অস্ট্রেলিয়ার নতুন কোচ: কে এই ম্যাকডোনাল্ড?

সবাই একটু অবাকই হয়েছে বোধহয়। অস্ট্রেলিয়ার নতুন কোচের নাম শুনে। অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ। না বিখ্যাত ব্র‍্যান্ড ম্যাকডোনাল্ডসের সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথেও তাঁর সম্পর্ক সামান্যই। কে এই অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড? এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কের নিউরনকে উজ্জীবিত করা স্বাভাবিক। স্বস্তির প্রয়োজন?

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যাকডোনাল্ড। সেটা অবশ্য খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। হ্যাঁ, অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড অজিদের ঘরেরই ছেলে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে তাঁর রয়েছে সখ্যতা। এই সখ্যতা খানিক ভিন্ন। ২০০৯ সালে যখন অজি ক্রিকেটের ৪০৬ নম্বর ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপটা মাথায় পড়েছিলেন ম্যাকডোনাল্ড তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

আবার সে বছরই শেষবারের মত ম্যাকডোনাল্ড মাঠে নামেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। মাঝে যে দু’টো ম্যাচ খেলেছিলেন সে দু’টো ম্যাচেও প্রতিপক্ষ ছিল এক ও অভিন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকা। অলরাউন্ডার ম্যাকডোনাল্ড চার ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১০৭ রান, গড়ের হিসেবে আর না যাই। উইকেট নিয়েছিলেন মোটে নয়টি। খুব একটা সুখকর স্মৃতি নেই তাঁর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বনেদি ক্রিকেটে।

তবে এটা ভাবার কোন কারণই নেই যে তিনি হুট করে হয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার মত এক পরাশক্তি দলের কোচ। খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা কম থাকলেও কোচ হিসেবে একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতায় পূর্ণ ম্যাকডোনাল্ড। তাছাড়া খেলোয়াড় হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে একেবারে খারাপ সময় পার করেছেন তাও নয়।

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ২০১টি উইকেট। সেই সাথে ব্যাটে রান এসেছে, সংখ্যা বেড়েছে সময়ের সাথে। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে জড়ো হয়েছে ৪৮২৫ রান। নেহাৎ মন্দ খেলোয়াড় নন। কোচ হিসেবেও তিনি মন্দ নন। বরং বেশ ভাল গোছের একজন কোচই তিনি। শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। প্রথম যেবার অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের দল ভিক্টোরিয়ার কোচিং করানো শুরু করেন তিনি সেবারই দলকে জিতিয়েছিলেন শিরোপা।

ভিক্টোরিয়ার হয়ে শেফিল্ড শিল্ড জিতিয়েছিলেন দলটিকে। সেটাই যে একমাত্র অভিজ্ঞতা তাও নয়। লেস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কোচ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। আর তাছাড়া এইতো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে কোচিং করানোর। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের বেশ কয়েকটি দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। লিস্ট এ ক্যারিয়ারে ৭৯ উইকেট বাগানো এই অলরাউন্ডার বোলিং কোচ হিসেবে ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু শিবিরে।

২০১৬ সাল অবধি তিনি খেলেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে। সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন বিগ ব্যাশে কোচিং করিয়ে। আবার সূদুর তাসমান পার থেকে অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিয়েছেন উপমহাদেশে। হয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান কোচ। অভিজ্ঞতার পাল্লাটা একেবারেই খালি না। ২০১৯ আসরে পালন করেছিলেন রাজস্থানের দায়িত্ব।

সে বছরই অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সাথে নিযুক্ত হয়েছিলেন সহকারী কোচ হিসেবে। ল্যাঙ্গারের সাথে কাজ করে জাতীয় দল কি করে পরিচালনা করতে হয় সে ধারণাটুকু নিয়ে ফেলেছিলেন ম্যাকডোনাল্ড। আর অভিজ্ঞতার ঝুলি তো আর হালকা নয় তাঁর। সব মিলিয়ে তাঁকেই যোগ্য বলে বলে মনে করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

এখন দেখবার পালা নতুন করে পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড ঠিক কতদূর নিয়ে যেতে পারেন অস্ট্রেলিয়াকে। সামনে সুযোগ রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানোর। তবে ইতোমধ্যে তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন।এখন অপেক্ষা বড় মঞ্চের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link