পিনারদের মধ্যে টার্ন করাতে পারেন কেবল শুভাগত হোম। আর তিনি জাতীয় দলে রাডারের অনেক বাইরে। ‘ন্যাচারাল টার্নার’ কেবল তিনি।

মূলত আমাদের পিচ কিংবা আমাদের স্পিনার কোনটাই বিশ্বমানের নয়। দেশের বাইরে একটা স্পোর্টিং উইকেটে মানসম্মত স্পিনারদের বিপক্ষে আমাদের খাবি খাওয়া যেমন অবধারিত ঠিক তেমনি স্পিনারদের উইকেট খরাও নিত্যদিনের ঘটনা। আমাদের টেস্ট জেতার সামর্থ্য আসলে এখানটায় খুব সীমিত হয়ে যায়। তাইতো আমরা প্রতিনিয়ত লজ্জাজনক সব হারের সম্মুখীন হই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...